শুক্র-শনি সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে আজ রোববার সরকারি দপ্তরগুলোতে ভীড় একটু বেশিই থাকার কথা। কিন্তু সব কিছু স্বাভাবিক মনে হলো তেজগাঁও ভূমি অফিস। এখানে নেই কোন ভীড় নেই কোন হট্টগোল। প্রধান ফটক পেড়িয়ে ভূমি অফিসের ভেতরে গেলে সবার আগে চোখে পরে সেখানকার তথ্য সেবা কেন্দ্র। পাঁচটি ডেস্ক নিয়ে সেখানে পাঁচজন নারি পুরুষ তথ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক নানা সমস্যা নিয়ে আসা সেবাগ্রহীতাদের। ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে সেবা নিচ্ছেন অনেকেই আর যারা সেবা নেবেন তারা সামনে পাতা চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছেন কখন তাদের সিরিয়াল আসবে।
দুপুর ১২ টা বেজে ৪০ মিনিটে এই কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা মানুষজন নানা সেবা নিয়ে যার যার গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন হাসি মুখেই। খেয়াল করে বোঝা গেল এমন নির্ঝঞ্জাট সেবা পাবার পেছনে ডিজিটাল সেবা মাধ্যম বেশ উপকারে এসেছে। ফাইল খোঁজার ঝামেলা না থাকায় ক্রমিক নাম্বার অনুযায়ী ড্যেটা সার্ভারে সার্চ দিলেই পেয়ে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত ফাইল। তাই লাইন ধরা বা সময় খাটিয়ে কোন কিছু খোজার দরকার নেই।
তথ্য সেবা কেন্দ্র দিয়ে বের হলেও নাক বরাবর সবুজ নোটিশ বোর্ড চোখে পড়বে কিন্তু সেখানে কোন নোটিশ ঝুলানো নেই। নোটিশ বোর্ডের আসে পাশে নানা নিয়ম সম্বলিত ডিজিটাল পোস্টার ও সতর্কবানী লেখা। সেখানে দালাল চক্র থেকে সাবধান থাকার কথা বলা হয়েছে। সেই সাথে একটি পোস্টারে লেখা যে কোন অভিযোগ বা জানার থাকলে বেলা ১২ টা থেকে দুপুর একটার মধ্যে যে কেও চাইলে এই অফিসের মহাপরিচালকের সাথে দেখা করতে পারে।
অফিসের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেলো নামাজের প্রত্যেকটি কক্ষে কর্মীরা খুব মনযোগের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। কোন হই হুল্লোর নেই, নেই কোন দালালের দৌড়াত্ব। অফিসের এক কোনায় ক্যান্টিন সেখানে বসে দুপুরের আহার সারছেন অনেকেই আবার অফিসের ভেতরে মসজিদ সেই মসজিদ থেকে নামাজ শেষে কাজে ফিরছেন অনেকেই। এপাশ ওপাস ঘুরে এসে চোখ আটকে যায় ভূমি অফিসের মাঝখানে বেশ খানেকটা ফাকা জায়গা এবং সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছ লাগানো। ওই ফাকা জায়গায় গাছের পাতা পরে এবং বিভিন্ন সময় বৃষ্টির পানি পরে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। কিছু কিছু জায়গায় মশা বিস্তারের সম্ভাবনাও অনেক।
ঘুরে ঘুরে এসে দেখা গেলো ভূমি অফিসের বাহিরে বেশ কিছু জায়গায় কয়েক জন করে মানুষের জটলা। জটলার মানুষগুলো ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলছেন বা কথা বলার সময় প্রতীকী ভাষার ব্যবহার করছেন। তিন চারটা জটলার কথা-বার্তা শুনে যা বোঝা গেলো তার সারমর্ম হচ্ছে, এখানে কিছু লোক আছেন যারা জমির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এখানে এসেছেন এবং আর কিছু লোক আছেন যারা এই সমস্যা সমাধান করে দেবেন টাকার বিনিময়ে। কাজ অনুযায়ী টাকার অংকটা ভিন্ন ভিন্ন হয়। বোঝা গেল, অফিসের ভেতরে কড়া নজরদারী থাকায় দালালদের দৌড়াত্ব আপাতদৃষ্টিতে দেখা না গেলেও অফিসের বাহিরে আছে সক্রিয় দালাল সিন্ডিকেট। আগে এরা অফিসের ভেতরে থাকলেও এখন অফিসের বাহিরে থেকে শুরু করে প্রধান ফটকের বাহিরেও বিভিন্ন চায়ের দোকানে ঘাটি গড়ে তুলেছেন। এক দালালা চক্রের সদস্যে দেখা গেলো তার কথিত এক ক্লায়েন্টকে বুঝিয়ে সুবিধে করতে না পেরে বলছেন, ‘চলেন এখানে কথা বলে শান্তি পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বাহিরে চা খেতে খেতে বিস্তারিত আলাপ করবো। তখন আপনি বুঝবেন আশা করি’
ঘড়িতে এতক্ষণে একটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট। ভূমি অফিসে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। ফাইল নিয়ে অফিসের ভেতর ছুটছে তো কেউ ফাইল নিয়ে বাইরের দিকেও ছুটছে। কেউ আবার বিরস মুখে বসে আছে নিজের জমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান না করতে পেরে।