অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরেছে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স

ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব অনন্য। ১৯৩৭ সালে পুরান ঢাকার কলতাবাজার ও চকবাজারের বাসিন্দারা মিলে গড়ে তোলেন এই ক্লাবটি। প্রতিষ্ঠার অল্প দিনের মধ্যেই দেশের ফুটবলে জনপ্রিয় ক্লাবে পরিণত হয় ঢাকা ওয়ান্ডারার্স।

১৯৪০ থেকে ১৯৪৮; টানা আট বছর এই ক্লাবের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার আগে ঢাকার ফুটবল বলতে সবার মুখে ছিল ওয়ান্ডারার্সের নাম। ১৯৫০, ১৯৫১, ১৯৫৩, ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৬ ও ১৯৬০ সালে ঢাকা ফুটবল লিগের শিরোপা জিতেছিল এই ক্লাবটি। স্বাধীনতার আগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও ওয়ান্ডারার্সের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল বেশি।

তবে দেশ স্বাধীনের পর একটু একটু করে ওয়ান্ডারার্সের আধিপত্য কমতে থাকে। ১৯৯৫ সালে তো দেশের ফুটবলের শীর্ষ লিগ থেকে অবনমিত হয় ক্লাবটি। আট বছর পর প্রিমিয়ারে উঠলেও তিন বছর পর্যন্ত ছিল শীর্ষ প্রতিযোগিতায়। ফুটবলের ঐতিহ্য মাঠে ধূলিসাৎ হওয়া ক্লাবটি ঘরোয়া ফুটবলে হয়ে যায় অনিয়মিত। খেলাধুলা বাদ দিয়ে ক্লাবের অভ্যন্তরে ক্যাসিনো এবং অসামাজিক কার্যকলাপের রমরমা বাণিজ্য শুরু করেন কিছু ব্যক্তি। 

যে ক্লাবকে নেতৃত্ব দিয়ে ট্রফি জিতিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, সেই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অন্ধকারে ধাবিত হওয়ার চিত্রটি বেরিয়ে আসে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে র‍্যাবের অভিযানে। ক্যাসিনোকাণ্ডে কলঙ্কিত হওয়ার পর চার বছর ক্লাবটি ছিল তালাবদ্ধ। এই সময়ে আজাদ স্পোর্টিংসহ অন্যান্য জায়গায় যাযাবরের মতো বসে ক্লাবের কার্যক্রম চালিয়েছেন নতুন কমিটির কর্মকর্তারা। তাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম আর প্রচেষ্টার ফলে ক্যাসিনোর সেই কালো অধ্যায় পেরিয়ে আলোর পথে ওয়ান্ডারার্স। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে রানার্সআপ হয়ে দেড় যুগ পর পেশাদার ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা প্রিমিয়ার লিগে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি।

২০২৩ সালের শেষের দিকে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের তালা খুলে দিলেও হারানো গেছে মূল্যবান ট্রফিসহ অনেক কিছু। বদ্ধ তালা খোলার পর শূন্য রুমে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন কর্তারা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ফুটবলার খুঁজে এনে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে সাফল্য পেয়েছে ওয়ান্ডারার্স।

কতটা চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে, তা ফুটে উঠেছে ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক ফুটবলার কামাল হোসেনের কণ্ঠে, ‘এতদিন লোকজনের কাছে রীতিমতো ভিক্ষা করতে হয়েছিল। কিন্তু কেউই টাকা দিতে চাইত না। আমরা তাদের বুঝিয়েছি ক্লাবে ক্যাসিনো বা জুয়া এখন আর নেই। তার পরও সবাই দিতে চায়নি। নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে অনেক কষ্টে অর্থ সংগ্রহ করে ক্লাব চালিয়েছি। সেই কষ্টের ফল এবার পেয়েছি।’

গত মৌসুমে প্রিমিয়ারে উঠেও গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব খেলেনি। আর্থিক সংকটের মধ্যে চলতে থাকা ওয়ান্ডারার্স প্রিমিয়ার লিগে খেলবে কিনা, তা নিয়েও আছে সংশয়। আপাতত সেই শঙ্কা নেই বলে জানান কামাল, ‘আমরা পেশাদার লিগের সর্বোচ্চ আসরে খেলব, এটা অবশ্যই অনেক বড় সাফল্য। শুধু প্রমোশন হয়েছে বলে বসে থাকতে চাই না, লিগে ভালো দল গড়ার চেষ্টা করব।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews