ছবি এর আগেও ‘ডামুস’ ও ‘ব্লুস্কাই’ এর মাধ্যমে নিজের এ ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন ডরসি। ছবি: রয়টার্স
ছবি এর আগেও ‘ডামুস’ ও ‘ব্লুস্কাই’ এর মাধ্যমে নিজের এ ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন ডরসি। ছবি: রয়টার্স
হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ব্লুটুথনির্ভর নতুন এক মেসেজিং অ্যাপ আনলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি।
‘বিটচ্যাট’ অ্যাপটি তৈরি করেছেন মার্কিন আর্থিক পরিষেবা কোম্পানি ‘ব্লক’-এর এই সিইও। নতুন অ্যাপটি সম্পূর্ণ বিকেন্দ্রীকৃত ও পিয়ার-টু-পিয়ার ভিত্তিতে কাজ করে এবং এটি কেবল ব্লুটুথ মেশ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে চলে, অর্থাৎ অ্যাপটি ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট, কেন্দ্রীয় সার্ভার, ফোন নম্বর বা ইমেইলের প্রয়োজন হয় না বলে প্রতিবেদনে লিখেছে আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।
রোববার ডরসি ঘোষণা করেছেন, ‘বিটচ্যাট’ অ্যাপটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও আগ্রহী ব্যবহারকারীরা ‘টেস্টফ্লাইট’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে এর পরীক্ষামূলক সংস্করণটি ব্যবহার করতে পারেন।
এ ছাড়াও অ্যাপটির ‘হোয়াইট পেপার’ গিটহাব-এ প্রকাশ করেছেন ডরসি। হোয়াইট পেপার এমন এক ধরনের ডকুমেন্ট বা নথি, যেখানে নতুন প্রযুক্তি বা অ্যাপের কাজ করার পদ্ধতি, উদ্দেশ্য ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ বিস্তারিতভাবে লেখা থাকে। যাতে মানুষ বুঝতে পারেন অ্যাপটি কীভাবে কাজ করে।
রোববার এক এক্স পোস্টে এ প্রকল্পটিকে নিজের এক ‘ব্যক্তিগত পরীক্ষা’ বলে উল্লেখ করে ডরসি বলছেন, বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে অ্যাপটি তৈরি হয়েছে, যেখানে ব্লুটুথ মেশ নেটওয়ার্ক, রিলে, স্টোর অ্যান্ড ফরোয়ার্ড মডেল, বার্তা এনক্রিপশন মডেল ও আরও কিছু বিষয় নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন তিনি।
ডরসির এ অ্যাপটি কাছাকাছি থাকা বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে অস্থায়ী ও এনক্রিপ্ট করা যোগাযোগকে সম্ভব করে তোলে। ফলে অ্যাপের বিভিন্ন মেসেজ নিরাপদ ও দীর্ঘসময় ধরে সংরক্ষিত হয় না।
ব্যবহারকারীরা যখন বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করেন তখন তাদের হাতে থাকা ফোন স্থানীয় ‘ব্লুটুথ ক্লাস্টার’ তৈরি করে, অর্থাৎ কাছাকাছি থাকা ফোনগুলো নিজেদের মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে নেয়। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি ফোন থেকে আরেক ফোনে মেসেজ পাঠানো যায়।
এভাবে, বিভিন্ন বার্তা এক ডিভাইস থেকে আরেকটিতে ‘রিলে’ হয়ে চলতে থাকে, ফলে মেসেজ সেই সব ব্যবহারকারীদের কাছেও পৌঁছাতে পারে, যারা সরাসরি ব্লুটুথ রেঞ্জের মধ্যে নেই। এভাবে এটি ওয়াইফাই ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়াও কাজ করে।
‘বিটচ্যাট’ অ্যাপের আরও এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এখানে কিছু ‘ব্রিজ’ ডিভাইস ব্যবহৃত হয় যেগুলো কাছাকাছি থাকা আলাদা বিভিন্ন ‘ব্লুটুথ ক্লাস্টার’-এর মধ্যে সংযোগ তৈরি করে। ফলে পুরো নেটওয়ার্ক সিস্টেমটি আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারে।
অ্যাপটির আরও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন– মেসেজের বার্তা কেবল ব্যবহারকারীর ডিভাইসেই সংরক্ষিত হয়, অন্য কোথাও নয়। ডিফল্টভাবেই বিভিন্ন বার্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায় এবং এসব বার্তা কখনোই কোনো কেন্দ্রীয় সার্ভার বা ইন্টারনেট অবকাঠামোর মধ্য দিয়ে যায় না।
সিএনবিসি লিখেছে, ‘বিটচ্যাট’ ডরসির সেই বড় স্বপ্নের অংশ, যেখানে তিনি চেয়েছেন প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ কেবল ব্যবহারকারীদের হাতেই থাকবে, কোনো বড় কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এর আগেও ‘ডামুস’ ও ‘ব্লুস্কাই’ এর মাধ্যমে নিজের এ ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন ডরসি। নতুন এ অ্যাপটি এখন সেই ধারারই একটি নতুন ধাপ।
অ্যাপটিতে আরও কিছু ফিচার রয়েছে, যেমন– ব্যবহারকারীরা চাইলে এতে গ্রুপ চ্যাট বা ‘রুম’ তৈরি করতে পারেন, এসব রুমের নাম হ্যাশট্যাগ (#) দিয়ে দেওয়া যাবে এবং চাইলে এসব রুম পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। যাতে কেবল এতে অনুমতিপ্রাপ্তরাই প্রবেশ করতে পারেন।
এ ছাড়াও এতে রয়েছে ‘স্টোর অ্যান্ড ফরোয়ার্ড’ ফিচার, যার মাধ্যমে যদি কোনো ব্যবহারকারী অফলাইন বা সক্রিয় না থাকেন তবুও বার্তাটি সংরক্ষণ হবে ও ব্যবহারকারী পরে আবার অনলাইনে এলে সেটি তার কাছে পৌঁছে যাবে।
ভবিষ্যতে অ্যাপটিতে এমন প্রযুক্তি যোগ হবে, যাতে ইন্টারনেট ছাড়াই আরও দ্রুত ও দীর্ঘ দূরত্বে মেসেজ পাঠাতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।