দুই মাস বয়সী শিশু জুনায়েদকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা। শেষ রাতে ঘুম থেকে জেগে দেখেন ছেলে তার পাশে নেই। বিছানা থেকে উঠে ছেলেকে খাটের আশপাশে খুঁজতে থাকেন।

কোথাও নেই তার আদরের ধন। একপর্যায়ে মা সানজিদা নাজনীন দেখেন ঘরের দরজা খোলা। কাঁচা বসতঘরটির ভিটের পেছনের দিকে মাটি খুঁড়ানো, চোর সিঁধ কেটে রেখেছে।!

সানজিদা হাউমাউ করে ওঠলেন এবং চিৎকারে কাঁদতে থাকেন। তার কান্নায় আশপাশের লোকজন সজাগ হয়ে জড়ো হয় তার ঘরে।
এরপর সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেন। খবর নেয়া হয় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। কোথাও পাওয়া যায়নি জুনায়েদকে।

খবর দেয়া হয় পুলিশকে। ঘটনাস্থল তারা পরিদর্শন করেন। পরে ডিবি পুলিশের সহায়তায় ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের শাহবাগ পাঁচপাড়া গ্রামের।

শিশুর স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনা যেখানে ঘটেছে এটা মা সানজিদার বাবার বাড়ি।

রোববার (৯ জুন) রাতে প্রতিদিনের মতোই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সানজিদা। বুকের পাশে ঘুমানো ছিল জুনায়েদ। তখন রাত ৯টা। এরপর দুইবার ছেলেকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য জাগেন মা। সবশেষে রাত ৩টার দিকে জুনায়েদের কান্নায় ঘুম ভাঙে সানজিদার। বাচ্চাকে দুধ খাইয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের আজানের সময় তার ঘুম ভাঙে। এ সময় দেখেন জুনায়েদ পাশে নেই! ঘরে খোঁজাখুঁজি করে ছেলেকে পাননি। একপর্যায়ে দেখা যায় ঘরের দরজা খোলা, কাঁচা বসতঘরের এক পাশে সিঁধকাটা!

সানজিদা নাজনীনের স্বামী সাজ্জাদ হোসেনের বাড়ি চট্টগ্রামে। সেখানে তিনি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। জুনায়েদ যখন গর্ভে, তখন স্বামীর সাথেই থাকতেন তিনি। প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসায় বাবার বাড়িতে এসেছিলেন সানজিদা। গত রমজান মাসের শেষের দিকে জুনায়েদের জন্ম হয়েছিল। রোববার ঘটনার সময় স্বামী সাজ্জাদ হোসেন চট্টগ্রামে ছিলেন।

সোমবার (১০ জুন) দুপুর ১২টার দিকে সানজিদা নাজনীনের বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জুনায়েদের জন্য তার মাসহ স্বজনেরা বিলাপ করছেন। প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। মা কাঁদতে কাঁদতে পাগল প্রায়। একটু পর পর তিনি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন। জ্ঞান ফিরলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলছেন, ‘কই গেলোরে আমার বাবা! আমি কেউর তো ক্ষতি করি নাই। আমার বাবার কেডা নিলো। আমার বুকর ধনরে আইন্না দেও।’

এদিকে ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর শিশুটিকে সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের বেতরাটি গ্রামের রুবেল মিয়ার (৩২) বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

ঘটনায় জড়িত থাকায় রুবেল মিয়া ও তার শাশুড়ি সত্তু বেগমকে (৫৫) আটক করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো: আল আমিন হোসাইন বলেন, বেতরাটি গ্রামের মরহুম শহীদ উদ্দিনের ছেলে রুবেল মিয়ার তিন মেয়ে। গত রোববার তার আরো একটি মেয়ে জন্ম নেয়। এতে তার মন খারাপ হয়। তার শশুড় বাড়ি তাড়াইলের শাহবাগ গ্রামে, যেখান থেকে শিশুটিকে চুরি হয়। তার শাশুড়ি সত্তু বেগমের ঘর শিশুটির মা সানজিদার ঘরের পাশে লাগোয়া। রুবেল মিয়া তার শাশুড়িকে দিয়ে শিশুটির খোঁজখবর নেয়। পরে তার সহযোগিতায় রুবেল মিয়া শিশু জুনায়েদকে রাতে সিঁধ কেটে ঘর থেকে চুরি করে।

ঘটনার পর শিশুটির মা নাজনীন মৌখিকভাবে তাড়াইলে থানাকে এই চুরির বিষয় অবগত করলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা শাখা ও তাড়াইল থানার সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিকেল চার ঘটিকায় বেতরাহাটি গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে।

উদ্ধার শিশু জুনায়েদকে তার মা ও বাবার কাছে বুঝিয়ে দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।

জানা গেছে, আগে সানজিদার অন্যত্র বিয়ে হয়েছিল। সাজ্জাদ তার দ্বিতীয় স্বামী। এ স্বামীর ঘরে জুনায়েদ তার একমাত্র সন্তান।

তাড়াইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) বাহালুল খান বাহার নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তাড়াইল থানার একাধিক টিম বাচ্চাটাকে উদ্ধার করার জন্য কাজ শুরু করে। পরে ডিবি পুলিশের সহায়তা নেয়া হয়।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews