ছোট্ট সেই গ্যারেজে মাত্র দুটি গাড়ি রাখার মতো জায়গা। গ্যারেজের ভেতরের দিকেই পড়ে আছে আমজাদ হোসেনের ব্যবহার করা গাড়িটি। গত ২৬ দিনে গাড়িটির ওপর ধুলার আস্তর জমে গেছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, কিছুদিন আগেও গাড়িটির রং ছিল সিলভার কালারের। নিরাপত্তারক্ষী মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানালেন, স্যার তো নাই। তাঁকে বিদেশে ট্রিটমেন্ট করাতে নেওয়া হয়েছে। স্যারের গাড়িও বের করা হয় না। তাই ধুলায় পুরা গাড়ির রংটাই এখন বদলে গেছে।

ঢাকার আদাবর ১০ নম্বর সড়কে অভিনয়শিল্পী ও বরেণ্য নির্মাতা আমজাদ হোসেনের বাড়িতে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় গেলে এমনটাই দেখা গেছে। ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে টানা ১৬ দিন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পরও বাঁচানো যায়নি আমজাদ হোসেনকে। আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২ টা ৫৭ মিনিটে তিনি মারা যান। খবরটি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন তাঁর বড় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুলের স্ত্রী রাশেদা আক্তার লাজুক। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

আদাবর ১০ নম্বর সড়কে আমজাদ হোসেনের তিনতলা বাড়িটি। বাড়িটির দোতলায় স্ত্রী সুরাইয়া আকতারসহ থাকতেন তিনি। আট বছর ধরে এই বাড়িতে নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে আছেন বরিশালের মোহাম্মদ আতাউর রহমান। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্যার আমারে খুব আদর করতেন। কখনো যদি ৫০ টাকা চাইতাম, এক শ টাকাই দিতেন। বাইরে থেকে যখন বাড়িতে ঢুকতেন, পুরো বাড়িটি গমগম করত। সবাইকে তিনি মাতিয়ে রাখতেন। মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। গত ২৬ দিন ধরে তিনি বাড়িতে নাই। কেমন যেন খাঁ খাঁ করছে বাড়িটি। আজ বিকেলে তো মারা যাওয়ার খবরে পুরো বাড়ি স্তব্ধ হয়ে গেছে। বাড়িটা যেন মৃত্যুপুরী। সুনসান নীরবতা। শুনছি স্যারে অসুখে অনেক কষ্টও পাইছেন। ’

দোতলায় উঠতেই কলিং বেলের শব্দে ভেতর থেকে দরজা খুলে দিল তাঁর নাতি আদি (সোহেল আরমানের ছেলে)। সে বলল, আমার দাদুর সঙ্গে দেখা করতে আসছেন? হ্যাঁ বলতেই জানাল, আসেন। ভেতরে বসেন। আপনি কি জানেন, আমার দাদু বিদেশে। তিনি অনেক অসুস্থ। ঘুমাচ্ছেন। ঘুম ভাঙলে দেশে আসবেন। আব্বুও দাদুর সঙ্গে সেখানে আছেন। আমাকে অনেক দিন আদর করেন না তিনি। আমার সঙ্গে খেলতেন।’মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কাছ থেকে দোয়া নিচ্ছেন আমজাদ হোসেন।গত ১৭ নভেম্বর নিজের গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে কাজে বের হয়েছিলেন আমজাদ হোসেন। কাজ শেষে রাতে বাসায় ফেরেন। পরদিন সকালে পরিবারের সদস্যরা টের পান, আমজাদ হোসেনের শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক না। গৃহপরিচারিকা দৌড় দিয়ে তিনতলায় যান, ছোট ছেলে সোহেল আরমানকে ডাকতে। ছেলে এসে কিছুক্ষণ কথা বলেই বুঝতে পারেন, তাঁর বাবার ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে। দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালের পথে ছোটেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় ১৮ নভেম্বর আমজাদ হোসেনকে ঢাকার তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। একটা পর্যায়ে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাতে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককে নেওয়া হয়।

বসার ঘরের দুইদিকে আলমারিতে শোভা পাচ্ছে আমজাদ হোসেনের কিছু অর্জনের স্মারক। কর্মের জন্য অর্জিত সনদগুলো ফ্রেমে বাঁধাই করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বসা ঘরের দেওয়ালে। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার—কি নেই! এমন সময় বসার ঘরে আসেন সোহেল আরমানের স্ত্রী পপি। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এখনো আমার শ্বশুরকে দেশে আনার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। হাসপাতালের অনেক আনুষ্ঠানিকতা এখনো বাকি। আমার শাশুড়ির অবস্থাটাও ভালো না। আজ রাতেই হয়তো জানতে পারব, কখন বাবাকে (শ্বশুর) দেশে আনা হবে।’

পরিচালক আমজাদ হোসেনের জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি।

১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া তিনি আরও ১৪ বার জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews