ভারতে নির্বাচন

ভোটের হার এবার কম কেন

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ হচ্ছে না। কম ভোটার উপস্থিতিতে অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির নেতারা। 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনের ব্যাপারে জনগণের একটি বড় অংশের মোহভঙ্গ ঘটায় অনেকেই ভোটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

প্রথম পর্যায়ের ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দ্বিতীয় ধাপেও ভোট কম পড়েছে। টানা ৭৫ বছরের গণতান্ত্রিক শাসনে থাকা দেশটিতে এ ধাপে ভোটের হার ৬৪ শতাংশ ছিল জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দ্বিতীয় ধাপে সংসদের নিম্নকক্ষের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৮৮টিতে ভোট গ্রহণ করা হয়। এসব আসনে ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৭০ শতাংশের কাছাকাছি।

১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সাত ধাপের ভোট শেষ হবে আগামী ১ জুন। এ নির্বাচনে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ভোট দেওয়ার যোগ্য। ৪ জুন ভোট গণনা করা হবে।

মোদি তাঁর টানা ১০ বছরের শাসনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কল্যাণমূলক পদক্ষেপ, জাতীয় গর্ব, হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে তৃতীয় মেয়াদে জয় চাচ্ছেন।  তবে প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় দফায়ও কম ভোটার উপস্থিতি মোদিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। 

নির্বাচন কমিশন অবশ্য দাবি করছে, অসময়ের গরম আবহাওয়া এবং বিয়ের অনুষ্ঠানের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হচ্ছে। অবশ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার ভোটারদের কেন্দ্রে টেনে আনার মতো শক্তিশালী কোনো ইস্যু নেই মোদির কাছে। তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভোটাররা আত্মতুষ্টি বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে কেন্দ্রে আসছেন না। ফলে ভোটার সংখ্যা কম। 

ভারতের গণতন্ত্রের প্রতি ভোটারদের আগ্রহ কমছে বলে জনমত জরিপে দেখা গেছে। গত মার্চে প্রকাশিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে,  প্রায় ৭০ শতাংশ ভারতীয় স্বৈরতন্ত্র বা সামরিক শাসন সমর্থন করেন। 

তবে কম ভোটার উপস্থিতিতে মোদির হিসাবনিকাশ পাল্টে যেতে পারে। বিজেপির চিন্তা বাড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র। যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ভোট পড়েছে ৫৫ শতাংশের মতো, যা প্রথম দফার ভোটের চেয়েও ৬ শতাংশ কম। বিহারেও ভোট পড়েছে ৫৫ শতাংশ। মহারাষ্ট্রে আরও কম, সাড়ে ৫৪ শতাংশের মতো। মধ্যপ্রদেশে সামান্য বেশি, সাড়ে ৫৭ শতাংশ। কম ভোটের হার নিয়ে সব মহলেই বিশ্লেষণ চলছে। নানা কারণ উঠে এলেও সব পক্ষ এই বিষয়ে একমত, মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে এখনও তেমন একটা উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। 

মানুষকে ভোট দিতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আবেদন জানিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোটদানের আবশ্যকতা বোঝাতে চেষ্টার ত্রুটি করছে না। তবু  মানুষের মধ্যে সাড়া কম। 

এতে বিরোধীরা কিন্তু উৎফুল্ল। তারা মনে করছে, মোদির ভাঁওতাবাজি মানুষ ধরে ফেলেছে। দেশে বেকার সংকট প্রকট। জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে। দুর্নীতি ব্যাপক মাত্রায়। তাই ভোটের হার কমেছে। 

মোদি এবার ৪০০ আসনে জয়লাভের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। এটা পেলে তাঁর সরকার ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধনা সংশোধন করে দেশটিকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তবে কম ভোটার উপস্থিতি বিজেপি নেতৃত্বের সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে পারে। এজন্য  বিজেপি নেতৃত্ব গত কয়েক দিন সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলতে শুরু করেছে। মোদি নিজেই এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিরোধী দল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারের আদৌ না থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ভাষণের অপব্যাখ্যা দিয়ে মোদি বলেছেন, ওরা ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। সেই সম্পদ তাদের দেবে, যারা বেশি বেশি বাচ্চার জন্ম দেয়, যারা  এ দেশে অনুপ্রবেশকারী।

এ ব্যাপারে উত্তরের শহর মথুরার বেকার মুসলিম তরুণ সোকিন কুরেশি রয়টার্সকে বলেন, ‘বিজেপি হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে মন্দির এবং মসজিদ  ইস্যু ব্যবহার করছে। বেকারত্ব এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির মতো আসল সমস্যাগুলো থেকে ভোটারদের দৃষ্টি সরাতে চায় তারা।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews