করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। অথচ খোদ এই নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মকর্তারাই স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন! এ কারণে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী কোভিড-১৯ রোগে ভুগছেন। এছাড়া শতাধিক কর্মীর মধ্যে জীবাণুটির উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেলে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি লকডাউন করা হলে পুরো ব্যাংকিং খাতের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল বর্তমান পরিস্থিতিতে গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে চিঠি দিয়েছে। এতে করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা ও কর্মীদের সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক ভিত্তিতে রোস্টারিং ডিউটি ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে।

সংগঠনটির সভাপতি এইচ এম দেলোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে এবং কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস-আদালত পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা রয়েছে। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকেও সময়োপযোগী ব্যবস্থা রাখা জরুরি।’

গত ১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে দেওয়া ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত দীর্ঘ সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে অফিস কার্যক্রম পুরোমাত্রায় চালু করা হয়েছে। লক্ষণীয় যে, অফিস চালু হওয়ার পর অফিসের প্রধান ফটক, ভবনের ফটক, লিফট, করিডোরে মানবজট তৈরি হচ্ছে। স্টাফ বাসে গা ঘেঁষে বসে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিসে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’

চিঠিতে অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যাপ্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং অফিস, বিভাগ, সেকশন কর্মকর্তাদের দু’তিন ভাগে বিভক্ত করে সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক আবর্তনের মাধ্যমে অফিস পরিচালনার বিষয়ে গভর্নরের কাছে দাবি জানিয়েছে।

ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘করোনাভাইরাস ভয়াবহ রকমের ছোঁয়াচে রোগ। কাজেই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি অনুসরণ না করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছেন।’

কাউন্সিলের নেতারা মনে করেন, বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক-দু’জন আক্রান্ত হলে ওই বিভাগের একাধিক কর্মকর্তাকে আইসোলেশনে যেতে হবে। এক্ষেত্রে বিকল্প কর্মকর্তা না থাকলে ওই বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়বে।

গত ১৯ মার্চ থেকে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া নিজেদের ১৫০ জন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রেখেছে। এ তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে এমন ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বরাত দিয়ে সংগঠনটি উল্লেখ করেছে, সংক্রমণের ঝুঁকি যতটা সম্ভব কমিয়ে কর্মীদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে। যারা ঘরে থেকে কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন তাদের ঘরেই কাজ করতে দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার কর্মী বাংলাদেশ ব্যাংকে আসছেন। বিপুলসংখ্যক কর্মী একসঙ্গে আসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ফটক দিয়ে গাদাগাদি করে সবাই একসঙ্গে ঢুকছেন। এছাড়া লিফটে গাদাগাদি করে সবাই একসঙ্গে উঠছেন। অফিসের ভেতরে আগের মতোই একসঙ্গে বসে কাজ করতে হচ্ছে। অনেক লোকের সমাগম এখানে। অর্থাৎ কোথাও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছেন না কেউ।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।’

নির্বাহী পরিচালক জানান, অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের চিঠির বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews