কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খতাইয়া দেখুন

ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদিগের সহায়তায় ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কভিড-১৯ টিকার কারণে গুরুতর অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটিবার যে অভিযোগ উঠিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বিশেষত ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফকে উদ্ধৃত করিয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, খোদ অ্যাস্ট্রাজেনেকা যখন গত ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ আদালতে জমা দেওয়া একটি নথিতে স্বীকার করিয়াছে– উহার টিকার কারণে অত্যন্ত বিরল প্রকৃতির থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম-টিটিএসের ঘটনা ঘটিতে পারে, তখন বিষয়কে হালকাভাবে গ্রহণের অবকাশ নাই। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র-সিডিসির মতে, টিটিএসের ফলে রোগীর দেহে রক্ত জমাট বাঁধায় সাহায্যকারী প্লাটিলেট হ্রাস পায়। ফলস্বরূপ মস্তিষ্ক বা অন্ত্রে, কখনও কখনও পা বা ফুসফুসেও রক্ত জমাট বাঁধিয়া যায়। উল্লেখ্য, গত বৎসর অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি করেন জেমি স্কট নামে এক ব্যক্তি। ২০২১ সালের এপ্রিলে অ্যাস্ট্রাজেনেকা (ভারতে যাহা কোভিশিল্ড নামে পরিচিত) টিকা গ্রহণের পর তাঁহার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় এবং রক্ত জমাট বাঁধিয়া যায়। ইহার ফলে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। তখন অবশ্য কোম্পানিটি উক্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা অস্বীকার করিয়াছিল। 

সম্প্রতি একই অভিযোগ ভারতেও উঠিয়াছে, যে দেশ বাংলাদেশে প্রয়োগকৃত কোভিশিল্ড টিকার প্রধান উৎস। উপরন্তু ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ডসহ ইউরোপের আটটি দেশে একই অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণ করিবার পরই রক্ত জমাট বাঁধিবার ন্যায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়াছে। থাইল্যান্ডেও একই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ঘটনা ঘটিয়াছে। এই সকল কারণে ইতোমধ্যে ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও থাইল্যান্ড সরকার উক্ত টিকা প্রয়োগে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে। আশার বিষয়, প্রতিবেদনে টিকা-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রধান বলিয়াছেন, বাংলাদেশেও গত নভেম্বর হইতে কোভিশিল্ড প্রয়োগ বন্ধ রহিয়াছে। তবে ইহাতেই সন্তুষ্ট থাকিবার কারণ নাই বলিয়া আমরা মনে করি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অদ্যাবধি যতসংখ্যক কভিড-১৯ টিকা ব্যবহৃত হইয়াছে, উহার ১৫ শতাংশের অধিক কোভিশিল্ড। বিশেষজ্ঞদিগের বদৌলতে আমরা জানি, টিকা প্রয়োগের ২৪ হইতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সাধারণত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটিবার আশঙ্কা থাকে। সেই হিসাবে কেহ হয়তো বলিতে পারেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তাৎক্ষণিক পর্যবেক্ষণে যেহেতু কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তেমন অভিযোগ পাওয়া যায় নাই কিংবা টিকা গ্রহণকারীদিগের পক্ষ হইতে পরবর্তী সময়েও গুরুতর কোনো অভিযোগ আসে নাই, অতএব এতদ্বিষয়ে উদ্বিগ্ন হইবারও কোনো কারণ নাই। তবে ইহাও আশা করা যায় না, যথায় হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসকের ভুলে রোগীর প্রাণহানির পরও কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা নাই, তথায় টিকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ প্রতিকারের জন্য উন্নত দেশের ন্যায় আদালতের দ্বারস্থ হইবেন। অতএব, স্বাস্থ্য বিভাগ স্বীয় দায়িত্বের অংশরূপেই অন্যান্য দেশের ন্যায় এখানেও কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খতাইয়া দেখিবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তিকে পাইলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণেরও ব্যবস্থা লইবে বলিয়া আমরা বিশ্বাস করি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews