শহিদুল ইসলাম রাজী

সন্দেহের তীর সুজাতার ভাগ্নের দিকে

রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় গারো সম্প্রদায়ের মা-মেয়ে হত্যায় স্বজন ও পুলিশের সন্দেহের তীর নিহত সুজাতার ভাগ্নের দিকে। তাদের ধারণা, সুজাতার ভাগ্নে সঞ্জীব চিরান ও তার তিন বন্ধুই এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। এ ঘটনায় গতরাতে এ খবর লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে স্বজনদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, অভিযুক্ত হিসেবে ভাগ্নে সঞ্জীবকে খুঁজছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে ৫৮/২ ক কালাচাঁদপুরের ছয়তলার বাড়ির চারতলার বাসা থেকে সুজাতা চিরান (৪০) ও তার মা বেশথ চিরানের (৬৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল সুজাতা স্বামী আশীষ মানথি বাদি হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ মামলায় সঞ্জীব চিরান ও তার তিন বন্ধুকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, ওই বাসার সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সঞ্জীব ও তার ওই তিন বন্ধু জড়িত। ধারণা করা হচ্ছে, টাকা চেয়ে না পেয়ে অথবা পারিবারিক কোনো পূর্ব ক্ষোভের বশে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যা করা হয়েছে। এমনকি সেক্সসুয়াল বিষয়ও জড়িত থাকতে পারে।

জানা গেছে, হত্যার দিন মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে সঞ্জীব ও তার তিন বন্ধুসহ কালাচাঁদপুরের ওই বাড়ির চারতলার বাসায় যায়। যাওয়ার দুই ঘণ্টা পর তারা বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। তারা বের হওয়ার পর সুজাতার মেয়ের স্বামী পিলেস্তার ওই বাসায় গিয়ে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়া দেখতে পান। দরজা খুলেই ঘরে লাশ পড়ে থাকতে দেখে তিনি চিৎকার করেন। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ ও সিআইডি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলামত সংগ্রহ শেষে মধ্যরাতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। গতকাল নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ জানান, সুজাতার গলা কাটা জখম ছাড়াও তার বুকে, পিঠে ও হাতে ১৪টি কাটা জখম রয়েছে। আর তার মাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত সুজাতার মেয়ে মায়াবী চিরান বলেন, চারতলায় দুই রুমের ওই বাসায় থাকেন তারা। তার আরো দুই বোন আছে মাধবী চিরান ও সুরভী চিরান। মাধবী ধানমন্ডিতে থাকেন। ওই বাসায় তার বাবা আশীষ মানথি, বোন সুরভী, স্বামী পিলেস্তা ডাড়িন ও এক বছরের মেয়ে মানসী চিরান থাকতেন। মঙ্গলবার দুপুরে তার বড় খালা নির্জলা চিরানের ছেলে সঞ্জীব তিন বন্ধুকে নিয়ে বাসায় আসে। সবার সাথে ভালোমতো কথাও বলছিল। এরপর তিনি তার কর্মস্থল পাশের একটি কসমেটিক্সের দোকানে চলে যান।

এ সময় বাসায় তার মা ও নানী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার স্বামী বাসায় গিয়ে দেখেন দরজা খোলা। ভেতরে ফোরে সুজাতার রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে আছে। পরে বাড়ির মালিক ও পুলিশকে খবর দিলে অন্য রুমের খাটের নিচে নানীর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর থেকে সঞ্জীব ও তার বন্ধুদের পাওয়া যাচ্ছে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সঞ্জীবের সাথে তাদের কোনো পূর্ব শত্রুতাও ছিল না।
মায়াবী চিরান বলেন, আমার মা ও নানীর খুনি যারাই হোক, তাকে গ্রেফতার করা হোক। আমরা ধারণা করছি এ খুনের পেছনে আমার বড় খালার ছেলে সঞ্জীব জড়িত থাকতে পারে।

সুজাতার স্বামী আশীষ বলেন, সুজাতার বড় বোনের ছেলে সঞ্জীব চিরানের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার মরিয়মনগর গ্রামে। বেকার যুবক তার খালার কাছ থেকে টাকা দাবি করছিল। এটি থেকেই হয়তো সঞ্জীব এ খুনের ঘটনা ঘটাতে পারে। গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ সমাহিত করার জন্য ময়মনসিংহের হালুঘাটের জয়রামপুর চন্দ্রাঘাট গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ওই বাড়ির দারোয়ান আবদুল আজিজ বলেন, ওই এলাকায় অনেক আদিবাসীর বসবাস। ওই বাড়ির নিচতলা ও দোতলায়ও গারো সম্প্রদায়ের লোক থাকে। চারতলার দুই রুমের একটি ইউনিটে পরিবারসহ থাকতেন নিহতেরা। বাড়ির দরজা সব সময় উন্মুক্ত থাকত। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মায়াবীর স্বামী তাকে ঘটনাটি জানায়। কে কখন বাসা থেকে বের হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানেন না। তবে মাঝে মধ্যেই ওই বাসায় আত্মীয়রা আসতেন। কোনো সময় ঝগড়া-বিবাদ শোনেননি।

গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাহ উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে হত্যার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া গেছে। একাধিক ব্যক্তি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে আমরা ধারণা করছি।
তিনি আরো বলেন, বাড়ির নিচতলায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বিকেল ৪টার দিকে সুজাতার বোনের ছেলে সঞ্জীব তিন ব্যক্তিসহ বাসায় এসেছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তারা বেরিয়ে যায়। পরে সুজাতার বড় মেয়ে মায়াবীর স্বামী পিলেস্তা সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই বাসায় আসেন। সে সময় তিনি দরজা বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগানো অবস্থায় দেখতে পান। পরে ভেতরে ঢুকে তিনি সুজাতা ও তার মায়ের লাশ দেখতে পান।

পুলিশের গুলশান বিভাগের এসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশের একটি বিশেষ টিম হত্যারহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে। পারিবারিক বিরোধের জেরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আসামি সঞ্জীবকে আটক করতে পুলিশের অভিযান চলছে।

পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি এস এম মোশতাক আহমেদ খান বলেন, সুজাতাকে গলা কেটে ও কুপিয়ে এবং তার মাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে খুনের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে।


এ দিকে গতকাল নিহতদের ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষ হয়। তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে তাদের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা: প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, মা বেশথ চিরানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। আর মেয়ে সুজাতার গলাসহ শরীরে ১৪টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। এর মধ্যে গলার আঘাতটি মারাত্মক ছিল। অতিরিক্ত রক্তরণে তার মৃত্যু হয়েছে। হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, এ হত্যাকাণ্ডের সাথে একাধিক খুনি জড়িত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, নিহতদের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরা পরীার জন্য শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কি না তা জানতে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীা-নিরীাগুলোর রিপোর্ট আসার পর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়া হবে। জানা গেছে, সুজাতার তিন মেয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ঘটনার সময় তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে ছিলেন। সুজাতার স্বামী আশীষও সে সময় নিজ কর্মস্থলে ছিলেন বলে জানান। সুজাতার একমাত্র ছেলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে নিজ গ্রামে থাকেন।





Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews