আজ থেকে গণপরিবহনকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক সংখ্যক আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সব ধরনের পাবলিক বাস, ট্রেন ও লঞ্চকে একটি আসন খালি রেখে চলাচল করতে হবে। বাস ও ট্রেনে নির্ধারিত আসন থাকে। পাশের আসনটি খালি রেখে এসব পরিবহন চলতে পারবে। বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব হবে সে বিতর্ক আগের বিধিনিষেধের সময় ছিল, এখনও আছে।

যারা কখনও লঞ্চে যাতায়াত করেননি, তাদের কাছে নৌপথে বাড়ি ফেরার বিষয়টি পরিস্কার নাও হতে পারে। কারণ বেশিরভাগ লঞ্চে ডেকে কোনো নির্ধারিত চেয়ার বা আসন থাকে না। ডেক মানে লঞ্চে বিশাল খোলা স্থান। সাধারণত লঞ্চের নিচতলার পুরো অংশ (পেছনে ইঞ্জিন রুম বাদে), দ্বিতীয় তলায় বড় একটি অংশ এবং কোনো কোনো লঞ্চে তৃতীয় তলার একটি খোলা অংশে ডেক থাকে। ডেকে নির্দিষ্ট আসন নেই। এখানে বিছানা করে যাত্রীরা শুয়ে গন্তব্যে যাতায়াত করেন। বেশিরভাগ সময় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে না গেলে দ্বিতীয় তলার ডেকে জায়গা পাওয়া যায় না। আর এক ঘণ্টা আগে না গেলে নিচতলা বা তৃতীয় তলার ডেকেও বিছানা পাতার সুযোগ হয় না। তখন এসব যাত্রী লঞ্চের ছাদে বা দু'পাশে দাঁড়িয়ে থেকে গন্তব্যে পাড়ি দেন। যদিও তাদের ডেকের সমপরিমাণ ভাড়াই গুনতে হয়। ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্য সংবাদমাধ্যমে উঠে এলেও দক্ষিণাঞ্চলে নিয়মিত যাতায়াতকারী সব যাত্রীই জানেন, সারাবছর কী ভোগান্তি পোহাতে হয়।

ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলো তুলনামূলক বিলাসবহুল ও অধিক যাত্রী বহন করতে সক্ষম। ঢাকা থেকে ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালীর হাতিয়া রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলো তুলনামূলক ছোট। তবে এসব লঞ্চ কেবিনের তুলনায় ডেকে বেশি যাত্রী পরিবহনে সক্ষম। আর বরিশালের লঞ্চগুলো খুবই আধুনিক। এসব লঞ্চে মেডিকেল, সেলুন থেকে শুরু করে নানা সুবিধা চালু আছে। এখানে ডেকের মতোই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন অনেক যাত্রী ধারণ করতে পারে। আছে ভিআইপি ও ভিভিআইপি কেবিন।

ইলিশের মৌসুমে লঞ্চের নিচতলায় একটি বড় অংশ মাছের ঝুড়িতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকে। আবার ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার সময় মুন্সীগঞ্জ থেকে প্রচুর পরিমাণে আলু ওঠে লঞ্চের নিচতলা ও আন্ডারগ্রাউন্ডে। ফলে যাত্রীদের ডেকে আসন সংকট তৈরি হয়। ছাদে যাত্রী পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হলেও প্রতিদিন সদরঘাটে গেলে দেখা যাবে প্রায় সব লঞ্চের ছাদই যাত্রীতে ভরপুর।

এ অবস্থায় লঞ্চ কীভাবে আসন খালি রেখে বা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে চলাচল করবে, তা বোধগম্য হচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় বাস ও ট্রেনের মতো পর্যাপ্ত নৌযান নেই। আর এ কারণেই নির্দিষ্ট দিনে গন্তব্যে পৌঁছার লক্ষ্য নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে নৌযানে চড়তে হয়। যেহেতু লঞ্চে আসনের কোনো বিষয় নেই, সেহেতু আগের মতোই যাত্রী চলাচল করবেন। তবে কেবিনের বিষয়টি আলাদা। লঞ্চে সাধারণত ডাবল ও সিঙ্গেল কেবিন থাকে। সিঙ্গেল কেবিনে অনেক সময় দেখা যায় দু'জনকে যাত্রী হতে (একজনকে ডেকের টিকিট কাটতে হয়)। এখানে বলা যেতে পারে, কোনো সিঙ্গেল কেবিনে একজনের বেশি থাকতে পারবেন না। আর ডাবল কেবিন মানে হলো এক রুমে দুটি শয্যা। এখানে বলা যেতে পারে, একটি শয্যা খালি থাকবে অর্থাৎ এক রুমে একজনই যাত্রী হতে পারবেন। স্বামী-স্ত্রী ডাবল কেবিনে যেতে চাইলে তাদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারে। হয়তো কেবিনে সেটা সিঙ্গেল বা ডাবল যাই হোক, সামাজিক দূরত্ব মানানো যেতে পারে। কিন্তু যারা লঞ্চের কাঠামো বোঝেন তারা সবাই নির্দি্বধায় স্বীকার করে নেবেন, নৌপথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল সম্ভব হবে না। কারণ লঞ্চে মোট যাত্রীর ৮০ শতাংশ ডেকে যাতায়াত করে। তাহলে ২০ শতাংশ কেবিন যাত্রীর সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সুফল আসবে বলে মনে করি না।

সামাজিক দূরত্বের অজুহাতে কোনোভাবেই লঞ্চে আর ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না। সম্প্রতি ডিজেলের দাম বাড়ার পর ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে ২৫০ টাকার ডেকের ভাড়া এখন ৩৫০ টাকা। লিটারে ১৫ টাকা ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে মাথাপিছু ভাড়া বাড়ানো হলো ১০০ টাকা। প্রশ্ন আসে- কত লিটার তেল পুড়িয়ে বুড়িগঙ্গা থেকে কীর্তনখোলা যায় এসব লঞ্চ। দেড় হাজারের বেশি যাত্রী নিয়ে এসব লঞ্চ যে চলাচল করে, তা কর্তৃপক্ষ স্বীকার না করলেও সাধারণ মানুষ জানে।

এখানে বলে রাখা দরকার, ঢাকা-চাঁদপুরের বেশিরভাগ লঞ্চ দিনে চলাচল করে এবং এসব নৌযান মূলত আসননির্ভর। অর্থাৎ বাসের মতো আসনে বসে এসব লঞ্চে যাতায়াত করা যায়। যদিও এ রুটের অনেক লঞ্চে ডেক আছে, আর কেবিন তো আছেই। সম্প্রতি ঢাকা-ইলিশা (ভোলা) রুটে ৩-৪টি লঞ্চ চালু করা হয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণ চেয়ারকোচ এবং দিনে চলে। অনুরূপভাবে ঢাকা-বরিশাল এবং ঢাকা-ইলিশা রুটে আলাদা দুটি ওয়াটার ওয়েজ (গ্রিনলাইন নামে ব্যাপক পরিচিত) চালু হয়েছে। এগুলোও চেয়ারকোচ এবং দিনে চলে। ভাড়া একটু বেশি। তার ওপর ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এসব নৌযানকে বাধ্য করা যেতে পারে এক আসন খালি রেখে চলতে। কিন্তু এ পরিবহনের টিকিট যেখানে সোনার হরিণ, সেখানে অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলতে বললে আরও বিকল্প নৌযানের ব্যবস্থা করতে হবে।

মিজান শাজাহান: সাংবাদিক
mizanshajahan@gmail.com



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews