ক্যাবরেরার টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন

র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮৬ ধাপ এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে টিম বাংলাদেশের সবকিছু পরিকল্পনা মতোই শেষ হচ্ছিল। কিন্তু ৯৪ মিনিটে গিয়েই তালগোল পাকিয়ে ফেলা বাংলাদেশ হজম করে গোল। মঙ্গলবার কিংস অ্যারেনায় ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ফিলিস্তিনের কাছে ১-০ গোলে হারের পর বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার টেকনিক নিয়ে সমালোচনা করেন। অনেকের মতে, দেশের সাবেক দুই তারকা ফুটবলার মামুনুল ইসলাম মামুন এবং জাহিদ হাসান এমিলির চোখেও ধরা পড়েছে টেকনিক দুর্বলতা। ফিলিস্তিনের কাছে হারের কারণগুলো বুধবার সমকালের কাছে তুলে ধরেন দুই সাবেক ফুটবলার।

স্টপারে বিশ্বনাথকে খেলানো
কুয়েতে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে আগের ম্যাচে বিশ্বনাথ ঘোষকে চিরাচরিত রাইটব্যাক থেকে স্টপারে খেলান কোচ ক্যাবরেরা। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হজম করেছিল পাঁচ গোল। বড় হারের পর কিংস অ্যারেনায়ও বসুন্ধরা কিংসের এ ফুটবলারকে স্টপার পজিশনে দেখা যায়। অথচ বিশ্বনাথ যদি আগের মতো রাইটব্যাকে খেলতেন, তাহলে আক্রমণও বাড়ত এবং গোলের সুযোগ সৃষ্টি হতো বেশি। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল মনে করেন, বিশ্বনাথের পজিশন পরিবর্তন করানোটা ঠিক হয়নি কোচের, ‘আমি মনে করি, রাইটব্যাকে বিশ্বনাথ বর্তমানে সময়ের সেরা। কিন্তু তাকে স্টপার হিসেবে খেলিয়ে ভুল করেছে দল। বিশ্বনাথকে রাইটব্যাকে খেলানো উচিত ছিল। তাহলে ম্যাচের ফলটা অন্যরকম হতো। আপনি দেখেন, যখন ফিলিস্তিনের ওই প্লেয়ার (মাইকেল তারমানিনি) যখন গোল করছেন, বিশ্বনাথ অন্যদিকে দাঁড়িয়ে ছিল।’

পাঁচ ডিফেন্ডার খেলানো
এটা ঠিক, কাগজে-কলমে শক্তির বিচারে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ফিলিস্তিন। কিন্তু মঙ্গলবারের ম্যাচে বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে একবারের জন্যও মনে হয়নি বাংলাদেশ পিছিয়ে। বরং বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন রাকিব হোসেন-ফয়সাল আহমেদ ফাহিমরা। আর ৯৪ মিনিটের আগ পর্যন্ত রক্ষণেও ছিল দুর্দান্ত। সমানতালে লড়াই করার পরও কোচ ক্যাবরেরার মনোযোগ ছিল রক্ষণেই বেশি। তাই তো পুরো ম্যাচে বাংলাদেশ খেলেছে পাঁচ ডিফেন্ডারকে নিয়ে। যে কারণে আক্রমণ কম হয়েছে। ম্যাচের পরিস্থিতিতে কোচ বিরতির পর চারজন ডিফেন্ডার খেলাতে পারতেন বলে মত মামুনুলের, ‘শেষ দিকে মনোযোগের ঘাটতি ছিল। টেকনিক্যাল কিছু জিনিসে দুর্বলতা ছিল। বিরতির পর আমরা অনেক ভালো ফুটবল খেলেছি। সুযোগ সৃষ্টি করেছি। সব জায়গায় তাদের সঙ্গে আমরা পেরেছি। তখন কেন আমরা পাঁচজন ডিফেন্ডারকে খেলাব? এটা আমার মাথায় আসছে না।’

স্ট্রাইকারই নেই
স্কোরিংয়ের সমস্যা বাংলাদেশের পুরোনো। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গ্রুপ ‘আই’ যে বাংলাদেশ ১৪ গোল হজম করে দিয়েছে মাত্র এক গোল। অস্ট্রেলিয়া, ফিলিস্তিনের কাছে পাত্তা না পাওয়া জামাল ভূঁইয়াদের একমাত্র গোলটি লেবাননের বিপক্ষে। কেন গোল করতে ব্যর্থ রাকিব-ফাহিমরা? তার উত্তরে সাবেক ফরোয়ার্ড এমিলির মতে স্ট্রাইকারই তো নেই দলে, ‘গোল আপনি কীভাবে করবেন? আপনি তো স্ট্রাইকার নিয়ে খেলেন না। রাকিব আর ফাহিম তো উইঙ্গার। ভালো স্ট্রাইকার থাকলে হয়তো গোল পেত দল। আমার চোখে ভালো মানের স্ট্রাইকার দেখিনি।’

প্রতিপক্ষকে সুযোগ দেওয়া
হোমগ্রাউন্ডে ম্যাচ। আরও বড় প্রেরণা ছিল বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় আগের চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারেনি বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের কাছে মঙ্গলবারও হারত না, যদি শেষ মুহূর্তে মনোসংযোগে বিঘ্ন না ঘটত তপু বর্মণ-শাকিলদের। অথচ শক্তিশালী ফিলিস্তিনের সঙ্গে সমানতালে লড়াই করেছিল স্বাগতিকরা। এমনকি শেষ দিকে প্রতিপক্ষ ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর সুযোগও আসছিল। কিন্তু সেই সুযোগটা না নিয়ে বরং প্রতিপক্ষকে আক্রমণের জায়গা করে দিয়েছেন ফুটবলাররা। টেকনিক্যালি এই জায়গায় টিম ম্যানেজমেন্ট ভুল করেছে বলে মনে করেন এমিলি, ‘প্রতিপক্ষ ১০ জন হওয়ার পর আমাদের উচিত ছিল আক্রমণ করা। অথচ ওই সময় তারা চাপ দিয়ে যাচ্ছিল। অথচ চাপ কিন্তু আমাদের দেওয়া উচিত ছিল। আমরা কিন্তু ১১ জন, তারা ১০ জন। আমরা যদি ওদের সীমানায় আক্রমণ করতাম, তাহলে ফলটা অন্যরকম হতো। আর তপুর সঙ্গে খেলানো হয়েছে শাকিলকে। আমার কাছে মনে হয়েছে, বিগ ম্যাচে কোচ বেশি পরীক্ষা চালিয়েছেন।

জিকোকে না নামানো
মদকাণ্ড নিষেধাজ্ঞার আগে আনিসুর রহমান জিকোই ছিলেন জাতীয় দলের এক নাম্বার গোলরক্ষক। তাঁর নিষিদ্ধের সময়ে মিতুল মারমা সুযোগ পেয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে গোলপোস্টের নিচে কোচ ক্যাবরেরার আস্থার নাম এখন মিতুল। ফিলিস্তিন ম্যাচে ৮৩ মিনিটে শ্বাসকষ্ট নিয়ে মিতুল মাঠ থেকে বের হওয়ার পর সবাই ধরে নিয়েছেন জিকো নামবেন। কিন্তু কোচ জিকোর পরিবর্তে মেহেদি হাসান শ্রাবণকে মাঠে নামান। এর পরই বাংলাদেশ গোল হজম করে। এই জায়গায় কোচের কৌশলে ভুল দেখছেন মামুনুল, ‘আপনারা দেখেছেন মিতুল চাপ নিতে পারে না। চাপ নিতে না পারাতেই তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এটা আপনাকে বুঝে নিতে হবে, সে চাপটা নিতে পারছিল না। নতুন গোলরক্ষক হিসেবে শ্রাবণকে না নামালেই পারত। এই ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ জিকোই ছিল অটোমেটিক চয়েস। কারণ, জিকোর সঙ্গে আগে থেকেই ফুটবলারদের ভালো বন্ডিং ছিল। সে থাকলে তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারত, যে ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ শ্রাবণ।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews