প্রবাসীদের ভোট নেওয়ার সম্ভাব্য তিন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পর্যালোচনায় কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটগ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে বিষয়ে তারা বেশিরভাগ দলের লিখিত মতামত পেয়েছেন। এর মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন ভোট চালুর পক্ষে মতামত এসেছে বেশি। প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে অনেক দল; আর পোস্টাল ব্যালটের তেমন কার্যকারিতা না থাকায় এ পদ্ধতিতে আগ্রহ তেমন নেই।
এসব মতামত পর্যালোচনায় চলতি মাসেই কারিগরি বিশেষজ্ঞদের ‘অ্যাডভাইজরি কমিটি’র সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য কোন পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া যায়, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত ২৯ এপ্রিল মতবিনিময় করে ইসি। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ অন্তত ২১টি দলের প্রতিনিধি অংশ নেন সেদিন; ইসির তরফে মে মাসের প্রথমার্ধে লিখিত মতামত দিতে দলগুলোকে অনুরোধ করা হয়।
এর মধ্যে মতামত জানানো দলগুলোর মধ্যে ৫-৬টি দল প্রক্সির পক্ষে, আর ১২-১৪টি দল অন্য দুই পদ্ধতির পক্ষে। কয়েকটি দল এখনও মতামত জানায়নি।
নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জামায়াত, এনসিপিসহ বেশিরভাগ দল মতামত দিয়েছে। মতামত দিতে সময় চেয়েছে বিএনপি।
বিএনপি যে কারণে সময় চায়
ইসিতে লিখিত মতামত কবে নাগাদ দেওয়া হবে তা এখনও ঠিক করেনি বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বুধবার বলেন, “আমরা ইসির সঙ্গে আলোচনায় প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে অবস্থান জানিয়েছিলাম। এরপর তিনটি পদ্ধতি নিয়ে দলীয়ভাবে ও প্রবাসী ভোটারদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সবশেষে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জমা দেওয়া হবে।”
কোন পদ্ধতি সহজ, কার্যকর, সাশ্রয়ী ও গ্রহণযোগ্য হবে তা জানতেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রক্সিতে ‘না’ জামায়াত-এনসিপির
প্রক্সি ভোট হল, একজনের ভোট তার মনোনীত আরেকজন দেবেন। অর্থাৎ, প্রবাসী তার ভোটদানের ক্ষমতা আরেকজনের কাছে হস্তান্তর করবেন কোনো একটি নির্বাচনের জন্য।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বুধবার বলেন, “প্রক্সি ভোটিংয়ের সঙ্গে আমরা একমত নই। অনলাইন ও পোস্টাল ব্যালট- এ দুই পদ্ধতির পক্ষে মতামত দিয়েছি আমরা। সেক্ষেত্রে দুই পদ্ধতি নিয়ে স্বচ্ছ, জবাবদিহতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতের বিষয়ে জোর দিয়েছি।”
ইসির বেঁধে দেওয়া সময়ে দলের মতামত লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতি নিয়ে বরাবরই সংশয় প্রকাশ করে আসছে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের দল এনসিপি।
দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “প্রবাসীদের জন্য প্রক্সি ভোটিংকে আমরা নিরুৎসাহিত করেছি। দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে ভোট দেওয়াকে প্রাধান্য দিই। পোস্টাল ব্যালটের পক্ষেও আমাদের সুপারিশ রয়েছে।”
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দলের মতামত জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতিতে ভোটারের চাওয়া অনুযায়ী ভোটদান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকেরই। যেমন প্রবাসী ভোটার একজনকে ভোট দিতে অনুমতি দিলেন প্রতিনিধিকে, কিন্তু সেই প্রতিনিধি ভোট দিলেন আরেকজনকে। এক্ষেত্রে ভোটারের রায় প্রতিফলিত হবে না।
অনলাইন-পোস্টালে ঝোঁক বেশি
পোস্টাল ব্যালট ও অনলাইন পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পাশাপাশি আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রক্সি ভোটের সুপারিশ করেছে ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে এ পদ্ধতিতে আগ্রহ দেখায়নি বেশিরভাগ দল।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইন, পোস্টাল ব্যালট ও প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতি নিয়ে দলগুলো দ্বিধাবিভক্ত মতামত দিয়েছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের মত, অনলাইনে ভোট হতে পারে কিংবা পোস্টাল ব্যালট কার্যকর করা যেতে পারে। এক-তৃতীয়াংশের দল শর্তসাপেক্ষে প্রক্সি ভোটিংয়ের পক্ষে; সেক্ষেত্রে কারিগরি নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয় রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ইতোমধ্যে বলেছেন, তিনটি পদ্ধতির মধ্যে অনলাইন ভোটিং সময়সাপেক্ষ বিষয়, পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি তেমন কার্যকর নয়। ‘প্রক্সি ভোট’ পদ্ধতি হলে প্রবাসীদের বড় অংশকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, “অ্যাডভাইজরি কমিটির সঙ্গে বসব। দেরি করতে পারছি না, একটা পথ ধরে এগোতে হবে। সময় ও প্রত্যাশাকে মাথায় রেখে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
“আমরা অন্তত কাজটা শুরু করতে চাই। অ্যাডভাইজরি কমিটির মতামত নিয়ে এখন ইমপ্লিমেন্টেশনের বিষয়ে যাব।”
চলতি মাসেই এ বৈঠক হতে পারে বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে ‘অ্যাডভাইজরি টিমের’ লিডার বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, “ইতোমধ্যে স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়েছে কমিশন। আমরা কারিগরি বিষয়গুলো তুলে ধরি।
“ঈদের ছুটি শেষে হয়তো একটা সময় নির্ধারণ করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে পদ্ধতিগুলোর সার্বিক দিকগুলো আলোচনা হবে।”
বর্তমানে দেশে ১২ কোটি ৩৭ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে। চলতি জুনের মধ্যে যুক্ত হবে ৩০ লাখেরও বেশি ভোটার।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দেশের প্রায় কোটি নাগরিক প্রবাসে থাকেন, যাদের বেশিরভাগই বর্তমানে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান না। প্রবাসে থেকেও যাতে তারা ভোট দিতে পারেন তার উপায় এখন খোঁজা হচ্ছে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার: 'প্রক্সি' ভোটে একমত নয় দলগুলো
রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়া প্রবাসীদের ভোটের সব চেষ্টা ‘বৃথা যাবে’: সিইসি