‘ধূমকেতু’-র বক্স অফিস জয়জয়কার। হাউসফুল শো আর করতালির ঝড়ে প্রমাণ হয়েছে ছবিটির বিপুল সাফল্য। দেব, শুভশ্রী গাঙ্গুলি ও রুদ্রনীল ঘোষ অভিনীত কৌশিক গাঙ্গুলির এই চলচ্চিত্র প্রেম, হারানো মানুষ, যুদ্ধ আর উগ্রবাদের ক্ষতের এক অনন্য কাহিনি। মুক্তির প্রথম চার দিনেই ১০.১৬ কোটির বেশি আয় করে ছবিটি ইতিমধ্যেই একাধিক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
টি-টু অনলাইনের অরিন্দম চ্যাটার্জীকে দেয়া দেবের সাক্ষাৎকারটি চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য ভাষান্তর করে প্রকাশ করা হলো।
অভিনন্দন ছবির সাফল্যের জন্য
“ধূমকেতু আমার কাছে একটা আবেগ। আমরা এই দিনের জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করেছি… সব সময় মনে হয়েছে, এটাই আমার সেরা ছবি; এটাই শুভশ্রীর সেরা ছবি; এটাই কৌশিকদার সেরা ছবি। আমরা জানতাম ছবিটা গুরুত্বপূর্ণ… তবে এই মাত্রার সাফল্য আশা করিনি। ছবিটাকে ঘিরে বিপুল হাইপ তৈরি হয়েছিল, আর সময়ের সঙ্গে সেটাই আরও বেড়েছে। ভক্তদের প্রত্যাশা ছিল ভয়ংকর রকমের, আর আমরা খুশি যে সেটা পূরণ করতে পেরেছি। প্রথম মাত্র চার দিনেই ১০ কোটির মাইলফলক পেরিয়ে গেছে—এটা বাংলা সিনেমার জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দর্শক আমাদের পরিশ্রম আর অভিনয়কে ভালোবেসেছেন। প্রথম দিন ভোর ৭টার শো-ও ছিল হাউসফুল। অসাধারণ একটা অনুভূতি। দীর্ঘদিন আমরা বাংলা ছবির জন্য প্রাইম-টাইম শো-এর দাবি তুলছিলাম, আর অবশেষে তা বাধ্যতামূলক হলো।”
ভক্তরা চাইছেন, দেব-শুভশ্রী আবার একসঙ্গে কাজ করুন।
এখনই কিছু বলা ঠিক না। ভবিষ্যতে যদি কেউ এমন কোনো গল্প নিয়ে আসে, যেটা আমাদের ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না, তাহলে ভাবতে পারি। যদি মনে হয়, শুভশ্রী কোনো চরিত্রের জন্য একেবারে পারফেক্ট, আর ও মনে করে আমিই পারফেক্ট—তাহলেই কেবল একসঙ্গে করা সম্ভব।
আপনি কি শুভশ্রীর সঙ্গে আবার জুটি বাঁধতে রাজি?
হ্যাঁ, আমরা দু’জনেই রাজি আছি। তবে ছবিটা হতে হবে অর্থবহ, গুরুত্বপূর্ণ।
প্রমোশনের জন্য শুরুতে আলাদা আলাদা মিডিয়ার সামনে গিয়েছিলেন। ট্রেলার লঞ্চে একসঙ্গে আসার সিদ্ধান্ত কবে নিলেন?
আমার ম্যানেজার ওর টিমের সঙ্গে কথা বলছিলেন। প্রথমে আমরা অনিশ্চিত ছিলাম—সঠিক সময় কোনটা, বুঝতে পারছিলাম না। এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তরা শুভেচ্ছা বার্তায় ভরিয়ে দিলেন। দেব-শুভশ্রী জুটিকে সবাই ভালোবাসছিল। প্রযোজকের দিক থেকে ভাবছিলাম, প্রমোশনে কিছু আলাদা করা দরকার।
‘খাদান’-এর মতো হতে পারবে না। আমি চাইছিলাম দেব-শুভশ্রীর সেই ইউনিভার্স গড়ে তুলতে, যাতে দর্শকরা নস্টালজিয়ায় ভেসে যায়। টিম কিছু আইডিয়া দিল, আর আমরা ঠিক করলাম নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করব— যা আগে কখনো হয়নি। গান, সংলাপ— সব দিয়ে সেই ইউনিভার্স বানানো হলো। ভক্তদের নানা প্রশ্ন ছিল, তাই মঞ্চে প্রশ্নোত্তর রাখলাম। আমার টিম প্রশ্ন পাঠাল, ও (শুভশ্রী) কিছু প্রশ্নে রাজি হলো, কিছু বাদ দিল। সব ওর সম্মতিতেই হয়েছে, জোর করে কিছু চাপিয়ে দিইনি।
প্রথম কোথায় দেখা হলো আপনাদের?
স্টেজে ওঠার আগে গ্রিন রুমে। শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম। সবকিছু সিঙ্কে আনার দরকার ছিল, নাচের ধাপও রিহার্সাল করেছিলাম। ছবিটা ইতিবাচকতা নিয়ে, তাই সেশনও ইতিবাচকভাবে শুরু করতে চেয়েছিলাম।
স্টেজে একসময় আপনারা একে অপরকে ইনস্টাগ্রামে ফলো করলেন…
হ্যাঁ, ওটা আমাদের টিমের সারপ্রাইজ ছিল। সেখানেই হয়ে গেল, আর সেটা বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠল।
তারপর ‘সন্তান’ নিয়ে কথা হলো, সেটা কি সাজানো ছিল?
না, প্রথমে ‘সন্তান’-এর প্রশ্ন বাদ দেওয়া হয়েছিল! কিন্তু মঞ্চে এসে হঠাৎই হলো। এরপর তো অনুষ্ঠান একেবারে আনস্ক্রিপ্টেড হয়ে গেল। শো-ডিরেক্টরও আমাদের ছেড়ে দিলেন (হাসি)!
আপনি ইনস্টাগ্রামে প্রায়ই ‘এমনি’ লেখেন, যেটা ‘চ্যালেঞ্জ’-এ শুভশ্রী বলেছিল। কোনো যোগসূত্র আছে?
না, কোনো সম্পর্ক নেই। আমি লম্বা ক্যাপশন লিখতে চাই না, তাই ভেবেছি একটা সহজ শব্দ লিখব—‘এমনি’। এতটুকুই।
স্টেজে নাচের ব্যাপারটা বলুন…
আমি জানতাম, দর্শকরা আমাদের নাচ দেখতে চাইবে। ছোট্ট একটা রিহার্সাল করেছিলাম। কিছু ধাপ সাজানো, কিছু ছিল হঠাৎ। ভিডিও দেখবেন—আমার ঠোঁট নড়ছে… আমি ওকে বলছিলাম, কোন স্টেপে কীভাবে শেষ করব বা পোজ দেব।
নৈহাটির বড়মা কালীমন্দিরে লাল পোশাকে দু’জনকে একসঙ্গে দেখা গেল। এটা কি পরিকল্পনা ছিল?
না, এটা একেবারেই কাকতালীয়। আমি চারটা পোশাকের মধ্যে লালটা বেছে নিলাম, আর ও-ও লাল পরেছিল—কোনো প্ল্যান ছিল না। আমার প্রিয় রঙও লাল। অনুষ্ঠানের সঙ্গেও মানিয়ে গিয়েছিল।
‘ধূমকেতু’ ২০১৫ সালে আপনার প্রোডাকশন হাউস থেকে প্রথম ছবি। আর আপনি এতে অ্যান্টাগনিস্ট! কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন?
আমি সবসময় ভিন্ন কিছু করতে চাই। তখন রিমেকের ভিড়ে অন্যরকম সিনেমা দরকার ছিল। আমি এর আগে ‘বুনোহাঁস’, ‘চাঁদের পাহাড়’ করেছি। ‘ধূমকেতু’-র বিষয়বস্তু চমৎকার, আমি বিশ্বাস করেছিলাম। কৌশিকদা দুর্দান্ত নির্মাতা। ভেবেছিলাম, একদিন এই ধরনের সিনেমাই মূলধারায় জায়গা করে নেবে। আর আমি ঠিকই প্রমাণিত হয়েছি। আজ বক্স অফিসে রেকর্ড গড়ছে।
আপনার কি মনে হয়, ২০১৬ সালে মুক্তি পেলে ছবিটা এমন হিট হতো?
না, আমি মনে করি না। যা ঘটে, ভালো কিছুর জন্যই ঘটে। ঈশ্বর দয়ালু।
‘ধূমকেতু’-র সিক্যুয়েল হতে পারে কি?
ধূমকেতু এখন একটা আবেগ। আবেগকে রিক্রিয়েট করা যায় না। এখনই এ বিষয়ে বলার সময় আসেনি। এটা কৌশিকদার ওপর নির্ভর করছে। টি-টু অনলাইন