ছবির ক্যাপশান,
শিল্পীর স্কেচে আদালতে এরিন প্যাটারসন
২ ঘন্টা আগে
অস্ট্রেলিয়ায় এরিন প্যাটারসন নামে ৫০ বছর বয়সী এক নারী তার তিন আত্মীয়কে হত্যা এবং আরো একজনকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছিলো দুই বছর আগে ২০২৩ সালের ২৯শে জুলাই দুপুরের খাবার বা লাঞ্চের টেবিলে।
দুই সন্তানের মা এরিন তার বাড়িতে বিফ ওয়েলিংটন নামে একটি খাবার রান্না করে অতিথিদের পরিবেশন করেছিলেন। পরে দেখা যায় সেখানে ছিল বিষাক্ত ডেথ ক্যাপ মাশরুম।
একটি লাঞ্চ কিভাবে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে আলোচিত একটি হত্যা মামলায় পরিণত হলো? কিভাবে একটি খাবার এই নারীকে জেলে পাঠাল?
এরিন প্যাটারসনের ডাইনিং টেবিলে আসলে কী ঘটেছিল, সেই রহস্য গত দুই বছর ধরে পুরো বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছে।
অভিযুক্ত এরিন প্যাটারসন থাকতেন অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের লিয়ংগ্যাথার মোরওয়েল নামক শহরের একটি দোতলা বাড়িতে।
২০২৩ সালের ২৯শে জুলাই তিনি তার বাড়িতে সাবেক শ্বশুর ডন প্যাটারসন (৭০) ও শাশুড়ি গেইলে প্যাটারসন (৭০), গেইলের বোন হেথার উইলকিনসন (৬৬) ও হেথারের স্বামী স্থানীয় পাস্টর ইয়ান উইলকিনসনকে লাঞ্চের আমন্ত্রণ জানান।
শনিবারের দুপুরে এই পাঁচজন একসাথে লাঞ্চ খেতে বসেন। তাদের পরিবেশন করা হয় স্থানীয়ভাবে প্রসিদ্ধ খাবার বিফ ওয়েলিংটন।
কিন্তু সেই খাবারে দেওয়া হয়েছিলো বিষাক্ত ডেথ ক্যাপ মাশরুম। এ কারণে কিছু দিনের মধ্যেই চার অতিথির মধ্যে তিনজন মারা যান।
চতুর্থ অতিথি ইয়ান হাসপাতালে কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসার পর মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসেন। এ ঘটনায় খুব দ্রুতই এরিন হয়ে যান হত্যা মামলার প্রধান সন্দেহভাজন।
এ বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে শুরু হয় বিচার কাজ। এরিন প্যাটারসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মীয়দের বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছেন।
বিচার চলাকালে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়। নয় সপ্তাহ ধরে, জুরি বোর্ডের বিচার শেষে এরিন প্যাটারসনকে তিন জনকে হত্যা এবং একজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
ছবির উৎস, EPA
ছবির ক্যাপশান,
২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে এরিন প্যাটারসনের বাড়ি ক্রাইম সিনে পরিণত হয়।
আদালতের রায় অনুযায়ী এরিন হয়তো জীবনের বাকি সময় জেলে কাটাবেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবীর দাবি, এরিন ইচ্ছাকৃতভাবে ওই বিষাক্ত মাশরুম খাবারে মিশিয়েছিলেন।
এজন্য তিনি পাশের শহর থেকে আগে থেকেই বিষাক্ত ডেথ ক্যাপ মাশরুম সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি ক্যানসারে ভুগছেন এমন মিথ্যা কথা বলে আত্মীয়দের লাঞ্চে দাওয়াত করেন। পরে প্রমাণ লুকাতে পুলিশকে মিথ্যা বলেন এবং প্রমাণ সরিয়ে ফেলেন।
তবে বিবাদী পক্ষের আইনজীবীর দাবি, তার মক্কেল মাশরুম খেতে ভালোবাসেন এবং তিনি বিভিন্ন ধরণের মাশরুম সংগ্রহ করেন। তিনি দুর্ঘটনাবশত এই বিষাক্ত মাশরুম খাবারে দিয়েছিলেন এবং পরে ভয় পেয়ে মিথ্যা বলেছেন কারণ প্রিয়জনদের এই করুন পরিণতি দেখে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সেদিন যা কিছু ঘটেছে তা একটি দুঃখজনক দুর্ঘটনা মাত্র।
অভিযোগ দায়েরের সময় এরিন সাংবাদিকদের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন,"আমি এই ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমি তাদের ভালবাসতাম। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, তারা নেই।"
তবে বিচার চলাকালীন, এরিন প্যাটারসন জুরি বোর্ডের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে ছিলেন, কোনো শব্দ করেননি, শান্ত ও সংযত ছিলেন।
কিন্তু হত্যার কোনো কারণের কথা এখনো জানা যায়নি। বাদীপক্ষের আইনজীবীর দাবি কাউকে হত্যার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করতে কারণ বা উদ্দেশ্য লাগে না।
বিষাক্ত সেই মাশরুমগুলো তার বাড়ির কাছাকাছি একটি জায়গায় পাওয়া যায়। ফোনের রেকর্ডেও দেখা যায়, এরিনের মোবাইল সেই এলাকায় সচল ছিল।
এরিনের আইনজীবী স্বীকার করেছেন, এরিন সেই দিনগুলিতে পুলিশকে একাধিকবার মিথ্যা বলেছিলেন।
তার মধ্যে একটি মিথ্যা ছিল, তিনি বলেছিলেন, তিনি মাশরুম শুকাতে যে ডিহাইড্রেটর মেশিনটি ব্যবহার করেছিলেন, সেটা ফেলে দিয়েছেন, কিন্তু কোথায় ফেলেছেন তা লুকিয়েছিলেন।
পরে দেখা যায়, তিনি সেটি স্থানীয় একটি জায়গায় ফেলেন, আর সেটা সিসিটিভিতে ধরা পড়ে।
ছবির উৎস, Supreme Court of Victoria
ছবির ক্যাপশান,
এরিন এই টেবিলে বিফ ওয়েলিংটন নামে একটি খাবার অতিথিদের পরিবেশন করেছিলেন।
এরিনের শ্বশুর-শাশুড়ি, ডন ও গেইল সেদিন দুপুরে একটি কমলা ফলের কেক নিয়ে এসেছিলেন। এরিন তার প্রাক্তন স্বামী সাইমন প্যাটারসকেও দাওয়াত করলে তিনি আগের দিনই সেখানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
দাম্পত্য জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তাদের মধ্যে টানাপড়েন থাকায় তিনি সেখানে যেতে "অস্বস্তি" বোধ করছিলেন।
সেদিন সকালে অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় এক রাঁধুনির রেসিপি অনুসরণ করে এরিন বেশ কষ্ট করে রান্নাবান্না করেন।
তিনি নিজের মতো করে রেসিপিতে কিছু পরিবর্তন করেন। মূলত বিফ ওয়েলিংটন খাবারটি একেকজন একেকভাবে রান্না করে থাকেন। এখানে মূলত স্টেকের টুকরোয় মাশরুম পেস্ট মেখে রান্না করা হয়।
বেঁচে ফেরা একমাত্র ব্যক্তি জুরিদের সামনে বলেন, তিনি দেখেছিলেন খাবারগুলো চারটি ছাই রঙের থালায় পরিবেশন করা হয়, আর এরিন তার খাবারটি একটি কমলা থালায় নিয়ে আসেন।
সঙ্গে ছিল ম্যাশড পটেটো, সবুজ মটরশুঁটি এবং ঘন ঝোল। আরেকটি প্লেট সাইমনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। যদি তিনি সিদ্ধান্ত বদলান। পরে সেই প্লেটটি ফ্রিজে রাখা হয়।
প্রথমদিকে এরিনের বিরুদ্ধে সাইমনকেও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়েছিলো। কিন্তু বিচার শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে এই অভিযোগ বাদ দেওয়া হয়।
এরপর সবাই একসাথে প্রার্থনা করে খাবার খেতে শুরু করেন। খাবার সময় তারা নিজেদের মধ্যে হাসি ঠাট্টাও করছিলেন।
ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
বিষাক্ত ডেথ ক্যাপ মাশরুম।
সবাই ভরপেট খাওয়ার পর, অল্প অল্প করে ডেসার্ট খাচ্ছিলেন, তখন এরিন অতিথিদের বিস্মিত করে বলে ওঠেন তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। বিচার চলাকালে এই তথ্য উঠে আসে।
এমনকি বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরাও স্বীকার করেছেন, এই কথা সত্য ছিল না।
তবুও সেদিন, সেই দুই প্রবীণ দম্পতি এরিনকে পরামর্শ দেন কিভাবে সন্তানদের এই কথা বলা উচিত, তারপর প্রার্থনা করে তারা খাবার খাওয়া শেষ করেন।
ইয়ান আদালতে বলেন, তিনি এরিনকে খুব ভালোভাবে চিনতেন না, তবে "সবকিছু স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিলো"।
"আমার কাছে তাকে একজন সাধারণ মানুষের মতোই মনে হয়েছে," তিনি বলেন।
কিন্তু সেই রাতেই, সব অতিথির শরীর খুব খারাপ হতে থাকে। পরদিন, চারজনই গুরুতর উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যান।
ডোনাল্ড, যিনি নিজের খাবারের পাশাপাশি স্ত্রীর অর্ধেক খাবারও খেয়েছিলেন, একজন ডাক্তারকে বলেন, তিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৩০ বার বমি করেছেন।
এরপর সন্দেহ বাড়তে থাকে। বিচারে উঠে আসে, যাদের লাঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তাদের অনেকেই এই দাওয়াত পেয়ে চমকে গিয়েছিলেন।
সাইমন বলেন, তার প্রাক্তন স্ত্রী এরিনের পক্ষ থেকে এমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন অত্যন্ত বিরল ঘটনা ছিল। ইয়ান বলেন, তিনি ও তার প্রয়াত স্ত্রী এর আগে কখনো এরিনের বাড়িতে যাননি।
এরপর প্রশ্ন ওঠে এরিন নিজের জন্য অন্য রঙের প্লেটে খাবার পরিবেশন করেছিলেন কেন? তাছাড়া সবাই একসাথে খাবার এলেও এরিনের কিছুই হয়নি?
ছবির উৎস, EPA
ছবির ক্যাপশান,
বাদী পক্ষের আইনজীবী ন্যানেট রজার্স (বামে) এবং বিবাদী পক্ষের আইনজীবী আইনজীবী কলিন ম্যান্ডি (ডানে)।
এরিন আদালতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। তিনি আদালতে বলেন, আত্মীয়দের বিদায় জানানোর পর, তিনি রান্নাঘর পরিষ্কার করেন, তারপর গেইলের আনা কমলার কেক খান।
"[আমি] এক টুকরো কেক খেলাম, তারপর আরেক টুকরো, এরপর বুঝে ওঠার আগেই, বাকি সব কেক খেয়ে ফেললাম, তারপর পেটে অনেক গুড়গুড় করতে থাকে, "তাই আমি টয়লেটে গিয়ে সব বমি করে দিই। তারপর আমি ভালো অনুভব করছিলাম।" তিনি বলেন।
তিনি জুরিদের জানান, তিনি বুলিমিয়া নামের একটি গোপন সমস্যায় ভুগছিলেন, অর্থাৎ কিশোর বয়স থেকেই তার অতিরিক্ত খাওয়া এবং তারপর জোর করে বমি করার অভ্যাস ছিল।
এরিনের আইনজীবীর দাবি, এটাই হয়তো তার শরীরে উপসর্গ না থাকায় কারণ হতে পারে। এরিন লাঞ্চের দুই দিন পর নিজে হাসপাতালে যান, বলেন তিনি অসুস্থ অনুভব করছেন।
কিন্তু হাসপাতালের কর্মীরা যখন জোর দিয়ে বললেন যে তাকে এবং তার সন্তানদের, যাদের তিনি খাবারের অবশিষ্ট খাইয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাদের তৎক্ষণাৎ ভর্তি করাতে হবে।
তখন তিনি প্রথমে তা অস্বীকার করেন। এরপর চিকিৎসক এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়েন যে তিনি পুলিশকে ফোন করে সাহায্য চান।
শেষ পর্যন্ত এরিন ও তার দুই সন্তানকে পরীক্ষা করা হয়। তবে তাদের মধ্যে অন্য অতিথিদের মতো কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। ডেথ ক্যাপ মাশরুমের কোনো অস্তিত্ব মেলেনি।
এরপর তাদের ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ছবির উৎস, Supreme Court of Victoria
ছবির ক্যাপশান,
বিষাক্ত ডেথ ক্যাপ মাশরুমের আলামত।
ছবির উৎস, Supreme Court of Victoria
ছবির ক্যাপশান,
বিষাক্ত ডেথ ক্যাপ মাশরুমের আলামত।
এরিনের ভুক্তভোগীরা তখনো হাসপাতালে ভুগছিলেন। তাদের ডায়রিয়া ও বমি এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, এক পর্যায়ে তাদের অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। আর তখন এরিন নিজের দোষ লুকাতে ব্যস্ত ছিলেন বলে দাবি বাদীপক্ষের আইনজীবীর।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরদিন, সিসিটিভিতে ধরা পড়ে, এরিন একটি স্থানীয় ডাম্পিং সাইটে গিয়ে একটি ফুড ডিহাইড্রেটর ফেলে আসছেন। পরে সেটিতেই বিষাক্ত মাশরুমের আলামত পাওয়া যায়।
সেই সময় তিনি তিনটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন, যার মধ্যে দুটি ঘটনার পরপরই গায়েব হয়ে যায়।
যে ফোনটি তিনি পুলিশের হাতে দেন, তা বারবার মুছে ফেলা হয়েছিলো। এমনকি তখনও, যখন পুলিশ তার বাড়ি তল্লাশি করছিল।
তদন্তকারীদের কাছে একের পর এক সন্দেহজনক দিক উঠে আসতে শুরু করে।
মাশরুম কোথা থেকে এলো? এই প্রশ্নে এরিনের উত্তর ছিল অস্বাভাবিক। তিনি দাবি করেন, কিছু মাশরুম মেলবোর্নের একটি এশিয়ান দোকান থেকে শুকনো অবস্থায় কিনেছিলেন,
কিন্তু কোন শহর থেকে কিনেছেন, তা মনে নেই। ব্র্যান্ড বা লেনদেনের রসিদ চাওয়া হলে বলেন, "সেগুলো সাদা প্যাকেটে ছিল, আর আমি সম্ভবত ক্যাশে দিয়েছিলাম।"
ছবির উৎস, Supreme Court of Victoria
ছবির ক্যাপশান,
সিসিটিভিতে ধরা পড়ে, এরিন একটি স্থানীয় ডাম্পিং সাইটে গিয়ে একটি ফুড ডিহাইড্রেটর ফেলে আসছেন।
এদিকে তদন্তকারীরা খুঁজে পান, লাঞ্চের আগের কয়েক সপ্তাহে, পার্শ্ববর্তী দুটি শহরে ডেথ ক্যাপ মাশরুম দেখা গিয়েছিল, এবং স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন হয়ে সেগুলোর ছবি ও অবস্থান 'আই ন্যাচারালিস্ট' নামে একটি অনলাইন প্ল্যান্ট ডেটাবেইস পেইজে পোস্ট করেছিলেন।
এরিনের ইন্টারনেট হিস্টোরিতে দেখা যায়, তিনি এই ওয়েবসাইটে গিয়ে কমপক্ষে একবার ডেথ ক্যাপ মাশরুমের তথ্য দেখেছিলেন।
তার মোবাইলের লোকেশন ডেটায় দেখা যায়, তিনি ডেথ ক্যাপ মাশরুম জন্মায় এমন দুই এলাকায় গিয়েছিলেন এবং ফেরার পথে সেই ফুড ডিহাইড্রেটরটি কিনেছিলেন।
তবে পুলিশকে এরিন বলেন, তিনি কোনোদিন এই যন্ত্র ব্যবহার করেননি, যদিও তার রান্নাঘরের ড্রয়ারে এর নির্দেশিকা ছিল।
এবং অপরাধ বিষয়ক একটি ফেসবুক গ্রুপে তিনি নিজেই সেটা ব্যবহারের কথা গর্ব করে লিখেছিলেন।
সেই পোস্টে তিনি লেখেন। "আমি গুঁড়া মাশরুম সবকিছুর মধ্যে লুকিয়ে দিচ্ছি। কাল চকোলেট ব্রাউনিতে মিশিয়েছিলাম, বাচ্চারা টেরই পায়নি।"
ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা তার ডিভাইস থেকে কিছু তথ্য পুনরুদ্ধার করেন। যেখানে দেখা যায়, রান্নাঘরের স্কেলে ডেথ ক্যাপ মাশরুমের মতো দেখতে মাশরুম ওজন করা হচ্ছে।
বিচার চলাকালীন, এরিন বলেন, লাঞ্চের কয়েক দিন পরেই তিনি বুঝতে পারেন, বিফ ওয়েলিংটনে সম্ভবত ভুল করে নিজের সংগ্রহ করা শুকনো মাশরুম মিশে গিয়েছিলো। যেগুলো দোকান থেকে কেনা মাশরুমের সঙ্গে রাখা ছিল।
কিন্তু তিনি বলেন, "আমি এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে কাউকে কিছু বলার সাহস পাইনি।"
ছবির উৎস, EPA
ছবির ক্যাপশান,
এরিনের প্রাক্তন স্বামী সাইমন প্যাটারসন আদালতে বেশ কয়েকদিন ধরে সাক্ষ্য দিয়েছেন
পুলিশকে সবচেয়ে হতবাক করেছে এরিনের হত্যার উদ্দেশ্য। তার প্রাক্তন স্বামী সাইমন আদালতে বলেন, ২০১৫ সালে বিচ্ছেদের পরও তাদের মধ্যে সাধারণ আলাপচারিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
তবে ২০২২ সালে পরিবর্তন আসে। তখন থেকে আর্থিক বিষয়, সন্তানের ভরণপোষণ, স্কুল এবং সম্পত্তি নিয়ে মতভেদ শুরু হয়।
তবে তিনি বলেন, এরিনের প্রতি তার কোনো বিদ্বেষ ছিল না। "ও বাবার সঙ্গে বিশেষভাবে ভালো সম্পর্ক রাখতো। দুজনেই জ্ঞানচর্চা আর শেখার প্রতি আগ্রহী ছিল।"
আবেগভরা কণ্ঠে সাইমন আরো বলেন: "আমি মনে করি, সে বাবার নম্র স্বভাবটা খুব ভালোবাসতো।"
কিন্তু এরিন নিজেই আদালতে বলেন, তিনি প্যাটারসন পরিবারের থেকে ক্রমাগত একঘরে হয়ে যাচ্ছিলেন,
এবং কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। যা থেকে ধারণা করা হয়, তিনি তাদের উপর বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। তবুও বাদীপক্ষ নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য তুলে ধরতে পারেনি।
আর এটাই ছিল এরিনের আইনজীবীদের মূল পয়েন্ট।
তারা প্রশ্ন তোলে: "যাদের তিনি নিজের মা–বাবার মতো ভালোবাসতেন, তাদের সে কেন মারতে যাবেন?"
ছবির উৎস, Supreme Court of Victoria
ছবির ক্যাপশান,
নিহত হিথার উইলকিনসনের ডায়েরিতে এরিনের বাড়িতে লাঞ্চ করতে যাওয়ার কথা অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
এরিন পুলিশকে বলেছিলেন, "আমার মা–বাবা কেউ বেঁচে নেই। আমার দাদা-দাদী, নানা-নানীও চলে গেছেন। এরাই আমার একমাত্র পরিবার… আমি তাদের খুব ভালোবাসি।"
এরিনের আইনজীবীর মতে, শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে তিনি যে মেসেজগুলো লিখেছেন, তা ছিলো শুধু কষ্টের বহিঃপ্রকাশ, ক্ষতি করার ইচ্ছে নয়।
ক্যানসারের বিষয়ে মিথ্যা বলার পেছনে কারণ ছিল আসলে তিনি ওজন কমানোর সার্জারি করতে চেয়েছেন। যা নিয়ে অপ্রকাশ্য সংকোচ ঢাকার চেষ্টা করেছেন।
ফোন ট্র্যাকিংয়ের ডেটা খুব স্পষ্ট নয়, তাই ডেথ ক্যাপ মাশরুম যেখানে দেখা গিয়েছে এমন এলাকায় তিনি গেছেন- এই দাবির পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই।
তারা আরো বলেন, এরিন নিজেও সেদিন খাওয়ার পর অসুস্থ হয়েছিলেন, তবে সব বমি করে দেওয়ায় অন্যদের মতো গুরুতর কিছু হয়নি।
তিনি হাসপাতাল অপছন্দ করেন, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ না মেনে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।
আর তার মিথ্যাচার ও প্রমাণ সরানোর চেষ্টা ছিল একজন আতঙ্কিত নারীর প্রতিক্রিয়া, যিনি ভেবেছিলেন, অতিথিদের দুর্ঘটনাবশত মৃত্যুর জন্য তাকে দোষী করা হবে।
এখানে জোর করে নানা প্রমাণ জোড়া লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত, এক সপ্তাহের আলোচনার পর, জুরি এসব ব্যাখ্যা খারিজ করে দেয় এবং এরিনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করে।