সর্বপ্রাণবাদ একটি প্রাচীন বিশ্বাস ও ব্যবস্থা, যেখানে কেবল মানুষ নয়, বরং অন্যান্য প্রাণী তো বটেই, উদ্ভিদ, জড় বস্তু এবং প্রাকৃতিক ঘটনা—যেমন পাহাড়, নদী, বাতাস—সবকিছুর মধ্যেই আত্মা বা প্রাণ বিদ্যমান বলে মনে করা হয়। এই বিশ্বাস মানব সভ্যতার আদিমতম ধর্মীয় ও দার্শনিক ভিত্তিগুলোর অন্যতম, যা প্রকৃতি এবং অস্তিত্বকে দেখার এক ভিন্ন মাত্রা উন্মোচন করে।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে জটিলতার বিজ্ঞানের (কমপ্লেক্সিটি সাইন্স) আলোকে, এই আদিম বিশ্বাস এবং এর অন্তর্নিহিত ধারণাগুলো নতুনভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
সর্বপ্রাণবাদে প্রকৃতি এবং এর সকল সদস্যকে একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়। মানুষ এখানে প্রকৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, কোনো বিচ্ছিন্ন সত্তা নয়; বরং, গাছপালা, প্রাণী, নদী, পাহাড়, এমনকি আবহাওয়াও মানুষের মতোই আত্মার অধিকারী এবং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখা অপরিহার্য। এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়শই প্রকৃতির সঙ্গে এক ধরনের আত্মীয়তার সম্পর্ককে নির্দেশ করে, যেখানে মানুষ এবং অ-মানব সত্তারা একটি বৃহত্তর, সংযুক্ত পরিবারের সদস্য। উদাহরণস্বরূপ, বহু সর্বপ্রাণবাদী সমাজে শিকারের আগে প্রাণীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয় বা ফসল তোলার আগে ভূমিকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
এই সব কৃত্য নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এই গভীর উপলব্ধির প্রকাশ যে প্রকৃতি কেবল একটি নিষ্ক্রিয় সম্পদ নয় যা শোষণ করা হবে, বরং একটি জীবন্ত সত্তা যার সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আদান-প্রদানের সম্পর্ক থাকতে হবে।
নৃবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড বার্নেট টাইলর তার ১৮৭১ সালের গ্রন্থ ‘প্রিমিটিভ কালচার’-এ সর্বপ্রাণবাদকে আদিম ধর্মের প্রথম পর্যায় হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে তিনি ‘আত্মার মতবাদ’ (ডকট্রিন অফ সোলস) এর কেন্দ্রীয় ভূমিকার ওপর জোর দেন।
সর্বপ্রাণবাদে অস্তিত্ব কেবল একক সত্তার দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং এটি পারস্পরিক সম্পর্কের (রিলেশনালিটি) মধ্য দিয়ে উদ্ভূত হয়, যাকে ‘সহ-সৃষ্টি’ বা ‘একত্রে বিদ্যমান হওয়া’ (কো-বিকামিং) বলা যেতে পারে। এর অর্থ হলো, কোনো সত্তা একা একা সম্পূর্ণ অস্তিত্ব লাভ করে না, বরং অন্যদের সঙ্গে তার মিথস্ক্রিয়া এবং সম্পর্কের মাধ্যমে তার পরিচয় এবং বাস্তবতা নির্মিত হয়। এই ধারণাটি প্রকৃতিতে গভীরভাবে পরিলক্ষিত হয়, যেখানে একটি বাস্তুতন্ত্রের প্রতিটি উপাদান একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, একটি গাছের অস্তিত্ব মাটির পুষ্টি, সূর্যের আলো, পানির প্রাপ্যতা এবং পরাগায়ণকারীদের ওপর নির্ভরশীল; একইভাবে, একটি শিকারী প্রাণীর অস্তিত্ব তার শিকারের ওপর নির্ভরশীল, এবং শিকারের অস্তিত্ব শিকারী প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল।
এই গভীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা কেবল ভৌত নয়, আধ্যাত্মিকও; যখন একজন শিকারী একটি প্রাণীকে শিকার করে, তখন সেটি কেবল মাংস বা চামড়া সংগ্রহ নয়, বরং একটি আত্মার সঙ্গে একটি সম্পর্ক স্থাপন। এই সম্পর্কের মাধ্যমে উভয় সত্তার অস্তিত্ব নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হয়। প্রতিটি মিথস্ক্রিয়া, প্রতিটি আদান-প্রদান, সত্তাগুলোর পরিচয় এবং অভিজ্ঞতাকে নতুনভাবে আকার দেয়, যার ফলে একটি চলমান সহ-সৃষ্টি প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
নৃবিজ্ঞানী এডুয়ার্ডো ভিভেইরোস দে কাস্ত্রো তার ‘ক্যানিবাল মেটাফিজিক্স’ গ্রন্থে আদিবাসী জ্ঞানতত্ত্ব ও সত্তাতত্ত্বের ওপর জোর দিয়েছেন, যেখানে বিষয় এবং বস্তুর প্রচলিত পশ্চিমা বিভেদ ভেঙে যায় এবং সম্পর্কই অস্তিত্বের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
ইমারজেন্ট বিহেভিয়ার বা উদ্ভূত আচরণ হলো জটিল সিস্টেমের একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য, যেখানে সিস্টেমের পৃথক উপাদানগুলোর সরল মিথস্ক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ নতুন, অপ্রত্যাশিত এবং জটিল আচরণ বা প্যাটার্ন তৈরি হয়। এই আচরণগুলো সাধারণত পৃথক উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য থেকে সরাসরি অনুমান করা যায় না; বরং, এটি উপাদানগুলোর মধ্যেকার গভীর পারস্পরিক সম্পর্ক (ইন্টের্যাকশন) এবং সংযোগের (কানেকশন্স) ফলস্বরূপ উদ্ভূত হয়। এই ঘটনাটি প্রকৃতির বহু ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়—যেমন একটি পিঁপড়ার কলোনির সুসংগঠিত কার্যক্রম, যেখানে প্রতিটি পিঁপড়ার সরল নিয়ম মেনে চলা থেকে পুরো কলোনির জটিল সামাজিক কাঠামো গড়ে ওঠে।
ডেবোরাহ এম. গর্ডনের ‘এন্টস অ্যাট ওয়ার্ক: হাউ অ্যান ইনসেক্ট সোসাইটি ইজ অরগানাইজড’ বইটি পিঁপড়ার কলোনির এই উদ্ভূত আচরণের চমৎকার উদাহরণ তুলে ধরে। একইভাবে, আকাশে পাখির ঝাঁকের (ফ্লকিং) সম্মিলিত উড়াল, যেখানে প্রতিটি পাখি কেবল তার নিকটতম প্রতিবেশীর গতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়, সেখান থেকেই এক অভূতপূর্ব সমন্বিত প্যাটার্ন তৈরি হয়।
ক্রেইগ ডব্লিউ. রেনল্ডস ১৯৮৭ সালে তার ‘ফ্লকস, হার্ডস অ্যান্ড স্কুলস: এ ডিস্ট্রিবিউটেড বিহেভিওরাল মডেল’ শীর্ষক গবেষণায় এই পাখির ঝাঁকের গাণিতিক মডেলিংয়ের মাধ্যমে দেখিয়েছেন কিভাবে সরল স্থানীয় নিয়ম থেকে জটিল বৈশ্বিক আচরণ তৈরি হয়।
জটিলতা বিশ্লেষণে (কমপ্লেক্সিটি এনালাইসিস), উদ্ভূত আচরণকে সিস্টেমের উপাদানগুলোর মধ্যেকার অ-রৈখিক (নন-লিনিয়ার) পারস্পরিক সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হিসেবে দেখা হয়, যেখানে কার্যকারণ সম্পর্ক সরল এবং অনুমানযোগ্য হয় না। প্রতিটি উপাদানের আচরণ অন্যান্য উপাদানের আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং একই সঙ্গে এটি অন্যদের আচরণকেও প্রভাবিত করে, যার ফলে প্রতিক্রিয়া চক্র (ফিডব্যাক লুপ) তৈরি হয় এবং সিস্টেমের মধ্যে নতুন নতুন প্যাটার্ন ও আচরণ উদ্ভূত হয়। এই বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, উদ্ভূত আচরণ তৈরি হয় যখন উপাদানগুলোর মধ্যে নিবিড় মিথস্ক্রিয়া ঘটে, প্রতিটি উপাদান তুলনামূলকভাবে সরল নিয়ম মেনে চলে, এবং তারা তাদের নিকটবর্তী উপাদানগুলোর সঙ্গে স্থানীয়ভাবে যোগাযোগ করে। এই প্রক্রিয়াতে কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকে না; বরং, আচরণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপাদানগুলোর স্থানীয় মিথস্ক্রিয়া থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্ভূত হয়। উদাহরণস্বরূপ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়, লক্ষ লক্ষ ক্রেতা-বিক্রেতার পৃথক সিদ্ধান্ত এবং তাদের মধ্যকার স্থানীয় মিথস্ক্রিয়া থেকে বাজারের চাহিদা-যোগানের মতো উদ্ভূত আচরণ তৈরি হয়, যা কোনো একক সত্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।
অর্থনীতিবিদ ডব্লিউ. ব্রায়ান আর্থার ১৯৯৯ সালে সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘কমপ্লেক্সিটি অ্যান্ড দ্য ইকোনমি’ প্রবন্ধে দেখিয়েছেন কিভাবে অর্থনীতিতে এই জটিল উদ্ভূত আচরণ কাজ করে।
জটিল সিস্টেমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ‘শুরুর দিকের অবস্থার প্রতি সংবেদনশীল নির্ভরশীলতা’ (সেন্সিটিভ ডিপেন্ডেন্স অন ইনিশিয়াল কন্ডিশন্স), যা জনপ্রিয়ভাবে প্রজাপতি ইফেক্ট নামে পরিচিত। এই ধারণাটি ব্যাখ্যা করে যে, একটি জটিল সিস্টেমের প্রাথমিক অবস্থায় বা উপাদানগুলোর মধ্যকার সম্পর্কে সামান্যতম পরিবর্তনও দীর্ঘমেয়াদে সামগ্রিক পরিবেশে বা সিস্টেমের আচরণে বিরাট এবং অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন আনতে পারে।
এই ঘটনাটি অ-রৈখিক গতিশীলতা (নন-লিনিয়ার ডিনামিক্স) এবং বিশৃঙ্খলা তত্ত্বের (কেওস থিওরি) একটি মৌলিক ধারণা, যার প্রবক্তা ছিলেন আবহাওয়াবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড লরেঞ্জ। তিনি তার আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেল নিয়ে কাজ করার সময় লক্ষ্য করেন যে, ইনপুট ডেটাতে সামান্যতম দশমিকের পরিবর্তনও দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে সম্পূর্ণ ভিন্ন ফলাফল নিয়ে আসে। এই পর্যবেক্ষণ থেকেই ‘ব্রাজিলে একটি প্রজাপতির ডানা ঝাপটানো টেক্সাসে একটি টর্নেডো সৃষ্টি করতে পারে’ এই বিখ্যাত উক্তিটি প্রচলিত হয়।
সর্বপ্রাণবাদ এবং জটিলতা বিজ্ঞানের মধ্যে একটি গভীর সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায় যখন আমরা প্রজাপতি ইফেক্টকে আদিবাসী বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির আলোকে দেখি। সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাস করা হয় যে প্রতিটি সত্তা, তা সে প্রাণী হোক, উদ্ভিদ হোক বা একটি পাথর হোক, তার নিজস্ব শক্তি ও উদ্দেশ্য আছে এবং সবকিছুই একে অপরের সঙ্গে সূক্ষ্মভাবে সংযুক্ত। এই প্রেক্ষাপটে, প্রকৃতির কোনো একটি উপাদানের প্রতি অসম্মানজনক বা নেতিবাচক আচরণ কেবল সেই নির্দিষ্ট সত্তাকেই প্রভাবিত করে না, বরং এর সূক্ষ্ম প্রভাব পুরো বাস্তুতন্ত্রের ওপর ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো আদিবাসী সম্প্রদায় মনে করে যে একটি নির্দিষ্ট নদীর একটি আত্মা আছে এবং সেই আত্মার প্রতি অবহেলা করা হয় (যেমন দূষণের মাধ্যমে), তবে এর পরিণতি কেবল নদীর জলের দূষণেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এটি মাছের সংখ্যায় পরিবর্তন আনতে পারে, যা স্থানীয় পাখির প্রজাতিকে প্রভাবিত করে, এবং অবশেষে পুরো খাদ্য শৃঙ্খলকে ব্যাহত করে। এই ছোট পরিবর্তন, যা প্রথমে বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করতে পারে, যা কার্যত প্রজাপতি ইফেক্টের একটি প্রাণবন্ত উদাহরণ।
সর্বপ্রাণবাদী সমাজগুলোতে প্রায়শই দেখা যায় যে তারা প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে এবং তাদের প্রতিটি কাজে পরিবেশের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করে। এটি কেবল নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, বরং জটিল সিস্টেমের অন্তর্নিহিত প্রকৃতি সম্পর্কে তাদের গভীর স্বজ্ঞাত উপলব্ধিরই প্রতিফলন—যেখানে ছোট একটি পরিবর্তন সামগ্রিক ব্যবস্থায় বিরাট ঢেউ তুলতে পারে। এই বিশ্বাসগুলো তাদের পরিবেশগত চর্চা এবং সংরক্ষণ প্রচেষ্টার ভিত্তি তৈরি করে, যা জটিলতা বিজ্ঞানের অনেক উপলব্ধির সঙ্গে মিলে যায়।
আর এই তথ্যগুলো তারা খুব সহজেই ধরে রাখে তাদের মৌখিক ইতিহাস (ওরাল হিস্টোরি) এর মাধ্যমে। স্টিফেন ল্যান্সিং ১৯৯১ সালে তার ‘প্রিস্টস অ্যান্ড প্রোগ্রামার্স: টেকনোলজি, ওয়েটল্যান্ডস, অ্যান্ড ট্রাফিক লাইটস ইন বালি’ নামের নৃতাত্ত্বিক গবেষণাটিতে দেখিয়েছিলেন যে বালির ঐতিহ্যবাহী ধান চাষের সেচ ব্যবস্থা (সুবাক) কেবল একটি প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি একটি স্ব-সংগঠিত, জটিল বাস্তুতন্ত্র, যা পুরোহিতদের তত্ত্বাবধানে থাকা একটি জটিল ক্যালেন্ডার (পাউকন ক্যালেন্ডার) দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ক্যালেন্ডার সেচের সময়সূচি নির্ধারণ করে, যা পানির সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করে এবং কীট-পতঙ্গের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করে। ল্যান্সিং দেখান যে, আধুনিক কম্পিউটার মডেলিংয়ের চেয়েও এই ঐতিহ্যবাহী ব্যবস্থা প্রকৃতির জটিলতা মোকাবিলায় বেশি কার্যকর।
আমাদের দেশে এবং পুরো উপমহাদেশজুড়ে এরকম গভীর প্রাকৃতিক জ্ঞানের প্রচুর মৌখিক ভাণ্ডার ছড়িয়ে আছে। যেমন, শরৎচন্দ্র রায় তার ১৯৩১ সালের গবেষণায় দেখান যে ওঁরাও সম্প্রদায়ের মধ্যে কুড়ুখ ভাষা বা সংস্কৃতির এমন গভীর বর্ণনাশালী ক্যালেন্ডার আছে। এই বর্ণনাগুলো খুব সহজ কিছু মৌখিক চিহ্নের মাঝে প্রকাশ হয়, যেমন ‘ধার্মেস খাতরা’। এই অভিব্যক্তির শব্দার্থ হল, ‘সূর্যের/ধর্মের রক্তপাত হচ্ছে’। কিন্তু এই রক্তপাত বছরের সময় বা ঋতু, বৃষ্টি, আর্দ্রতা, ঝড়, শীত, খরা ইত্যাদি দুর্যোগ ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য দিত। কখন এই ঘটনা, অর্থাৎ সূর্যের চারপাশে গাঢ় লাল বা ক্রিমসন রংয়ের প্রতিফলন ঘটে এমনভাবে যে তাকে রক্তপাতের মত মনে হয়, তার ওপর নির্ভর করে কৃষি ও সামাজিক অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত ওঁরাওরা।
কিন্তু এখন যখন আমি ওঁরওদের ওই ক্যালেন্ডার নিয়ে গবেষণা করছি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, শরৎচন্দ্র রায়ের সেই গবেষণা ব্যতীত খুব একটা কাজ খুঁজে পাচ্ছি না। এই ধরনের ক্যালেন্ডারগুলোর সংরক্ষণ ভীষণ জরুরি। এর মধ্যে দিয়ে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ুকে এমনভাবে বোঝা সম্ভব, যা জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে ভবিষ্যতে দিকনির্দেশনা এমনকি অনুমান পর্যন্ত করতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে তাই আমি এই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এরকম প্রচুর গবেষণা বাংলাদেশে এবং সারা উপমহাদেশে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া উচিত, যাতে আমরা এই প্রযুক্তিগুলোকে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগীভাবে ব্যবহার করতে পারি।