আজকে ক্ষুদ্রঋণের কথা সবাই জানি। এর শুরু কিন্তু ইউনূস ভাইয়ের একটি মৌলিক দর্শন থেকে। কীভাবে কার্যকর পন্থায় তৃণমূলের মানুষকে নিজ ভাগ্য পরিবর্তনের এজেন্টে (নিয়ন্তা) রূপান্তরিত করা যায়, সে জন্য নারীদের ঋণ দেওয়ার আগে তাঁদের দিয়ে পাঁচজনের এক একটা গ্রুপ করেছেন তিনি। ‘ষোলো সিদ্ধান্ত’ নামে একটি বিষয়ও ছিল। এই ষোলো সিদ্ধান্তের একটি ছিল নারীরা একত্র হয়ে প্রথমে শরীরচর্চা করবেন।
ছিল সময়মতো বৈঠক করার বাধ্যবাধকতা। ড. ইউনূস মনে করতেন, নারীদের পরিবর্তনের নিয়ন্তা হতে হলে প্রথমে জড়তার প্রাচীর ভাঙতে হবে। শুরুতে তাঁদের মানসিক, সামাজিক ও শারীরিক জড়তা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন তিনি। নারীরা উন্নয়নের এজেন্ট হওয়ার জন্য একত্র হচ্ছেন। তৎকালীন বাংলাদেশে এটা একটা বৈপ্লবিক ধারণা ছিল। তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক করার পেছনের গল্প কিন্তু এটাই।
ক্ষুদ্রঋণের ধারণা ঐতিহাসিকভাবে আমাদের মধ্যে ছিল। সেটা জাকাতের মাধ্যমে হোক বা প্রতিবেশীর বিপদে সহযোগিতার মাধ্যমে হোক। কিন্তু ড. ইউনূসের বড় সফলতা হলো, ক্ষুদ্রঋণের পুরো বিষয়কে একটি মডেল হিসেবে দাঁড় করানো। কোনো একটি বিষয় মডেল হলে এর বিস্তার হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাঁর একটা লক্ষ্য ছিল এটি চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া। গ্রামীণ মানুষের জড়তার প্রাচীর ভাঙা ছিল এই মডেলের অংশ। ড. ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম প্রথমে চট্টগ্রামে করলেন। বিশেষ করে জোবরা গ্রামের কথা প্রায় সবাই জানি। তখন মানুষ মনে করল এক জায়গায় হয়েছে, অন্য এলাকায় হয়তো হবে না। তখন তিনি টাঙ্গাইলে গেলেন। পরবর্তী সময় দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের বহু দেশে ছড়িয়ে পড়ল এ কার্যক্রম। ক্ষুদ্রঋণ ধারণাকে গ্রহণ করে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এখন দেশে–বিদেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। বৈশ্বিক স্বীকৃতি হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস নোবেল পুরস্কারেও ভূষিত হলেন। নোবেল মুখপাত্র তাঁকে মনোনীত করার কারণ তুলে ধরতে গিয়ে বলেন:
নিচ থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে তাঁদের প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে নরওয়েজীয় সমান দুই অংশে ভাগ করে ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি। বৃহৎ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে না পেলে স্থায়ী শান্তি অর্জিত হতে পারে না। ক্ষুদ্রঋণ এমনই একটি পন্থা। নিচ থেকে উন্নয়ন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে এগিয়ে নিতেও সহায়ক হিসেবে কাজ করে।