বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন রূপ দেখা দিয়েছে বিরল মৃত্তিকা বাজারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খনি প্রতিষ্ঠান এমপি ম্যাটেরিয়ালস চীনে তাদের বিরল মৃত্তিকার কাঁচামাল রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পর বিশ্ববাজারে নিওডিমিয়াম ও প্রাসিওডিমিয়াম (এনডিপিআর)-এর দামে আকস্মিক ও ব্যাপক উল্লম্ফন দেখা গেছে। এনডিপিআর হল এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা শক্তিশালী চুম্বক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এসব চুম্বক ব্যবহার করা হয় ইলেকট্রিক যানবাহন, উইন্ড টারবাইন, মোবাইল ডিভাইস এবং সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে। ফলে এর সরবরাহ ঘাটতি বৈশ্বিক শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ বিরল মৃত্তিকা উৎপাদন এবং ৯০ শতাংশ পরিশোধন কার্যক্রম বর্তমানে চীনের নিয়ন্ত্রণে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই বিকল্প সরবরাহ চেইন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে এমপি ম্যাটেরিয়ালস-এর সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সরকার দেশীয় পরিশোধন ব্যবস্থার দিকে আরো একধাপ এগোয়। চুক্তির আওতায় এমপি তাদের এনডিপিআর রফতানি বন্ধ করে এবং মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি কেজিতে ১১০ ডলার মূল্যে মূল্য সহায়তা পায়। এ সিদ্ধান্তের ফলে চীনে অক্সাইড উৎপাদনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হঠাৎ করে সংকটের মুখে পড়ে। বিগত তিন বছরে এমপি-এর রফতানি চীনের এনডিপিআর অক্সাইড উৎপাদনের ৭ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত জোগান দিত।

পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে বাজারে। চীনে এনডিপিআর অক্সাইডের দাম জুলাইয়ের শুরুতে ৬৩ ডলার থেকে বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজিতে ৮৮ ডলারে পৌঁছেছে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটি প্রায় ৪০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি, যা বাজারকে রীতিমতো নাড়া দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মূল্যবৃদ্ধি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে নতুন খনি প্রকল্পে বিনিয়োগের পথ সুগম করতে পারে। কারণ পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে চীনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, চীনও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এপ্রিলে বিরল মৃত্তিকার রফতানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল। এতে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রভাব পড়ে এবং কিছু গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। তবে পরে জুলাই মাসে চীন রফতানি শিথিল করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছায়।

বাজার বিশ্লেষক রায়ান ক্যাস্টিলু মন্তব্য করেছেন, ‘এমপি-এর রফতানি বন্ধ চীনা ফ্যাক্টরিগুলোর জন্য বড় ধাক্কা। এটা স্পষ্টভাবে বাজারে ঘাটতির ইঙ্গিত দিচ্ছে’। ধারণা করা হচ্ছে, চীনের উৎপাদন এ বছর বড়জোর ৫ শতাংশ বাড়তে পারে, অথচ চাহিদা বাড়ছে ১০ শতাংশ হারে। ফলে ভবিষ্যতে আরো দামের উত্থান সম্ভব, যদি না নতুন সরবরাহ উৎস বাজারে প্রবেশ করে।

মেটাল প্রাইসিং ফার্ম আর্গাস-এর প্রধান এলি সাকলাটভালা বলেন, ‘প্রযোজকরা এ মূল্যবৃদ্ধিতে স্বস্তি পাচ্ছে, তবে প্রশ্ন হচ্ছে - চুম্বক নির্মাতারা কতটা সময় এই বাড়তি দাম বহন করতে পারবে’।

বিশ্ব এখন এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে বিরল মৃত্তিকার নিয়ন্ত্রণ শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। আগামীর শিল্প ও প্রতিরক্ষা খাতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই মূল্যবান সম্পদের নিয়ন্ত্রণের ওপর। সূত্র : রয়টার্স।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews