রোববার ভোরে ইরান ইসরাইলের অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক ও গবেষণাকেন্দ্র ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স-এ একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তেল আবিবের দক্ষিণে রেহোভট অঞ্চলে অবস্থিত এই গবেষণাকেন্দ্রে হামলার ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, বড় অগ্নিকাণ্ড এবং ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, বোমা হামলার পর ইনস্টিটিউটের একটি ভবনে আগুন ধরে যায়। জানা গেছে, ভবনটিতে ছিল উন্নত বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার।
এই হামলা সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন টুইটার ব্যবহারকারী একে ‘কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি অভূতপূর্ব হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে, ইসরাইলের গবেষণা ও উন্নয়ন অবকাঠামোর কেন্দ্রস্থলে এই ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিবেচনায় এই হামলাকে একটি গুণগত পরিবর্তনের সূচনা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিভিন্ন ভাষ্যকার ও ব্লগারদের মতে, ইরানের লক্ষ্যবস্তুর প্রকৃতি এবার পরিকল্পিত এবং সচেতনভাবে নির্ধারিত ছিল। ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট ছিল একটি নির্বাচিত লক্ষ্য। তারা আরো বলেন, এটি বিশ্বসেরা বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা, জীবন বিজ্ঞান এবং উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে গবেষণা সহায়তা প্রদান করে থাকে।
এই হামলাকে কেউ কেউ ইসরাইলের বৈজ্ঞানিক শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছেন। ইনস্টিটিউটটি দীর্ঘ আট দশকের বেশি সময় ধরে ইসরাইলি ন্যানোপ্রযুক্তি, জৈব চিকিৎসা, সামরিক প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি স্তম্ভ হিসেবে কাজ করছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার এক ব্যবহারকারী লেখেন, এই ইনস্টিটিউটকে লক্ষ্যবস্তু করা মানে হলো ইসরাইলি প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর উপর সরাসরি আঘাত, যা তেল আবিব অনেকদিন ধরে তার বৈজ্ঞানিক শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছে।
আরেকজন লেখেন, ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট কেবল একটি গবেষণা কেন্দ্র নয়; এটি সেই মস্তিষ্ক যা ইসরাইলকে শুধু সামরিকভাবে নয়, কৌশলগতভাবে এবং বৈজ্ঞানিক দিক দিয়েও শ্রেষ্ঠ করে তোলে।
ব্লগারদের মতে, এই আক্রমণকে কেবল একটি সাময়িক ঘটনা হিসেবে দেখলে ভুল হবে। বরং এটি একটি প্রতীকী বার্তা, ইসরাইলের বৈজ্ঞানিক মনন ও উৎকর্ষকে লক্ষ্য করে সরাসরি আঘাত। কেউ কেউ বলছেন, এতে একটি অভিজাত বিজ্ঞানী সমাজকেই কার্যত লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
তবে এই হামলায় বিজ্ঞানী বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের মৃত্যু বা আহত হওয়ার বিষয়ে ইসরাইলি সরকার এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
ব্লগারদের প্রশ্ন, ইসরাইল কি এই হামলার জবাবে চুপ থাকবে? পশ্চিমা শক্তিগুলো কি প্রতিক্রিয়া জানাবে না মধ্যপ্রাচ্য এখন উত্তেজনার এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে?
পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি নির্ভর করছে এই প্রশ্নগুলোর উত্তরেই। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে ইরান এবার শুধু সামরিক প্রতিক্রিয়াই দেয়নি। বরং ইসরাইলের বৈজ্ঞানিক ও কৌশলগত আত্মবিশ্বাসের শিকড়ে একটি বার্তা পাঠিয়েছে।
সূত্র : আল জাজিরা নেট