চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশী অপারেটর নিয়োগ নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে। বিতর্ক যতই হোক বাস্তবতা হলো- এই বন্দর পৃথিবীর সবচেয়ে অদক্ষ বন্দরগুলোর একটি। কতটা অদক্ষ তা বোঝা যায় বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যানের বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা এখনকার চেয়ে ছয়গুণ বাড়ানো হলেও তা ভিয়েতনামের বন্দরের ধারেকাছেও যাবে না। দেশের উন্নয়ন চাইলে বন্দরের দক্ষতা বিশ^মানে নিতে হবে। সেই যোগ্যতা কোনো দেশীয় অপারেটরের নেই। একমাত্র বিকল্প বিদেশী অপারেটর নিয়োগ দেয়া। এখানেই বিতর্কের মূল সূত্রপাত, যা খুব স্পর্শকাতর জায়গায় কেন্দ্রীভূত। সেটি হলো- সরকার সংযুক্ত আরব আমিরাতের যে অপারেটরের সঙ্গে আলোচনা সেটির সঙ্গে ভারতের সংশ্লিষ্টতা। আবার পতিত স্বৈরাচারের সময়ও ওই কোম্পানির সাথেই আলোচনা চলছিল। সুতরাং এই যুক্তি সাধারণ মানুষ শুধু নয়, রাজনীতিক এবং অনেক চিন্তাশীল মানুষকেও ভাবিত করে। সে জন্যই বন্দরের পরিচালনা বিদেশী অপারেটরের হাতে গেলে দেশের কৌশলগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে কি-না সে বিষয়ে উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে।

এর সঙ্গে আছে দেশীয় অপারেটর ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর বাধা। বিদেশী অপারেটর নিযুক্ত হলে অনেকেরই কায়েমি স্বার্থ বরবাদ হয়ে যাবে। তারা বিষয়টিকে বিতর্কিত করে ফায়দা নিতে চায়।

আমরা মনে করি, বন্দরে বিদেশী অপারেটর নিয়োগ করতেই হবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে বাংলাদেশসহ নেপাল, ভুটান ও ভারতের একটি বড় ভূবেষ্টিত অঞ্চলের ব্যবহারের উপযোগী করার কথা বলছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাতে সামগ্রিকভাবে এই পুরো অঞ্চলের উন্নয়নের নেতৃত্বে থাকবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সামনে এখন এই সুযোগ অবারিত। কিন্তু যে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে তাতে আমরা নেতৃত্ব নিতে কতটা প্রস্তুত সেই প্রশ্ন উঠছে। সরকারকে যেকোনোভাবেই হোক, দেশের কৌশলগত নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকার বিষয়ে জনগণকে অবশ্যই আশ্বস্ত করতে হবে।

আমরা এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞের মন্তব্য গুরুত্ববহ মনে করি। গতকাল নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে তার মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয়। তিনি হলেন চট্টগ্রামে যৌথবাহিনীর সাবেক টাস্কফোর্স কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ হাসান নাসির। তিনি বন্দরের সংস্কার কার্যক্রমে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন।

বন্দরে বিদেশী অপারেটর আনার বিষয়ে হাসান নাসির বলেছেন, গত ১৬ বছরে এ দেশে ভারতীয়দের চলাফেরা, নজরদারি, কার্যকলাপ যেভাবে অবাধ করে দেয়া হয়েছিল- বিদেশী অপারেটর এলে তার চেয়ে বেশি হুমকি সৃষ্টির কারণ নেই। তিনি বলেন, বর্তমান দেশীয় অপারেটর গত ১৫-১৬ বছরে বন্দর থেকে যে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে, কোনো বিদেশী কোম্পানি সেটি করতে পারবে না; বরং তারা এ বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করে দেবে, দক্ষ করে দেবে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) হাসান নাসির মনে করেন, টার্মিনাল বিদেশী অপারেটরের হাতে দিতে আসলে প্রচ্ছন্নভাবে বাধা দিচ্ছে ভারত। তিনি বন্দর পরিচালনা যাতে কোনো মাফিয়া চক্রের হাতে না পড়ে সে বিষয়ে সতর্ক করেন।

মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের যেকোনো উন্নয়নে ভারত ও তার স্থানীয় এজেন্ট আওয়ামী লীগ বাধা দেবেই। সব দিক সামলেই সরকারকে করণীয় সম্পন্ন করে ফেলতে হবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews