রাজনৈতিক দলের মতামত ও বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের আলোকে চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫। রাষ্ট্রপতির বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ যেসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ছিল তা রয়েছে সনদে। তবে, জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকারনামায় বাক্য, শব্দগতসহ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে তৃতীয় দফার সংলাপের আয়োজন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা হবে। রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞরা যেসব সুপারিশ দিয়েছেন, তা নিয়ে দলগুলোর অবস্থান জানতে চাইবে কমিশন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দীর্ঘ সংলাপ ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করেছে কমিশন। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরই মধ্যে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে আহ্বান জানাবে কমিশন।

এ দিকে, গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কে প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ মতামত পুনঃ পর্যালোচনা সভা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ সময় জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত মতামত ও পরামর্শসমূহ পুনঃপর্যালোচনা করা হয়। একই সাথে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া মতামতও পুনঃবিশ্লেষণ করা হয়। পাশাপাশি সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য সভার প্রস্তুতির বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে। এতে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো: এমদাদুল হক ও ড. মো: আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সভায় অংশ নেন।

সূত্র জানায়, খসড়া সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ৮টি অঙ্গীকারনামা ছিল। সেখান থেকে বাক্য ও শব্দগত কিছু পরিবর্তন করে সাতটি অঙ্গীকার চূড়ান্ত করা হয়।

জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর বিশেষজ্ঞদের সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ‘রাষ্ট্রপতির বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ’ এ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টি উঠে আসে। বৈঠকে বিশেষজ্ঞদের এ সংক্রান্ত একটি ‘ফরম্যাট’ বা কাঠামো গত ৮ সেপ্টেম্বর বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে লিখিত সুপারিশ জমা দেয়া হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় দফার সংলাপ শেষ হয়েছে গত ৩১ জুলাই। দলগুলোকে গত ১৬ জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া প্রদান করা হয়। এই খসড়ার উপর দলগুলো ফের মতামতও দিয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে শুরু থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য তৈরি হয়েছে। বিএনপি জানিয়েছে, সংবিধান সংশোধন করতে হবে, এমন সংস্কারগুলো হবে আগামী সংসদে। সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই- এমন সংস্কার বর্তমান সরকার অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কার্যকর করতে পারে। জামায়াত সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের ৮৪ সংস্কারের বাস্তবায়ন চাইছে। দলটি সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটে সনদের বাস্তবায়ন দাবি করছে। যদিও বিএনপি এই দুই পদ্ধতিরই ঘোরবিরোধী। জামায়াতের মতো এনসিপিও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন চায়। ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টিসহ অধিকাংশ দলই চায় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি। এমন প্রেক্ষাপটে ফের সামনে এসেছে কোন পদ্ধতিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়িত হবে। গণভোট কিংবা রাষ্ট্রপতির বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে এই সনদ বাস্তবায়ন হওয়ার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মতামত এসেছে বলে জানা যায়।

সূত্র বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রস্তাবিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ এ বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সর্বশেষ গত সোমবার কমিশনের বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামী প্রস্তাবিত সাংবিধানিক আদেশের বিষয়ে অধিকাংশ আইন বিশেষজ্ঞ একমত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

কমিশনকে দেয়া লিখিত মতামতে জামায়াতের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের প্রস্তাব করা হয়। সেটা সম্ভব না হলে, রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব করে দলটি। লিখিত প্রস্তাবে এ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়কালের তিনটি নজিরের কথা উল্লেখ করা হয়। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশ জারি করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সময়কালে সাংবিধানিক ফরমান জারি করা হয়েছিল। এটার ভিত্তি বিদ্যমান সংবিধানের ৭ (১) ও ৭ (২) অনুচ্ছেদ। একইভাবে জুলাই সনদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানায় দলটি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews