মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের প্রভাবিত করার কৌশল নিয়ে গত গ্রীষ্মে আলোচনা করেছিলেন রাশিয়ার গোয়েন্দা ও রাজনৈতিক কর্মকর্তারা। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে তথ্য রয়েছে। এই গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনজন বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রুশ কূটনৈতিক ও কর্মকর্তাদের ফোনে নিয়মিত আড়ি পাতেন মার্কিন গোয়েন্দারা। এমন আড়িপাতায় রুশ কর্মকর্তাদের এ আলোচনা শুনতে পেয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা।

রুশ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয় মূলত ওই সময় ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা শিবিরের দায়িত্বে থাকা পল মানাফোর্ট এবং উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মাইকেল ফ্লিনের। এই দু’জনের  সঙ্গে রুশ কর্মকর্তাদের পরোক্ষ যোগাযোগ ছিল। ট্রাম্পের রাশিয়া সম্পর্কিত মনোভাবকে গড়ে তুলতে এই দু’জনকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে রুশ কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।

কয়েকজন রুশ কর্মকর্তা মাইকেল ফ্লিনকে খুব ভালোভাবে জানার জন্য গর্ব করেন। অন্যরা রাশিয়ায় নির্বাসিত ইউক্রেনের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর এফ. ইয়ানুকোভিচের সঙ্গে ট্রাম্প শিবিরের কর্মকর্তাদের সম্পর্কের ফায়দা তুলতে আলোচনা করেন। এক সময় মানাফর্ট ঘনিষ্ঠভাবে ইয়ানুকোভিচের সঙ্গে কাজ করেছিলেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি যোগাযোগের যেসব প্রমাণ গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে, এই আলোচনা সেগুলোর মধ্যে একটি। এসব তথ্যের ভিত্তিতে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এবং ট্রাম্প শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করা হয়। রুশ কর্মকর্তাদের এই আলোচনার বিস্তারিত এর আগে জানানো হয়নি।

অবশ্য এটা এখনও স্পষ্ট হয়নি যে, রুশ কর্মকর্তারা সরাসরি মানাফোর্ট ও ফ্লিনকে প্রভাবিত করার জন্য সত্যি সত্যি চেষ্টা করেছিলেন কিনা। এই দু’জন রাশিয়ার সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস, এফবিআই ও সিআইএ মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মানাফোর্টের মুখপাত্রও কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। মাইকেল ফ্লিনের আইনজীবীর কাছে মন্তব্য চেয়ে পাঠানো ইমেইলের জবাব পায়নি নিউ ইয়র্ক টাইমস।

সোমবার (২২ মে) যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ তদন্তে সাক্ষ্য দিতে মার্কিন সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির সমন প্রত্যাখ্যান করেছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন। এর মধ্য নিয়ে তদন্তে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ ও রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের সংযোগের বিষয়ে কংগ্রেসনাল তদন্ত করছে। কমিটির পক্ষ থেকে ২৮ এপ্রিল একটি চিঠির মাধ্যমে কয়েকটি নথি চাওয়া হয়। তখন কমিটির অনুরোধে সহযোগিতা করছে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন ফ্লিন।

নির্বাচনি প্রচারণার সময় থেকেই রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি আলোচিত হয়ে আসছে।

সর্বশেষ, এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে বরখাস্তের পর তা নতুন করে মাথা চাড়া দেয়। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাম্প এফবিআই প্রধানকে বলেছিলেন বহিষ্কৃত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করতে। হোয়াইট হাউসের দাবি, কোমিকে তদন্তের বিষয়ে কোনও চাপ দেননি ট্রাম্প। তবে এসব ঘটনায় রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের সংযোগের বিষয়টি আরও জোরালো হয়ে উঠছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথোপকথনের জের ধরে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব অবহেলার অজুহাত দেখিয়ে ফ্লিনকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এরপর থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তদন্তে নামে এফবিআই ও সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি।

ফ্লিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওবামা আমলে রাশিয়ার ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা সরানোর বিষয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তিনি ট্রাম্পের দায়িত্বগ্রহণের আগেই আলোচনা করেছিলেন। ফ্লিন তা করে থাকলে তবে তা হবে আইনের লঙ্ঘন। কারণ আইন অনুযায়ী, বেসরকারি নাগরিকদের পররাষ্ট্র নীতিমালাসংক্রান্ত কাজে জড়িত হওয়া নিষিদ্ধ।

পদত্যাগপত্রে ফ্লিন বলেছিলেন, তিনি অসাবধানতাবশত তৎকালীন নির্বাচিত ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে আংশিকভাবে রুশ রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে তার কথোপকথন সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স।

/এএ/এমএনএইচ/



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews