অনেক মুসলমান মনে করেন, হিন্দুরা সব ভারতের দালাল। কিছু হলেই তাঁরা দৌড় দেন ভারতের দিকে। ‘ভারতের দালাল’ কথাটা এ দেশে খুব খায়। পাকিস্তানি শাসকেরা মনে করতেন, বাঙালি মুসলমান খাঁটি মুসলমান নয়। নামে মুসলমান হলেও কার্যত তারা হিন্দু। তারা হিন্দু সংস্কৃতি লালন-পালন করে। শহীদ মিনার, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন—এসব হচ্ছে হিন্দু সংস্কৃতি।
১৯৭১ সালে এ দেশে গণহত্যা হয়েছিল। প্রধান টার্গেট ছিল হিন্দু সম্প্রদায়। পাকিস্তানিদের হাতে যত মুসলমান মারা গেছে, পাকিস্তানিরা তাদের হিন্দু মনে করেই মেরেছে। যে এক কোটি লোক ভারতে শরণার্থী হয়েছিল, তাদের ৮০ ভাগই ছিল হিন্দু।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুসলমানের চোখে হিন্দুরা হিন্দুই থেকে গেল, বাঙালি হতে পারেনি। রেডিও-টেলিভিশনে আর সরকারি অনুষ্ঠানে একজন পুরুত ডেকে গীতা পাঠ করিয়ে সরকার দায়িত্ব সারল। বলল ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ হয়ে গেছে। ১৯৭২ সাল থেকেই দেশের নানা জায়গায় পূজামণ্ডপে হামলা আর প্রতিমা ভাঙচুর হতে থাকে।
১৯৭৫ সালের পর কাগজে–কলমে বাংলাদেশ হয়ে যায় মুসলমানের দেশ। রাষ্ট্রের অনানুষ্ঠানিক ইসলামীকরণ জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে শুরু, এরশাদের হাতে তার মোক্ষলাভ।
শেখ হাসিনা ২০ বছর ক্ষমতায় থেকে জিয়া-এরশাদের তৈরি স্থিতাবস্থা বজায় রাখলেন। হিন্দুদের প্রতি তাঁর দরদ ছিল না। তাঁর দরকার ছিল হিন্দু ভোট। মুসলমানের প্রতিও যে তাঁর দরদ ছিল, এমনটি বলা যাবে না।
আসলে তাঁর একমাত্র চাওয়া ছিল ক্ষমতার চূড়ায় থাকা। সে জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের অনুভূতি নিয়ে তিনি ডুগডুগি বাজিয়েছেন আর হিন্দুদের রেখে দিয়েছেন জিম্মি করে। ক্ষমতার ভিত টিকিয়ে রাখতে নির্ভর করেছেন ভারতের ওপর। সরকার চালিয়েছেন সামরিক-অসামরিক গোয়েন্দা আর সরকারি-বেসরকারি লাঠিয়াল দিয়ে।