বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। দেশের আবহাওয়া, পরিবেশ, নদীভাঙন, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে সরকার অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে আসলে অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘অ্যাভার্ট অ্যান্ড ডিপ্লেসমেন্ট’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এ সব কথা বলেন।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিব্বুর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন অভিবাসন ও উন্নয়নবিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য তানভীর শাকিল জয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে সচিব কামরুল হাসান ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন ইন বাংলাদেশের চিফ অব মিশন আব্দুসাত্তার এসকোভ।
এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিক্সের চেয়ারম্যান ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সভাপতি অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও রামরুর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, জলবায়ু আবহাওয়া ও পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার অনেক চেষ্টা করছে। তবে কোনটা আগে, কোনটা পরে করব, অগ্রাধিকার কীসে দেব সেটা করা হচ্ছে না। বাস্তুচ্যুতির পিছনে অনেক গুরুত্ব দেওয়ার দরকার ছিল। সেটা আমরা সেভাবে দেইনি। আসলে অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে। যারা বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষতির পিছনে দায়ী, তারা অতি সামান্য আর্থিক সহায়তা দেন। ফলে নিজেদেরই কাজ করে যেতে হবে।
সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনি কাজ করছেন জানিয়ে বলেন, আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক দেশের তুলনায় আমাদের নাগরিকদের পক্ষ থেকে অনেক বেশি ভূমিকা জলবায়ু ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা দেখছি। আমরা পুরো পরিবর্তন করতে পারব না। তবে কিছুটা মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারব, সেটা করতে হবে। তবে যেটা আমি দেখি না, তা হলো স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা। যাদের সমস্যা, তাদেরকে যুক্ত না করে শীর্ষস্থানে বসে গুটিকয়েক ব্যক্তি প্রান্তিক এলাকার জন্য পরিকল্পনা করেন ফলে এতে সেই অঞ্চলের জনগণ উপকৃত হন না।
তিনি আরও বলেন, 'অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্র, ২০২১- এ ভুক্তভোগীদের অংশগ্রহণের কথা থাকলেও এটা তেমন দেখা যায় না। আমরা মানুষকে পাত্তাই দেই না। আমরা চেষ্টাও করি না সবাইকে যুক্ত করার। সবাই নিজের মত করে কাজ করে। মূলত যাদের সমস্যা তাদেরকে পরিবর্তনের বিভিন্ন কাজে-প্রকল্পে যুক্ত করতে হবে।
সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের আচরণ ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়েছে। দুবাইয়ে বৃষ্টিতে বন্যা হয়ে গেছে। অথচ সুজলা-সুফলা বাংলাদেশে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এখানে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগও রয়েছে, এরকারণে প্রতিবছর বাস্তুচ্যুতি ঘটে। এই বাস্তুহারা মানুষ পরবর্তী যেখানেই বসবাস করুক, তাদেরকে বাস্তুচ্যুত হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। তাদের এই পরিচয় সংকট কাটে না। তাই বাস্তুচ্যুতি যেন না ঘটে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু বড় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে এর সমাধান খুঁজলে হবে না। প্রত্যেক স্থানের সমস্যা আলাদাভাবে চিহ্নিত করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে তাদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সমাধান খুঁজতে হবে।