স্পেশাল করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ
১০:০০ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২১ ফেব্রুয়ারী দলের সহ-দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সেই সাথে পরবর্তী নতুন কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলার অধীন সব উপজেলা ও পৌর বিএনপির কার্যক্রম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের পরামর্শে পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়।
তবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। দলীয় কোন কর্মসূচিতেই তাদের জোড়ালো কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। জেলা বিএনপির এই কমিটির নেতাদের ছিল অনেক ব্যর্থতা। তার মধ্যে কয়েকটি বড় বড় ব্যর্থতা রয়েছে। যা নিয়ে জেলা বিএনপির নেতাদেরকে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি পদ থেকে শাহ আলমের পদত্যাগের পর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল থানা কমিটি। এর মাত্র একদিন পরেই নতুন কমিটি ঘোষণা করেন জেলা বিএনপি। তবে কমিটির কাকে কোন পদে রাখা হয়েছে তা স্বয়ং জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরও জানা ছিল না। চাউর রয়েছে, পদত্যাগের আগেই শাহ আলমের তৈরী করা ডামি কমিটিই অনুমোদন দিয়েছিলেন জেলার সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ।
২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ স্বাক্ষরিত ৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে আহ্বায়ক ও নজরুল ইসলাম পান্নাকে সদস্য সচিব করা হয়। অথচ এই দুই নেতা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিতর্কিত নেতা হিসেবে পরিচিত। আজাদের বিরুদ্ধে সরকার দলীয় নেতাদের পদলেহনের অভিযোগ আর নজরুল ইসলাম পান্নার বিরুদ্ধে রয়েছে অস্থবাজের অভিযোগ। কিন্তু বিতর্কিত হওয়া সত্ত্বেও কোন এক অদৃশ্য কারণে তাদেরকে পদায়ীত করা হয়েছে। যা নিয়ে তৃণমূলে দেখা দেয় তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।
একই সাথে গত ৪ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সোনারগাঁ পৌর শাখার আহবায়ক কমিটির অনুমোদনের কথা জানানো হয়। আর ওই কমিটিতে হাজী মোঃ শাহজাহান মেম্বারকে আহবায়ক, মোঃ মোতালেব মিয়াকে সদস্য সচিব এবং যথাক্রমে সফিকুল ইসলাম নয়ন, মোঃ শাহীন আহাম্মদ, নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফারুক আহাম্মদ তপন (কাউন্সিলর), মোঃ আলমগীর হোসেন, হাজী আবু ছাইদ, মোঃ ফরিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট সাদ্দাম হোসেন, মাসুম মোল্লা, মোঃ আব্দুর রহিম, নাসির উদ্দীন (সাবেক কাউন্সিলর), শামসুল ইসলামকে যুগ্ম আহবায়ক করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সোনারগাঁও পৌর শাখার মোট ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করা হয়।
কিন্তু এই কমিটি ঘোষণার পর পরই সোনারগাঁয়ে বিএনপিতে নানা আলোচনা সমালোচন শুরু হয়। নবঘোষিত কমিটিতে যাকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে পৌরসভা নির্বাচনে থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর কালামের নির্বাচনী প্রচারণার দেখা গেছে। এছাড়া আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে তার বিএনপির নেতাকর্মীদের চেয়ে বেশী সখ্যতা বলে দলীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। প্রচারণার ছবি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে আর তাই এ কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে নেতাকর্মীরা কমিটি ঘোষণায় ক্ষুব্দ বলে জানিয়েছেন।
থানা বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শাহজাহান মেম্বার আওয়ামীলীগের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং তিনি তাদের নির্বাচনী প্রচারণায়ও অংশ নেন। তার বিরুদ্ধে কমিটির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাকর্মীরা প্রচারণার ছবিসহ পোস্ট করেছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ জেনে শুনেই এমন লোককে কিভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন তা নিয়ে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্দ।
এদিকে জেলা বিএনপির পূূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগে দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাদের সাথে কথা বলার সময় বলেছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে যেন বিশাল আয়োজন করে পরিচিতি সভা করা হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার বছর পেরিয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি কোন পরিচিতি সভা করতে পারেনি।
অন্যদিকে ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান এবং সেক্রেটারী অধ্যাপক মামুন মাহমুদ সহ ২০৫ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিলেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারেনি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ ঝাড়তে পারেন সেই আশঙ্কায় তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়েও চুপ ছিলেন। পরবর্তীতে প্রথম স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজ নারায়ণগঞ্জে পূর্র্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা জানতে পারেন জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে।