কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণ, বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন ধর্ষক ফজর আলীর ভাই শাহ পরান। তার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা সহযোগীদের নিয়ে বাস্তবায়ন করেছিলেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মুহাম্মদ আলী সুমন। সুমন গ্রেফতার হলেও শাহ পরান এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে পুলিশ বলছে, শাহ পরানসহ জড়িত অন্যদের গ্রেফতার করতে নানামুখী তৎপরতা চলছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ভিকটিমকে পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে রেখেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে ভিকটিম ও তার পরিবারকে ভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ওই নারীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে দুই ভাইয়ের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। দেড় মাস আগে ওই নারী ও ফজর আলীকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করেন শাহ পরান। এরপর থেকে ফজর আলীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে সে। সেদিন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মুহাম্মদ আলী সুমন, রমজান, অনিক, আরিফসহ ১৫-২০ জনের বখাটে চক্রকে সঙ্গে নিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফজর আলী সেই নারীর ঘরে ঢোকে। এরপর সবাইকে লেলিয়ে দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেন শাহ পরান।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনসহ চারজনের মোবাইল ফোন থেকে আরও কিছু ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ভিডিও বিশ্লেষণ করে অন্য জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে ওই গ্রামে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি করছে। বিশেষ করে ওই গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে বাড়তি নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে।
বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা জহির উদ্দিন বলেন, সেদিনের ঘটনার নেপথ্যে ছিল শাহ পরান। তাকে আটক করতে পারলে অনেক তথ্য-উপাত্ত বের হয়ে আসবে। সন্দেহভাজন অনেকেই এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। তাছাড়া বিপদে পড়ার আশঙ্কায় অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ ঘটনায় আমাদের এলাকার ভাবমূর্তি শেষ হয়ে গেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, প্রথমে শাহ পরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল ভিকটিমের। পরে টাকা-পয়সার লেনদেনকে কেন্দ্র করে ফজর আলীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয় শাহ পরান। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। তিনি বলেন, শাহ পরান ও ফজর আলী আপন ভাই এবং দুজনই খারাপ প্রকৃতির মানুষ। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় অনেক অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এই চক্রটির কারণে আমাদের এলাকার অনেক বদনাম হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করছি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমিন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, সন্দেহভাজন ২০-২৫ জনের তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি, ডিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সন্দিগ্ধ আসামিদের বিষয়ে কাজ করছে। কাল (আজ) পর্নোগ্রাফি আইনে গ্রেফতার ৪ আসামির রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হতে পারে। তিনি বলেন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে এবং বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে ভিকটিম নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে ওই পরিবার নিরাপদে রয়েছে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা এবং সাময়িক ট্রমা কাটাতে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নিরাপদ অবস্থানে রাখা হয়েছে। ভিকটিমকে মেডিকেল পরীক্ষার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, দুটি মামলাতেই মূল আসামিরা গ্রেফতার হয়ে গেছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলাটি ডিটেক্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া সন্দেহভাজন আসামিরা আত্মগোপনে থাকলেও আমরা তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। ধর্ষক ফজর আলীর ভাই শাহ পরানকেও আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।
বাহেরচর গ্রামে সংখ্যালঘু এক নারীকে ২৭ জুন রাতে ধর্ষণের পর বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে পরদিন ফজর আলীকে আসামি করে মামলা করেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সুমনকে মূল আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়। মামলার এজহারনামীয় পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।