১৯ মিনিট আগে
ছবির উৎস, PID
ছবির ক্যাপশান,
মোহাম্মদ মুরাদ হাসান (সাম্প্রতিক চিত্র)
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে যেদিন পদত্যাগ করতে বললেন শেখ হাসিনা, সেদিন বাংলাদেশে দিনভর আলোচনায় ছিল একটি ফাঁস হওয়া টেলিফোন কথোপোকথন, যেটির এক প্রান্তে ছিলেন বাংলাদেশের চিত্রনায়ক মামুনুন হাসান ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। অপরপ্রান্তে ছিলেন মোহাম্মদ মুরাদ হাসান।
বিবিসিকে চিত্রনায়ক ইমন নিশ্চিত করেছেন ওই কথোপকথন তার টেলিফোনেই হয়েছে। মুরাদ হাসানই তাকে ফোন করেছিলেন।
সৌদি আরবে ওমরাহ পালনরত মাহিয়া মাহিও এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়ে ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করেছেন।
ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে মি. হাসানকে প্রকাশে অযোগ্য ভাষায় কথা বলতে শোনা গেছে। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি মিজ মাহিকে ধর্ষণের হুমকিও দেন বলে অডিওতে শোনা যায়।
মি. ইমন বিবিসিকে বলেছেন, টেলিফোন আলাপের এই ঘটনাটি ঘটেছে ২০২০ সালের মার্চ মাসে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একজন প্রতিমন্ত্রী এই দুজন চিত্রতারকাকে টেলিফোন করে ধর্ষণের হুমকিসহ অশ্রাব্য সব কথাবার্তা বলবার পরও প্রায় দুই বছর কেন চেপে রেখেছিলেন তারা? কেন তারা প্রকাশ করেননি, কোথাও কোন অভিযোগ করেননি?
জানতে চাইলে মি. ইমন বিবিসিকে বলেন, "এটা এমন কোন ঘটনা ছিল না"।
মাহিয়া মাহি বিদেশে অবস্থান করার কারণে এ নিয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে সোমবার রাতে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে মিজ মাহি বলেছেন, "আমার কোনো দোষ ছিল না, আমি একটা পরিস্থিতির শিকার ছিলাম।"
ছবির ক্যাপশান,
চিত্রনায়ক মামুনুন হাসান ইমন
সোমবার অডিও ফাঁস হওয়ার পর চিত্রনায়ক ইমনই বিভিন্ন গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে টেলিফোন আলাপের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
মামুনুন হাসান ইমন বিবিসিকে বলেন, "দেখুন এটা এমন কোন ঘটনা ঘটেনি, আমাকে একজন ফোন দিল - এই কথা বল, তুই কোথায়? কাল ফোন ধরিসনি কেন? আচ্ছা মাহিকে ফোনটা দে। এখন এইটার জন্য তো আমার ইয়ে হবার কথা না।"
তিনি বলছেন, "কিন্তু অপজিট সাইডে উনি মাহির সঙ্গে যেভাবে কথা বলছেন, যে টোনে কথা বলেছেন...এখন ফোনে লাউড স্পিকারে কথা না বললে আমার পাশেরজনের সাথে কী কথা হচ্ছে সেটা তো আমি জানবো না, তাই না"।
"মাহির কথাগুলো আমি শুনেছি অডিও ফাঁস হবার পর। তার আগে আমি তো জানতাম না তার সঙ্গে মাহির কী কথা হয়েছে। মাহিও আমাকে বলেনি।"
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা কোন সম্পর্ক নেই দাবি করে মি. ইমন বলেছেন, "উনি এই অঙ্গনের মন্ত্রী (প্রতিমন্ত্রী) উনি। সবার সঙ্গেই উনার ভালো সম্পর্ক, সবাইকে উনি তুই করে বলেন। একটা অধিকার নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেন উনি (প্রতিমন্ত্রী)। সব শিল্পীর সাথেই তার একটা ভালো সম্পর্ক, আমার সাথেও সে রকম।"
ঘটনার দিনের কথোপকথন সম্পর্কে তিনি বলছেন, "আমিও সেভাবে কথা বলি উনার সাথে। এখন গালিগালাজ সম্পর্কে তো আমি জানি না। আপনি অডিওটা শুনলেই বুঝতে পারবেন সেদিন আমি কেবল পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।"
ফাঁস হওয়া কথোপকথন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সৌদি আরব থেকে সোমবার রাতেই একটি ভিডিওবার্তা রেকর্ড করে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করেন মিজ মাহি।
বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার পরে ফেসবুকে পোষ্ট করা ওই ভিডিওর শিরোনামে তিনি লিখেছেন, "বিকৃত এবং কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার ও ভাষার প্রত্যুত্তরের ভাষা আমার জানা ছিল না।"
দুই মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে তিনি বলেন, "আমি সেদিনও বলেছিলাম। আমার বিকৃত এবং কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার ও ভাষার প্রত্যুত্তরের ভাষা আমার জানা ছিল না। দুই বছর আগের ঘটনা। তখন আমি শুধু আল্লাহর কাছে বলেছিলাম।"
ফাঁস হওয়া অডিওর ব্যাপারে কথা বলার জন্য মুরাদ হাসানের সাথে সোমবার থেকে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এর আগে তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের উদ্দেশ্যে অশালীন ও বর্ণবাদী মন্তব্য করার ব্যাপারে বিবিসির কাছে বক্তব্য দিয়েছিলেন মি. হাসান, যেখানে তিনি বলেছিলেন তিনি কোন 'ভুল' করেননি এবং বক্তব্য প্রত্যাহারের কোন "প্রশ্নই ওঠে না"।
এদিকে সোমবারই মি. ইমন ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানাচ্ছে।
বিবিসিকে মি. ইমন বলেছেন, তিনি নিজে থেকেই ডিবি অফিসে গিয়েছিলেন উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য।
"সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি আলোচনা করলাম হারুন (গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার) ভাইয়ের সঙ্গে। তারা আমাকে বলেছেন চিন্তার কিছু নেই", বিবিসিকে বলেন মি. ইমন।
তবে তিনি কোন "ভীতির মধ্যে নেই কিংবা তার ওপর কোন ধরণের চাপ নেই" বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিবিসিকে মি. ইমন বলেছেন, "ফাঁস হওয়া অডিও নিয়ে আমি নিজে থেকে কথা বলেছি, ভয়েস রেইজ করেছি। কিন্তু আমাকে নিয়েই এখন কথা হচ্ছে"।
"আমি তো এখানে কিছু করিনি। কিন্তু দেখেন আমার একটা পরিবার আছে, ক্যারিয়ার আছে। সেসব জায়গায় আমার ইমেজটা কেমন হচ্ছে ভাবুন একবার!"