হাতলওয়ালা কাঠের চেয়ার। এর সামনে বড় টেবিল। টেবিলের ওপর দলিলের স্তূপ। আছে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, পানির গ্লাস, টিস্যু-বক্স ও আরও কিছু টুকিটাকি জিনিসপত্র। টেবিলটির ডান প্রান্তে থাকা পাখা চলছে। চেয়ারে বসে একের পর এক দলিলে সই করছেন তিনি। তবে সইয়ের আগে ড্রয়ারে ঢুকছে ঘুষ। কেউ টাকা কম দিলে দলিলে সই না করার হুমকি দিচ্ছেন ঘাড় বেঁকিয়ে।

এ দৃশ্য নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের। এখানে প্রতি মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার বসেন বন্দর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডল। তিনি ড্রয়ারে ঘুষ না ঢুকলে দলিলে সই করেন না।

সম্প্রতি একটি ভিডিওতে এছহাক আলী মণ্ডলের ঘুষ নেওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে, যা এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, এছহাক আলী মণ্ডল দলিল লেখকদের সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন, কেউ ড্রয়ারে ঘুষের টাকা কম দিলে ঘাড় বেঁকিয়ে তাকাচ্ছেন, সই না করার হুমকি দিচ্ছেন। আবার প্রত্যাশিত পরিমাণ ঘুষ পেলে তা ড্রয়ারে পুরে গভীর মনোযোগে দলিলে সই করছেন। 

ড্রয়ারে ঘুষ রাখছেন একজন (ছবি- ভিডিও থেকে ক্রপ করে নেওয়া)

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে আড়াইহাজার উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলামকে অন্য জায়গায় বদলি করা হয়। তার পদে এখনও কাউকে নেওয়া হয়নি। আন্তর্বর্তীকালীন এ অফিসে বসেন বন্দর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডল। তিনি সপ্তাহে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার এ অফিসে বসেন। বাকি তিন দিন বসেন বন্দর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে।

আড়াইহাজার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের লাইসেন্স পাওয়া দলিল লেখকেরা অভিযোগ করেন, এছহাক আলী মণ্ডল এ অফিসে যোগদানের পর থেকে দলিলে সই করার জন্য ‘মোটা অঙ্কের ঘুষ’ নেন। তার দাবি অনুযায়ী ঘুষ না পেলে দলিলে সই করেন না। শুধু তা-ই নয়; ঘুষের টাকা কম হলে তিনি প্রায়ই দলিল লেখকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

দলিল লেখকেরা জানান, তাদের অভিযোগ কেউ আমলে না নেওয়ায় এছহাক আলী মণ্ডলকে প্রত্যাহারের দাবিতে তারা কর্মবিরতি শুরু করেন। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার (২০ ও ২১ মার্চ) তারা কর্মবিরতি পালন করেছেন। এরই মধ্যে এছহাক আলী মণ্ডলের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এছহাক আলী মণ্ডলকে প্রত্যাহার না করা হলে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দলিল লেখক বলেন, ‘আমাদের অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। তবে এখন ফেসবুকে এছহাক আলী মণ্ডলের যে ভিডিও ছড়িয়েছে তা আমলে না নেওয়ার উপায় নেই।’

ঘুষ নিচ্ছেন সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডল (ছবি- ভিডিও থেকে ক্রপ করে নেওয়া)

আড়াইহাজার উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বলেন, ‘এছহাক আলী মণ্ডল ঘুষ ছাড়া কোনও দলিলে সই করেন না। কেউ তার প্রত্যাশামাফিক ঘুষ না দিলে ভেন্ডারদের (দলিল লেখক) সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন।’

তবে কে বা কারা ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।

এছহাক আলী মণ্ডলের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও নজরে এসেছে জেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

এ ব্যাপারে জেলা সাব-রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার বলেন, ‘ভিডিওটি আমার নজরে এসেছে। এ নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। রবিবার (২৫ মার্চ) অফিস খুললে বিষয়টি তদন্ত করে এছহাক আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখেননি জানিয়ে জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, ‘প্রমাণ পাওয়া গেলে এছহাক আলীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে এ ব্যাপারে মন্তব্য নেওয়ার জন্য গত দুই দিনে এছহাক আলী মণ্ডলের মোবাইল ফোনে অনেকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও:



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews