প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৯। আমার এক ছেলে জন্ম হয় যখন আমার বয়স ২৩। সন্তানের জন্মের পরে আমি আমার পড়ালেখা শেষ করি। এরপর তাকে বড় করা, তার পড়ালেখার যাবতীয় খোঁজখবর রাখা আর সংসার সামলানোর জন্য আমার চাকরি করার সুযোগ হয়নি। এখন সে তার নিজের পড়ালেখা ও জগত তৈরি করে নিয়েছে। আমার স্বামী বেসরকারি সংস্থায় বড় চাকরি করেন। আমার একাকীত্বের কারণে কখনও কখনও আমি নিজেকে মানসিকভাবে একা, অবসন্ন বা হতাশ বোধ করি। আমি কী ধরণের অভ্যাস বা প্রতিদিনের রুটিন পরিবর্তন করে এই অনুভূতিকে কমাতে পারি?

উত্তর: কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে আপনি আপনার সমস্যা কমিয়ে আনতে পারেন

নিজের শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন

দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সকাল বা বিকেলে) অন্তত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। প্রয়োজনে হালকা ব্যায়াম বা যোগাসন (Yoga) করতে পারেন। ইউটিউবে অনেক ভালো বাংলা চ্যানেল রয়েছে যা আপনাকে ঘরে বসেই ব্যায়াম বা যোগাসন শিখতে সাহায্য করতে পারে। এটি আপনার শরীরে এন্ডোরফিন (Endorphin) নামক হরমোন নিঃসরণ করবে, যা মনকে সতেজ এবং প্রফুল্ল রাখে।

প্রতিদিন রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। খাবারে তাজা ফলমূল এবং শাকসবজি যোগ করুন। অতিরিক্ত চিনি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।

নিজের মানসিক ও আবেগীয় যত্ন নিন

মনে করার চেষ্টা করুন ছোটবেলায় বা অবসরে কী করতে আপনার ভালো লাগতো। সেটা হতে পারে বই পড়া, গান শোনা, বাগান করা (বারান্দা বা ছাদে), ছবি আঁকা, রান্না বা বেকিং, সেলাই করা বা যেকোনও কিছু। প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা আপনার পছন্দের শখের জন্য বরাদ্দ রাখুন। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট শান্ত পরিবেশে বসে মেডিটেশন করার চেষ্টা করুন। এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং মনোযোগ বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর।

সামাজিক সংযোগ পুনরায় স্থাপন করুন

আপনার স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো বন্ধুদের সাথে আবার যোগাযোগ স্থাপন করুন। তাদের সাথে ফোনে কথা বলুন বা মাঝে মাঝে দেখা করার পরিকল্পনা করুন। আপনার পছন্দের কোনও বিষয়ে (যেমন বই পড়া, বাগান করা) কোনও ক্লাবে বা গ্রুপে যোগ দিতে পারেন। সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিন। আপনার এলাকার কাছাকাছি কোনও সামাজিক বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে পারেন। অসহায় মানুষ বা শিশুদের জন্য কাজ করলে আপনি এক ধরনের মানসিক তৃপ্তি পাবেন এবং এটি আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়াবে।

নতুন কিছু শেখা ও দক্ষতা বৃদ্ধি

আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কোনও বিষয়ে অনলাইন কোর্স করতে পারেন। Coursera, Udemy বা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অনেক স্বল্পমেয়াদী কোর্স রয়েছে (যেমন: ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি)। নতুন কোনও ভাষা শেখা শুরু করতে পারেন। আপনার যদি রান্না, বেকিং, সেলাই বা অন্য কোনও বিষয়ে দক্ষতা থাকে, তবে একটি ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি ছোট অনলাইন ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবতে পারেন। নিজেকে খুঁজে নিন। কী ভালো লাগে, কীভাবে আপনি নিজেকে আপনার পরিবারকে দেখতে চান তা আপনি সব থেকে ভালো জানবেন।

প্রশ্ন. আমার মেয়ের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আমার মেয়ে ২১ বছরের। ছোটবেলা থেকেই সে ভীষণ একা একা থাকতে পছন্দ করে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরেও তার কোনও বন্ধু নেই। ক্লাসে যাদের সঙ্গে মেশে কিছুদিনের মধ্যেই তার নানা অভিযোগ তৈরি হয় সহপাঠীদের বিরুদ্ধে এবং সে নিজেকে সরিয়ে নেয়। বন্ধুহীনতার কারণে তার মধ্যে একধরনের বিষণ্ণতা দেখা যায়। খুব সামান্য বিষয়ে সে ভেঙে পড়ে। পড়ালেখার সময় বাদে বেশিরভাগ সময় সে নিজের ঘরে সিনেমা বা সিরিয়াল দেখে সময় কাটায়। কীভাবে ওর সামাজিকীকরণের ব্যবস্থা করা যায়।

উত্তর: একজন মা হিসেবে আপনার ভূমিকা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাকে সরাসরি পরিবর্তন করার চেষ্টা না করে, তার জন্য একটি সহায়ক এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাকে দোষারোপ করবেন না। সরাসরি ‘তোমার বন্ধু নেই কেন?’ বা ‘কেন তুমি মেশো না?’—এই ধরনের প্রশ্ন না করে, তার অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। একটি শান্ত ও নিরিবিলি সময়ে তার সাথে বসুন।

তাকে জোর করে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে বা আত্মীয়ের বাসায় যেতে বাধ্য করবেন না। এতে তার উদ্বেগ আরও বেড়ে যেতে পারে। বরং ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ দিন। যেমন, আপনারা মা-মেয়ে একসাথে কফি খেতে বা বইয়ের দোকানে যেতে পারেন।

তার আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সাহায্য করুন। তার ছোট ছোট সাফল্যের প্রশংসা করুন। সেটা হতে পারে পড়ালেখার কোনও বিষয়, কোনও রান্না বা ঘর গোছানো। তাকে বোঝান যে সে একজন সক্ষম এবং মূল্যবান মানুষ। আত্মবিশ্বাসের অভাব বন্ধুত্ব তৈরিতে একটি বড় বাধা। কখনোই তাকে অন্য সমবয়সী বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে তুলনা করে কথা বলবেন না।

সে যেহেতু সিনেমা বা সিরিজ দেখতে ভালোবাসে, এটাকে একটা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করুন। তার পছন্দের কোনও সিনেমা বা সিরিজ নিয়ে তার সাথে আলোচনা করুন। তার পছন্দের অভিনেতা বা পরিচালক কে, গল্পের কোন অংশটা তার ভালো লেগেছে—এগুলো জিজ্ঞেস করুন। এতে সে বুঝবে যে আপনি তার জগতটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- পেশাদার সাহায্য নেওয়া।

আপনার বর্ণনা অনুযায়ী, আপনার মেয়ের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ (Symptoms of Depression) এবং সম্ভবত সামাজিক উদ্বেগজনিত ব্যাধি (Social Anxiety Disorder) রয়েছে। অন্যকে অভিযুক্ত করা বা সন্দেহ করা গুরুতর মানসিক সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে একজন পেশাদার মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সিলরের সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। একজন বিশেষজ্ঞ সঠিক কারণটি চিহ্নিত করতে পারবেন। তিনি থেরাপির (যেমন: কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি বা CBT) মাধ্যমে আপনার মেয়ের নেতিবাচক চিন্তাভাবনার ধরন পরিবর্তন করতে, তার সামাজিক উদ্বেগ কমাতে এবং সুস্থভাবে মানুষের সাথে মেশার কৌশল শেখাতে সাহায্য করবেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews