দেশে উৎপাদিত শুঁটকিতে গড়ে ১৩ শতাংশ কীটনাশক ব্যবহারের চিত্র পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ৮৭ শতাংশ শুঁটকিই নিরাপদ৷ যে ১৩ শতাংশ শুঁটকিতে কীটনাশক ব্যবহারের চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে রান্নার পর কীটনাশকের মাত্রা অনেক কমে যায় বলে জানিয়েছে গবেষকদল৷

দেশে সবচেয়ে বেশি সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি উৎপাদন হয় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সুন্দরবনের দুবলার চরে।



গবেষণায় আরও দেখা যায়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার মানুষ যেসব শুঁটকি গ্রহণ করে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় ছুরি শুঁটকি (চট্টগ্রাম ৫৭ শতাংশ ও কক্সবাজার ৫৫ শতাংশ), অন্যদিকে চলনবিলের মানুষ টাকি শুঁটকি বেশি গ্রহণ করে (৩৭ শতাংশ), আবার সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকার মানুষের সবচেয়ে পছন্দের শুঁটকি হলো লইট্ট্যা শুঁটকি (৪৬ শতাংশ)৷

উপরের ৫টি স্থান থেকে মোট ৪০৫টি নমুনা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) আয়োজিত গবেষণার ফলাফল অবহিতকরণ সেমিনারে গবেষকদল গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান। বুধবার (১৪ মে) রাজধানীর শাহবাগে বিএফএসএ’র নিজ কার্যালয়ে সেমিনারটির আয়োজন করা হয়।

বিএফএসএ’র সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জাকারিয়া। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. আরিফুল ইসলাম, প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. নাজমুল বারী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএফএসএ’র সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব।



বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) আয়োজিত গবেষণার ফলাফল অবহিতকরণ সেমিনার

বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, ২০২২-২৩ সালের ৭টি গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়, তার মধ্যে এটি একটি। এখানে গবেষণার যেসব ফলাফল প্রকাশিত হয়, তা গবেষকের নিজস্ব বিষয়, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দায় নেই। আর এটি দেশের সার্বিক চিত্রও নয়, বরং সামান্য বিষয়। আমরা স্বল্প পরিসরে গবেষণা করি সেখানে খারাপের মাত্রা বেশি পাওয়া গেলে বড় আকারে গবেষণার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে নির্দিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের।

তিনি বলেন, শুঁটকিতে কীটনাশক দিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।

ভেজালের সংজ্ঞা নির্ধারণের ব্যাপারে আহ্বান জানিয়ে বিএফএসএ চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের অনেক কিছু সামাজিকভাবে অনিয়ম ও ভেজাল। সেটি প্রকৃত অর্থে কোন ভেজাল নেই। তাই কোনটা ভেজাল, তা নির্ধারণ করতে হবে। শুঁটকিতে কীটনাশক ব্যবহারকে ভেজাল হিসেবে গণ্য করা হবে।

স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, শুঁটকি মাছে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাসেল কনভেনশনে ১০টি কীটনাশক নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে দুটি কীটনাশক ব্যবহার হয়।  

ড. মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রোটিনের ৬০ ভাগ আসে মাছ ও মাংস থেকে। দেশের বেশিরভাগ শুঁটকি উৎপাদনকারী অশিক্ষিত হওয়ায় সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে পারেন না। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি তৈরি হয়। তখন রোদ না থাকলে কীটনাশকের ব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, সূর্যের আলো ব্যবহার করে শুঁটকি তৈরিতে বেশিরভাগ কীটনাশক ব্যবহার হয়। গবেষণায় ২৬০টি স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে, তাতে মাত্র ১৩ শতাংশের মধ্যে কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

কোন অঞ্চলের মানুষ দৈনিক কী পরিমাণ শুঁটকি খায় সে সম্পর্কে আরিফুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারের মানুষ ১৫.৭২ গ্রাম, চট্টগ্রামে ১৪.৪৮, সুনামগঞ্জে ৭.৮৪, চলনবিলে ৯.৫৬ ও দুবলার চরে ১২.২২ গ্রাম শুঁটকি গ্রহণ করে৷

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, দুবলার চর, সুনামগঞ্জ ও চলনবিলের শুঁটকিতে এনডোসালফান সালফেটের পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। তা ছাড়া ডেলড্রিন, হেপটাচলোর ইপোক্সিসাইট ও বেটা এনডোসালফানের ব্যবহার কম পাওয়া গেছে।

ড. মো. নাজমুল বারি বলেন, সব জায়গায় পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে। তাই আগামী গবেষণাগুলোতে মাইক্রো প্লাস্টিকের বিষয়টি থাকতে হবে। সূর্যের আলো ব্যবহার না করে বরং মেকানিক্যাল ড্রায়িং করার আহ্বান জানান তিনি।

শুঁটকি কয়েক ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে বা লবণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে ক্ষতিকর দিকটি কেটে যায় বলে জানান বক্তারা।  

এমআইএইচ/এমজেএফ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews