হ্যাশট্যাগ মি টু (#metoo)। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঢুঁ দিলে প্রায়ই চোখে পড়ছে এটি। নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির নানা কথা সেখানে অকপটে খুলে বলছেন নারী। যেসব কথা সযতনে মনের বাক্সে বন্দী ছিল, হ্যাশট্যাগ মি টুর আকাশে সেগুলোই যেন উড়ছে ডানা মেলে। প্রকাশ পাচ্ছে সমাজের নোংরা, কুৎসিত চেহারা। খুলে যাচ্ছে অনেকের মুখোশ।

যৌন হয়রানির প্রতিবাদে মি টুর কল্যাণে সরব নারী। এবারের প্রতিবাদ অভিনব এ কারণে যে নারী নিজ জীবনে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির কথা বলছেন নিজের মতো করে। দ্বিধা-লাজ ঝেড়ে ফেলছেন। কৃতকর্মের জন্য যার লজ্জা পাওয়া উচিত, তির ছুড়ছেন তারই দিকে।

মি টুতে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের নারীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে সাংবাদিক, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী বা সাধারণ নারী, কে হননি যৌন হয়রানির শিকার?
তাঁদের ওপর চলা যৌন হয়রানির এসব ঘটনা জেনে ধাক্কা খাচ্ছেন অনেক পুরুষও। ধিক্কার দিচ্ছেন স্বজাতিকে।

রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মুনমুন শারমিন শামস ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ মি টু ব্যবহার করে বলেন, ‘আমার দীর্ঘজীবনে যত কাহিনি, সব লিখলে জাকারবার্গ পর্যন্ত আমারে ফেসবুকছাড়া করতে পারে মহাকাব্য ফেঁদে বসার অপরাধে।’ (বানান ও ভাষা সম্পাদিত) এরপর তিনি শিক্ষকের মাধ্যমে তাঁর জীবনের যৌন হয়রানির ঘটনা তুলে ধরেছেন।

ঢাকার আরেক ফ্রিল্যান্স লেখক শাফিনূর শাফিন মি টুকে উৎসাহ দিয়ে বলছেন, ‘আগে ছোট মেয়েটা শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণেই হোক বা না জানার কারণেই হোক লজ্জায় প্রতিবাদ করত না। আর এখন বড় হওয়ার পরে জুতা খুলে পেটাতে বা চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো সাহস সে রাখে। সাহস পার্থক্য তৈরি করে দেয়। আপনি দুর্বল হন আর যা–ই হোন, সাহস আছে মানে আপনার সঙ্গে কেউ পারবে না জেনে রাখুন।’ শুধু নারী নন, পুরুষের প্রতি সমব্যথী হয়ে তিনি বলছেন, ‘আমার পরিচিত অনেক পুরুষ আছে, যারা ছোটবেলায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এখনো তাদের অনেকেই সেই ট্রমা বয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের জন্যও মি টু হ্যাশট্যাগ হোক। যেহেতু সংখ্যাটা নিতান্তই কম না।’ (বানান ও ভাষা সম্পাদিত)

আবার ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কথাও আছে। কলকাতার অনিন্দিতা ভৌমিক বলছেন, ‘সবার মি টু স্ট্যাটাস দেখে আমার চারপাশের পুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হচ্ছি—আমাকে একটি নির্মল মেয়েবেলা উপহার দেওয়ার জন্য।’

প্রাচ্যে তো বটেই, পাশ্চাত্যেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে মি টুতে। হলিউড মুঘল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে ওয়েনস্টেইনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর থেকে প্রতিবাদ হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে বড় একটা অংশ তারকারা।

এএফপির খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেত্রী আলিসা মিলানো গত রোববার টুইটে কোনো নারী যৌন হয়রানির শিকার হলে তাঁকে ‘মি টুতে’ জানাতে আহ্বান জানান। গত সোমবার পর্যন্ত কয়েক হাজার সাড়া পড়ে এতে।

১৯৯০ সালে হোয়াইট হাউসে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন মনিকা লিউনস্কি। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই মনিকা হ্যাশট্যাগ মি টুতে টুইট করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংগীতশিল্পী লেডি গাগা ও শেরিল ক্রো টুইটে বলেছেন নিজ নিজ কথা। ক্রো এক সফরে তাঁর সঙ্গে এক ব্যবস্থাপকের অশালীন আচরণের অভিজ্ঞতার কথা টুইট করেন। ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে আইনজীবীর কাছে যাওয়ার পর তাঁকে ঘটনাটি চেপে যেতে বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেত্রী ইভান রেচেল উড ধর্ষণের শিকার হওয়ার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা টুইট করেছেন।

মিলানোর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন জগতের মডেল ক্যামেরন রাসেল গত সপ্তাহে ইনস্টাগ্রামে যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে নারীদের প্রতি আহ্বান জানান। হ্যাশট্যাগ মাইজবসসুডনটইনক্লুডঅ্যাবিউজ ব্যবহার করে শতাধিক নারী তাতে সাড়া দেন।

মি টুতে এসেছে অ্যামি ক্রিশ্চেনসেন নামের এক নারীর যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতার কথা। পরিবারের এক সদস্য শৈশবে তাঁকে ধর্ষণ করেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও তাঁকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। এরপর তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। সেখান থেকে ফেরেন সুস্থ জীবনে।

মি টুতে নারীদের এসব যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতার কথা জেনেছেন প্রযুক্তিবিষয়ক উদ্যোক্তা বিনয় রমেশ। পুরুষদের তিনি মি টুর সঙ্গে যুক্ত হতে আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘যৌন সহিংসতা বন্ধের দায়িত্ব আমাদেরই।’

ইতালিতে হ্যাশট্যাগ কোয়েলাভলতাচেতে ব্যবহার করে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী আজিয়া আরজেনতো। বলেন, হলিউডের নামীদামি এক পরিচালক ওষুধ প্রয়োগে অচেতন করে তাঁকে ধর্ষণ করেন। তখন তাঁর বয়স ২৬ বছর। তবে ওই পরিচালকের নাম বলেননি তিনি।

ফ্রান্সে হ্যাশট্যাগ ব্যালানশেতোপর্শ ব্যবহার করে নারীরা জানাচ্ছেন নিজেদের হয়রানির কথা। সাংবাদিক সান্দ্রা মুলার হ্যাশট্যাগের শুরুতেই তাঁর সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হয়রানিমূলক আচরণের কথা লেখেন। প্রথম দেখেই ওই কর্মকর্তা নাকি বলে উঠেছিলেন, মুলার তাঁর পছন্দের নারীদের মতো। এরপরই অশালীনভাবে তিনি মুলারের বক্ষদেশের প্রশংসাও করেন।

ব্যক্তিগত যৌন হয়রানির যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতার কথা টুইট করেছেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির আইনপ্রণেতা স্টেলা ক্রিজি বলেন, বিশ্বের লাখ লাখ নারী, তরুণী, কিশোরীর মতো তিনিও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। যাঁরা যৌন হয়রানি করেন, তাঁদের ধিক্কার দিয়েছেন তিনি।

আরব বিশ্বেও নারীদের যৌন হয়রানির একই চিত্র। তিউনিসিয়া থেকে মিসর, দুবাই পর্যন্ত জীবনে কখনো যৌন হয়রানির শিকার হননি—এমন নারী খুঁজে পাওয়া ভার।

বোঝা যায়, পৃথিবীর সব দেশে, সমাজে, ক্ষমতার সব স্তরে নারীর যন্ত্রণা একই। জীবনের কোনো পর্যায়ে যৌন হয়রানির শিকার হননি, এমন নারী কি সত্যিই আছে? আর তাই হয়তো মি টুতে এক হচ্ছেন নারী।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews