রবিবার প্যারিসের রোলাঁ গারো কোর্টে টেনিসের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় রচনা করলেন কার্লোস আলকারাজ ও ইয়ানিক সিনার। পাঁচ ঘণ্টা ২৯ মিনিটের লড়াইয়ে দুই সেটে পিছিয়ে থেকেও ম্যাচে ফিরে এসে চ্যাম্পিয়ন হন স্পেনের ২২ বছর বয়সি তারকা আলকারাজ। ম্যাচের ফল ছিল ৪-৬, ৬-৭(৪), ৬-৪, ৭-৬(৩), ৭-৬(১০-২)।
এটি ফরাসি ওপেনের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ ফাইনাল। আগের রেকর্ডটি ছিল ১৯৮২ সালে সুইডেনের ম্যাটস উইলান্ডারের। ম্যাচের শেষে বিশ্লেষণে উইলান্ডার বলেন, ‘শেষ দিকে যেটা হল সেটা একেবারেই অবিশ্বাস্য ছিল। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না যে এই দুই জন এমন লেভেলে খেলেছে। আমি ভেবেছিলাম ফেদেরার, নাদাল আর জোকোভিচদের পর এমন কিছু আর হবে না। কিন্তু এর মান তো আরও ভালো!’
ম্যাচে দুই খেলোয়াড় মিলে মোট ১২৩টি উইনার শট মারেন। প্রতিটি পয়েন্টের জন্য লড়াই হয়েছে শেষ পর্যন্ত। ম্যাচে পয়েন্টের হিসাবেও এগিয়ে ছিলেন সিনার, ১৯৩-১৯২। তবুও অল্পের জন্য ইতিহাস গড়া হলো না তার। তিনি হতে পারতেন ১৯৭৬ সালের পর প্রথম ইতালিয়ান পুরুষ ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন।
উইলান্ডার আরও বলেন, ‘আমি ফেদেরার আর নাদালের ফাইনাল দেখেছি। কিন্তু এটা তাদের থেকেও অনেক এগিয়ে। আমি ভাবছিলাম, এটা কি আদৌ সম্ভব? ওরা এমন গতিতে খেলছে, যা মানুষের পক্ষে সম্ভব না। এটা দুইজন সেরা অ্যাথলেটের লড়াই ছিল, যারা আবার টেনিস খেলোয়াড়।’
প্রাক্তন ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন জিম কুরিয়ার বলেন, ‘এই দুইজনের মধ্যে এটা প্রথম ফাইনাল ছিল। আলকারাজ যে টাইব্রেকারে খেলেছে, তা ছিল একদম স্বর্গীয় টেনিস।’
৭ বার গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী জন ম্যাকেনরো বলেন, ‘এই দুইজন এখন যেভাবে খেলছে, তাতে নাদাল তার সেরা সময়েও ওদের হারাতে পারতেন কি না, সন্দেহ আছে। এনবিএ-তে যেমন অনেকে বলেন, মাইকেল জর্ডানের চেয়ে কেউ ভালো হতে পারে না। কিন্তু এই মুহূর্তে টেনিসের মান আরও উপরে।’
অন্যদিকে, ফরাসি ওপেনজয়ী আন্দ্রে আগাসি বলেন, ‘আলকারাজের সবচেয়ে ভালো সারফেস হতে পারে ঘাস। আমি বলবো, উইম্বলডন তার জন্য আরও ভালো হতে পারে। ওর ডিফেন্স আর গতি নোভাকের থেকেও বেশি, কখনও কখনও। তাকে কখনও কখনও ফেদেরারের মতো মনে হয়, এমনকি মাঝে মাঝে তার থেকেও ভালো মনে হয়। আর রাফার মতো স্পিন, এমনকি তার থেকেও ভালো আছে তার।’
গত রাতে হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক এ ফাইনাল শুধু ফরাসি ওপেনের নয়, টেনিসের ইতিহাসেই অনন্য হয়ে থাকবে। অন্তত কিংবদন্তিদের প্রতিক্রিয়া তাই বলছে।