রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মায়ার খেলা’ গীতিনাট্যের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান রহিয়াছে—‘আমি, জেনে শুনে বিষ করেছি পান।’ এই রবীন্দ্রসংগীতটি জনপ্রিয় হইবার কারণ হইল—অধিকাংশ মানুষই বাস্তব জীবনে কখনো-সখনো হঠকারী কাজকারবার করিয়া থাকেন। অতঃপর একটি পর্যায়ে আসিয়া তাহার আত্মোপলব্ধি ঘটে—যাহা তিনি করিয়াছেন তাহা ঠিক করেন নাই। তিনি জানিয়া শুনিয়া বিষ পান করিয়াছেন। আমাদের রাজনীতি-সমাজ সংসারেও এইরূপ ঘটনা দেখিতে পাওয়া যায়।

প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সাধারণত নিজস্ব রাজনৈতিক আদর্শ থাকে। সেই আদর্শকে যাহারা হূদয়ে-মননে ধারণ ও লালনপালন করেন, তাহারা সেই রাজনৈতিক দলের অনুসারী কিংবা সরাসরি সদস্য হইয়া থাকেন। সমগ্র বিশ্বেই আদর্শগত রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে এই চিত্র দেখা যায়; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত কোনো রাজনৈতিক দলে যদি বিপরীত আদর্শের, অর্থাত্ রাজাকার-আলবদর-আলশামসের মতাদর্শের ছেলেপুলেদের দেখা যায় এবং তাহারা যদি একের পর এক অমার্জনীয় দুষ্কর্ম করিতে থাকে, তখন বুঝিতে হইবে এই ধরনের বহিরাগতদের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা রহিয়াছে। এই ধরনের বহিরাগতরা ক্ষমতাসীনদের দলে ঢুকিয়া প্রথমে পদ-পদবি ক্রয় করিয়া থাকে। তাহার পর তাহাদের শিকড় ক্রমশ চারিদিকে বিস্তার করিতে থাকে। এইভাবে যতই তাহারা ক্ষমতা অর্জন করে ততই তাহারা সুবিধামতো নানান কিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে লইয়া যায়। নিজের নিয়ন্ত্রণে লইয়া ইহার পর তাহারা যেই ধরনের অত্যাচার-অবিচার করিতে শুরু করে, তাহাতে দিবালোকের মতো বুঝা যায়—কী তাহাদের উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা।

ইহা ঠিক, ক্ষমতায় যাহারা থাকেন, অনেক উন্নয়ন ও ভালো কাজ করিলেও তাহাদের লইয়া সমালোচনা হইয়াই থাকে। উন্নয়ন ও ভালো কাজের তো শেষ নাই। সুতরাং অনেক কাজ করিবার পরও কিছু কিছু সমালোচনা পৃথিবীর সকল দেশের ক্ষমতাসীনদেরই শুনিতে হয়। ইহা স্বাভাবিক; কিন্তু দলের আদর্শের বিপরীতে বহিরাগতদের অপকর্ম, অত্যাচার, অন্যায় কর্মকাণ্ডের জন্য যদি অনেক বেশি সমালোচনা শুনিতে হয়, তাহা হইলে তাহা সেই আদর্শগত দলটির জন্য অত্যন্ত পরিতাপের। ইহা জানিয়া শুনিয়া বিষ পান করিবার মতো। তাহাই ঘটিতে দেখা যাইতেছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত একটি বৃহত্ দলের ক্ষেত্রে। ইতিমধ্যে কোনো কোনো এলাকায় এই ধরনের বহিরাগত অনুপ্রবেশকারীরা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করিয়া ফেলিয়াছে। এখন এই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধীদের শিকড় যদি উত্পাটন করা না হয়, ঝাড়িয়া ফালানো না হয়, তাহা হইলে ভবিষ্যতে সেই সকল বহিরাগত-অধ্যুষিত এলাকায় আদর্শগত দলটিকে তাহার আদর্শিক অনুসারী এবং সাধারণ জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়িতে হইবে।

ইহা ঠিক যে, কোনো দলেরই শীর্ষ নেতার রাজধানীতে বসিয়া তৃণমূল পর্যায়ের এই ধরনের বহিরাগত বা বিপরীত-মতাদর্শের রাজাকার-পোষ্যদের দলে অনুপ্রবেশের বিষয়াদি সর্বত্র নজরদারি করা সম্ভব নহে। ইহার জন্য ঐ আদর্শিক দলের বিভাগীয় কিংবা জেলা পর্যায়ের স্থানীয় নেতা রহিয়াছেন। প্রশ্ন হইল, এই স্থানীয় নেতারা কী করিয়া বিপরীত মতাদর্শের বহিরাগতদের দলের মধ্যে অনুপ্রবেশের ছাড়পত্র দিয়াছেন? কাহারা দিয়াছেন? কেন দিয়াছেন? এখন এই বহিরাগতরা ভাইরাসের মতো নিজেদের বৃদ্ধি করিয়া পুরা দলটাকেই যে দখল করিতে উদ্যত হইতেছে, তাহার পরিণাম কি ভাবিয়া দেখা হইয়াছে? ক্ষমতাসীন দলের পদ-পদবির শক্তি এবং ইহার সহিত নানাবিধ অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থের শক্তির মাধ্যমে এই অনুপ্রবেশকারীদের বহুক্ষেত্রেই প্রশাসনকে পর্যন্ত ম্যানেজ করিয়া ফেলিতে দেখা যায়। ইহা লইয়া সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে ফিসফিসানি শুনা যায়। শুনা যায় আরো অনেক কিছু, অনেক ধরনের সমালোচনা। এই সকল কথা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত দলটির নীতিনির্ধারকদের কান পাতিয়া শুনিতে হইবে। তাহাদের বুঝিতে হইবে—তাহাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত দলটি নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য যতটা সমালোচিত হইতেছে, তাহার চাইতে অনেক বেশি সমালোচিত হইতেছে দলটির অনুপ্রবেশকারীদের অন্যায়-অত্যাচার এবং বিবিধ দুষ্কর্মমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য। 

ইংরেজিতে একটি কথা রহিয়াছে—বেটার লেট দ্যান নেভার। দেরি হইয়াছে, তবে সময় এখনো সম্পূর্ণ ফুরাইয়া যায় নাই বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে। নির্বাচন যত ঘনাইয়া আসিতেছে, ততই চারিদিক হইতে স্বাধীনতাবিরোধীরা নানান ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল বিছাইতেছে। এখনই সময় বহিরাগত-অনুপ্রবেশকারী বিষবৃক্ষদের মূলোত্পাটন করিবার।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews