ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীকে গত ১৬ জানুয়ারি হাত ধরে সমর্থন দিয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। একইসঙ্গে  উভয় সিটিতে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন সমর্থনে ৪টি পথসভা করার ঘোষণাও দেন তিনি। কিন্তু বিএনপির ‘সমন্বয়হীনতার’ কারণে এখন আর হচ্ছে পথসভাগুলো। দলটির এমন আচরণে মনক্ষুণ্ন হয়ে নির্বাচনি প্রচারেও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।  

জোটের নেতারা বলছেন, গত ১৬ জানুয়ারি ঐকফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীদের সমর্থনে ৪টি পথসভা করার সিদ্ধান্ত হয়। পথসভাগুলোয় ড. কামাল হোসেনের উপস্থিত থাকারও কথা ছিল। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পথসভার তারিখ চূড়ান্ত করে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের জানানোর কথা ছিল।’

কিন্তু বিএনপি নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে পথসভার তারিখ ঠিক করতে পারেনি। তাদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হন ড. কামাল হোসেন। এ কারণে দলটির প্রার্থীদের কোনও প্রচারে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে প্রার্থীদের সময় মেলানো যাচ্ছে না। সবাই ব্যস্ততার মধ্যে আছে। তাই ফ্রন্টের পথসভাগুলো আর হচ্ছে না। তবে, ফ্রন্টের নেতারা বিভিন্ন জায়গায় মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। যার যেখানে সম্ভব অংশ নিচ্ছেন।’

পথসভাগুলো না হওয়ার কারণে ড. কামাল হোসেনের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে নামা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনে তো এমনিতেই অসুস্থ। নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় সভা হলে গাড়িতে করে গিয়ে বক্তব্য দিয়ে আসতে পারতেন তিনি। তবে,  হেঁটে কোনও প্রচারণায় অংশ নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।’

কামাল হোসেন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির এক নেতা বলেন, বিএনপি ফ্রন্টকে নিয়ে এক ধরনের খেলায় মেতে উঠছে মনে হচ্ছে। তারা যদি পথসভা না-ই করতে চায়, তাহলে ওই বৈঠকে বলে দিতে পারতো। ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি পালন না করা আমাদের জন্য অপমানজনক।

এই নেতা আরও বলেন, ব্যক্তিগতভাবে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নির্বাচনি প্রচারণায় নামাও অপমানজনক। কারণ, ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হচ্ছেন কামাল হোসেন। প্রচারে নামলে তাকে নিয়েই নামা উচিত। তিনি নিজেও প্রচারে যেতে রাজি ছিলেন। তাকে বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রচারে যাওয়ার মানেই হচ্ছে কামাল হোসেনকে অপমান করা।

ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলছেন, বিএনপির অনুরোধেই এবং সিটি নির্বাচনের পরে আন্দোলনে যাওয়ার শর্তেই তাদের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিলাম। সমর্থন দেওয়ার কারণে প্রার্থীদের পক্ষে পথসভা করার সিদ্ধান্ত নেয় আমরা। এখন পথসভাগুলো না হওয়ার ফলে বিএনপিই  ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আসলে তারা যে সিটি নির্বাচন নিয়ে সিরিয়াস নয়, এটাই তার প্রমাণ। তারা আন্দোলন-সংগ্রাম করে নয়, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে জয় চায়। তবে, তাদের এমন আচরণে আমাদের জন্য শিক্ষা হচ্ছে—সামনের দিনগুলোতে বিএনপিকে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কয়েকবার ভাবতে হবে।

ফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি প্রয়োজন মনে করছে না, তাই সভাগুলো হচ্ছে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্রন্টের শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বিএনপি আসলে কী চায়, তাদের রাজনীতি কী, সেটা তারা নিজেরাও জানে বলে আমরা মনে হয় না। গত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে তারা একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন না করেই আবার পিছু হটে আসে। নির্বাচনের পরে এই সরকারের অধীনে আর কোনও নির্বাচনে অংশ না সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখান থেকে সরে এসে আবার অংশ নিচ্ছে। আবার নির্বাচনে অংশ নিলেও তা নিয়ে সিরিয়াসনেস নেই দলটির মধ্যে।’

জোটটির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে পথসভার তারিখ চূড়ান্ত করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি  নির্বাচন পরিচালনা কমিটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সময় দিলে পথসভা তারিখ ঠিক করা হবে।’  তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নির্বাচনি প্রচারে হামলাও চালানো হয়েছে।’ এছাড়া ড. কামাল হোসেনের পক্ষে রাস্তায় মিছিল নিয়ে প্রচারণা চালানো সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews