আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) নিয়ে খেপে আছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল সোমবার এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ইলিশ মাছ, জামদানি শাড়ি উদ্বাস্তু না অনুপ্রবেশকারী?’
রাজ্য বিধানসভার নিজের কক্ষে সাংবাদিকদের মমতা এ কথা বলেন।
আসলে এনআরসি নিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে তিক্ততা বেড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রীর।
গত ৩১ জুলাই এনআরসি তালিকা প্রকাশের পরপরই তা বাতিলের দাবি তোলেন মমতা। বলেন, আসাম থেকে যে ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তার অধিকাংশই বাঙালি। এই সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিতে পারছেন না। এ নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ গত শনিবার কলকাতায় এক বিশাল সমাবেশে বলেন, এনআরসি বাদ দেওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই। এনআরসি চলবে। এ দেশে অনুপ্রবেশকারীদের ঠাঁই হবে না। তবে থাকতে পারবেন উদ্বাস্তুরা। তাদের দেওয়া হবে নাগরিকত্ব।
কলকাতার ওই সমাবেশে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও অভিযোগ আনেন অমিত শাহ। তাঁর ওই কথায় খেপে যান তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল সোমবারই তিনি অমিত শাহের বিরুদ্ধে সম্মানহানি করার অভিযোগ তুলে আইনি নোটিশ দিয়েছেন। বলেছেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অমিত শাহ যদি ক্ষমা না চান, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অমিত শাহের ওপর খেপে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল ওই সংবাদ সম্মেলনে অমিত শাহের বাংলাবিরোধী ভূমিকা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘এত বাংলাবিদ্বেষী কেন, বিজেপি? এত ঘৃণা কেন? বাংলা ভাষায় কথা বলা অপরাধ নয়। ওরা বাংলায় এখন বিভাজন করতে চাইছে। মানুষে মানুষে ঘৃণা ও প্রতিহিংসার পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। আর এর চরম বিরোধী আমরা। আমরা ঘৃণায় বিশ্বাসী নই, শান্তিতে বিশ্বাসী।’
কেবল পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম নয়, বরং সব রাজ্যকেই ভালোবাসেন জানিয়ে মমতা বলেন, ‘আজ এশিয়ার দ্বিতীয় ভাষা বাংলা আর পৃথিবীর পঞ্চম ভাষা এই বাংলা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসা মানুষদের কেন আবার উদ্বাস্তু করা হবে? আমি তো এই উদ্বাস্তুদের জন্য লড়াই করেছি। এখনো করছি। বিজেপিতে এখন প্রতিহিংসার পরিবেশ তৈরি করেছে।’
এনআরসি নিয়ে মমতা প্রশ্ন তোলেন, এখন যদি তাঁর বাবা-মায়ের জন্ম সার্টিফিকেট দিতে বলা হয়, সেটা কীভাবে দেওয়া সম্ভব? দিতে পারবেন ডেথ সার্টিফিকেট। তিনি বিজেপির বিভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।