রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির প্রেক্ষিতে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি সেনাবাহিনী সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে। ন্যাটোর নতুন প্রতিরক্ষা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জার্মান সেনাবাহিনীতে অতিরিক্ত ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার সক্রিয় সেনা অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়াস ব্রাসেলসে ন্যাটো প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

পিস্তোরিয়াস বলেন, ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে ন্যাটোর নতুন প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা। শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে প্রথমবারের মতো বিশদভাবে তৈরি হয়েছে এই পরিকল্পনা। যদি রাশিয়া কোনো সামরিক আক্রমণ চালায় তাহলে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা কয়েক হাজার পৃষ্ঠার গোপন নথিতে তুলে ধরা হয়েছে।।

এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সক্ষমতা মূল্যায়ন করতে গিয়ে ন্যাটো একাধিক ঘাটতির বিষয় চিহ্নিত করেছে। বিশেষ করে যুদ্ধ-প্রস্তুত স্থলবাহিনীর অভাব, দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাটতি, গোলাবারুদের মজুদের ঘাটতি এবং নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা।

নতুন নিযুক্ত ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা, দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, চলনক্ষম স্থলবাহিনী, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করতে হবে—এই সবকিছুই জরুরি।

পিস্তোরিয়াস জানান, জার্মানির সামরিক বাহিনী বুন্ডেসভেহর-এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার। নতুন লক্ষ্য অনুযায়ী এটি বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ থেকে ২ লাখ ৬০ হাজারে নিয়ে যেতে হবে।

গত সপ্তাহে রয়টার্স জানিয়েছিল, ন্যাটো চাইছে জার্মানি অন্তত ৭টি অতিরিক্ত সেনাবাহিনী ব্রিগেড যেন দেয় জোটে। ন্যাটো বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৪০ হাজারের মতো। ন্যাটো দেশগুলোর সম্মিলিতভাবে ১২০ থেকে ১৩০টি ব্রিগেড প্রস্তুত রাখা দরকার বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে এত বিশাল সংখ্যক নতুন সেনা নিয়োগ করা বার্লিনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইতোমধ্যে বুন্ডেসভেহর ২০১৮ সালে নির্ধারিত ২ লাখ ৩ হাজার সদস্যের লক্ষ্যও পূরণ করতে পারেনি। বর্তমানে সেনাবাহিনীতে নিয়মিত সদস্যের ঘাটতি প্রায় ২০ হাজার।

এই পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবী সামরিক সেবার ধারণা কার্যকর হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, বর্তমানে যেসব অবকাঠামো ঘাটতি—যেমন ব্যারাক ও প্রশিক্ষকের অভাব—তা মিটে না যাওয়া পর্যন্ত বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

সাম্প্রতিক এক বড় নীতিগত পরিবর্তনে জার্মান সরকার ঋণসীমা আইন শিথিল করেছে, যাতে করে প্রতিরক্ষা খাতে বড় অঙ্কের ব্যয় বাড়ানো যায়। এ ছাড়া, ন্যাটোর মোট সামরিক ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে জার্মানি—যা রুটে’র একটি প্রধান উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ন্যাটো মনে করছে, রাশিয়া এখন আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় পশ্চিমা জোটের জন্য বেশি হুমকি। তাই যুদ্ধের পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে প্রতিটি সদস্য দেশকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জার্মানির এ পদক্ষেপ ভবিষ্যতের ন্যাটো কৌশলে একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে যাচ্ছে।

জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভাষায়, নিরাপত্তা ব্যয় এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি একটি অনিবার্য দায়িত্ব।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews