নিয়মবহির্ভূতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কালের কণ্ঠের তালা প্রতিনিধিকে ১০ দিনের সাজা দেওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে সাতক্ষীরার তালার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রাসেলকে নিয়ে।

জানা গেছে, রাসেল নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সক্রিয় কর্মী ছিলেন। রাসেল আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পান; যদিও তিনি ৩১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করেছিলেন। প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানের পর এমন কোনো আওয়ামী সুবিধা নেই, যা তিনি পাননি।

স্বল্প চাকরিজীবনে তিনি বিদেশে পোস্টিংও বাগিয়ে নিয়েছিলেন, যা হাতে গোনা দু-চারজন কর্মকর্তাই পান। দলীয় পরিচয় ছাড়া এসব পোস্টিং পাওয়া অনেকটাই অসম্ভব। শুধু তা-ই নয়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ভোল পাল্টে ঠিকই বাগিয়ে নিয়েছেন ইউএনও পদটিও। 

সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ৩৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ মো. রাসেল। ছাত্রজীবনের শুরুতে তাঁর কোনো দলীয় পরিচয় না থাকলেও ধীরে ধীরে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর আগে ও পরের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সবাই তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন সে সময়ের জাহাঙ্গীরগনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁদের দহরম-মহরম ছিল চোখে পড়ার মতো।

তাঁরা দুজনই এখন সরকারের উচ্চ পদে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন।

অনেকে দাবি করেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তিনি সাংবাদিককে সাজা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে উপজেলা পরিষদের অডিটরিয়ামে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে হেনস্তা করেন। এ নিয়ে সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা। 

এদিকে, ইউএনও রাসেল নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন শেখ রাসেল। থাকতেন কামাল উদ্দিন হলে। ২০১০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। তাতে সাফিনকে সভাপতি ও সাম্যকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়েছিল। সক্রিয় কর্মী ছিলেন শেখ রাসেল। সাধারণ সম্পাদক নির্ঝর আলম সাম্যর কাছের বন্ধু হওয়ার সুবাদে রাসেল কামাল উদ্দিন হলের সাধারণ সম্পাদক হতে চেয়েছিলেন। তবে হঠাৎ করেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। আত্মগোপনে থাকা ওই কমিটির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের রাজনীতি করত রাসেল। তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি ১১ সদস্যের ছিল। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে চেয়েছিল সাধারণ সম্পাদক সাম্য।’

জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ছাড়াও ভূমি অফিসে ইউএনওর আছে একচ্ছত্র আধিপত্য। এখানে ঘুষের রেট নির্ধারণ করে রেখেছেন তিনি। নামজারি, নাম সংশোধনসহ ভূমিসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানে গরিবের পকেট কাটা হয় এখানে। এই পকেট কেটে নেওয়া অর্থের বড় অংশ রোট অনুযায়ী ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মিরাজ হোসেন, বড়বাবু আব্দুল হাই ও নাজির তপন কুমারের হাত ঘুরে চলে যায় ইউএনওর পকেটে। জমির নামজারি করতে হলে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এরপর শুরু হয় ঘুষ বাণিজ্য। আবেদনের পর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিস থেকে প্রত্যয়ন নিতে হলে দিতে হয় ঘুষ, এরপর সার্ভেয়ারের প্রত্যয়নেও ঘুষ, এমনকি বাড়বাবু ও নাজিরের টেবিলে ঘুসের টাকা জমা না হলে এসি ল্যান্ডের টেবিলে ফাইল যায় না। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকেও আলাদাভাবে আসে ঘুষ। তা যায় শেখ মো. রাসেলের কাছে। 

নগরঘাটা গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নামজারি করতে আট হাজার টাকা দিয়েছি। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। আগে এসি ল্যান্ড অফিসে দিতে হতো তিন-চার হাজার টাকা। তবে ইউএনও রাসেল অভিযোগ অস্বীকার করেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews