রাজধানীর গুলশানে শহীদ তাজউদ্দীন স্মৃতি পার্ক তথা গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক আবারও যে প্রকারে বেদখল হইয়া বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হইতেছে, উহা হতাশাজনক। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক পার্ক চলিবে না বলিয়া তথায় ওয়ান্ডারল্যান্ড চিলড্রেন পার্কের কার্যক্রম বন্ধে উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলে ২০১২ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক উহা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসির নিকট হস্তান্তর করে। কিন্তু ডিএনসিসি প্রয়োজনীয় সংস্কার করিয়া পার্কটি প্রথমে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করিলেও, ২০২৩ সালে পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তরের নামে তুলিয়া দেয় গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের হস্তে, যাহারা উহাতে নূতন করিয়া বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে এবং শিশুদের খেলাধুলা ও জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। ইহা দুর্ভাগ্যজনক তো বটেই, স্পষ্টত উচ্চ আদালতের রায়েরও বরখেলাপ।
প্রতিবেদনমতে, শিশু-কিশোরসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে পরামর্শ করিয়া পার্কটির নকশা এমনভাবে করা হয়, যেন পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক থাকে। কিন্তু পার্ক ও মাঠ দখলপূর্বক ইচ্ছামাফিক স্থাপনা তৈরি করা হইতেছে। পার্কের যে জায়গা বৃষ্টির পানি শোষণের জন্য উন্মুক্ত স্থানস্বরূপ রাখা হইয়াছিল, তথায় কংক্রিটের ঢালাই দিয়া ফুটবলের কৃত্রিম টার্ফ বানানো হইতেছে। ফলে পার্কের ঘাসে ঢাকা সবুজ চত্বর ধ্বংসপ্রায়। এমনই বিভিন্ন প্রকারে ইহার প্রকৃতি ও শ্রেণির পরিবর্তন করা, ইহাকে ভাড়া বা ইজারা প্রদানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যে ব্যবহার আইনের পরিপন্থি।
আমরা প্রত্যাশা করি, স্থানীয় জনসাধারণের দাবি আমলে লইয়া কর্তৃপক্ষ মাঠকে পুনরায় সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করিয়া দিবে। ইতোপূর্বে রাজধানীসহ দেশের অন্যত্রও উন্মুক্ত মাঠ দখলের পাঁয়তারা আমরা দেখিয়াছি। অথচ প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলিয়াছেন, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলার মাঠের প্রয়োজন এবং তিনি নূতন মাঠ স্থাপনেও গুরুত্ব দিয়াছেন। নাগরিক অধিকারের দিক হইতেও গুলশান সেন্ট্রাল পার্কটি হস্তচ্যুত হইতে পারে না।