গাজী মিজানুর রহমান

৯টি প্রদেশ নিয়ে গঠিত দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর সিউল। এই শহরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বোধহয় ইনচন গ্রান্ড ব্রিজ। এই ব্রিজ দিয়ে সিউল মহানগরের দক্ষিণ অংশের দিকে যাতায়াত করতে হয়। আর একটি ব্রিজ আছে, যার ওপর দিয়ে সিউলের উত্তর অংশে গমনাগমনকারী যান চলাচল করে।

ব্রিজে উঠে দেখলাম আমাদের বাস চলছে তো চলছেই, ব্রিজ শেষ হয় না। সেতুটি ১৮.৪ কি.মি. দীর্ঘ। এর ১২ কিলোমিটারই সমুদ্রের ওপর। বাংলাদেশ যেখানে নদীর ওপর সেতু করতে গিয়ে হিমশিম খায়, আর দক্ষিণ কোরিয়া সেতু করেছে সমুদ্রের ওপরে। দেশে দেশে কত ব্যবধান!এখানকার অবকাঠামো খুবই উঁচু মানের।

নয়নাভিরাম সিউল সিটিতে বাড়িঘর দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। হ্যানগাং নদীর দুই দিকে সাজানো দালানকোঠা। মহানগরের মধ্যেই এই নদীর ওপরে ১৩টি ব্রিজ। কত শত ফ্লাইওভার মহানগরের কোলেপিঠে তা গণনা করাও কঠিন। রাস্তাঘাটে শুধু চকচকে গাড়ি আর গাড়ি। একটু পুরনো হলে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মঙ্গোলিয়া ইত্যাদি দেশে রফতানি হয়, বাংলাদেশ যেমন জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কেনে সেরকম।

বুনদাং-গু
দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হচ্ছে বুসান। সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তর দিকে আর বুসান দক্ষিণে। পশ্চিম সীমান্ত বরাবর পীত সাগর। সিউলের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে ৩০ কি.মি. দূরে বুনদাং শহর। এটি সংনাম সিটির অন্তর্গত। সংনাম সিউল বা বুসানের মতো মেট্রোপলিটান সিটি নয়। এ দেশে ৭টি মেট্রোপলিটন সিটি রয়েছে। মেট্রোপলিটন সিটিগুলোর নিজস্ব সরকার রয়েছে, যা সংনাম সিটির মতো। এটা প্রাদেশিক সরকার দ্বারা শাসিত।

বড় বড় কোম্পানির প্রধান কার্যালয় আছে বুনদাং শহরে। রাজধানী শহরের ওপর চাপ কমাতে বিভিন্ন কোম্পানিকে কর কমিয়ে রাজধানীর বাইরে অফিস স্থাপনে আকৃষ্ট করেছে দেশটি। যা হোক, বুনদাংয়ের পুরো নাম বুনদাং-গু। ‘গু’ অর্থ জেলা। বুনদাংয়ের অধীনে আছে ২১টি ডং। ‘ডং’ মানে সাব-ডিভিশন, বাংলাদেশে যেমন উপজেলা বা থানা।

কোরিয়ার সিলিকন ভ্যালি
দক্ষিণ কোরিয়ার আরেকটি শহরকে পরিচয় করিয়ে না দিলেই নয়। নাম ড্যাজন। এই শহরকে বলা হয় কোরিয়ার সিলিকন ভ্যালি। এটি সিউল ও বুসানের মতো আর একটি মেট্রোপলিটন সিটি। বুনদাং থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে। দক্ষিণ কোরিয়ার ১২টি সরকারি সংস্থা/অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় রয়েছে ড্যাজনে। রাজধানী সিউলের ওপর থেকে জনসংখ্যার চাপ কমাতে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এসব থেকে বাংলাদেশেরও শিক্ষা নেয়ার আছে। সবাইকে ঢাকায় থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

ড্যাজনে বাংলাদেশিদের যে কটা প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে গেলে দেখা যাবে এক ডিজিটাল চেহারা। ‘ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ ডেলিগেটস’ লেখা এটা ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড স্বাগত জানাবে আপনাকে। দক্ষিণ কোরিয়া যেন সত্যিকারের ‘ডিজিটাল জাতি’!

ফোক ভিলেজ
ড্যাজনে যাওয়ার পথে পড়বে কোরিয়ার ইয়ং-ইন এলাকায় অবস্থিত ফোক ভিলেজ। ইতিহাস হয়ে যাওয়া কোরিয়ার কৃষিভিত্তিক পরিবারের আদলে এক-একটি বাড়ি তৈরি করে শহরবাসী এবং নতুন প্রজন্ম ও বিদেশিদের দেখানো হচ্ছে এখানে। সেই সঙ্গে উন্মুক্ত আকাশের নিচে নাচ, গান এবং অ্যাক্রোবেটিক শোর ব্যবস্থা আছে। ঘোড়সওয়ারদের মনোমুগ্ধকর শারীরিক কসরত আর রোপড্যান্স মন কাড়ার মতো। ১০ ডলার প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে কেউ ইচ্ছে করলে সারাদিন পাহাড়বেষ্টিত এই সবুজের মাঝে কাটিয়ে দিতে পারে। সেই সঙ্গে কয়েক রাউন্ড নানা ধরনের শো উপভোগ করতে পারে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পোর্ট সিটি
গুনসান। একে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পোর্ট সিটি। এর কাছেই কোরিয়ানরা তৈরি করছে সেমানগুম সমুদ্র বাঁধ। সমুদ্রের ভিতরে ঢুকে যাওয়া দুই দিকের দুটো ভূখণ্ড বরাবর বাঁধ দিয়ে সমুদ্রের একটা অংশকে বেঁধে ফেলা হয়েছে। বেঁধে-ফেলা অংশটি প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার নতুন এলাকার সৃষ্টি করবে। এখানে হবে মিষ্টি পানির লেক আর চাষাবাদের জমি। সেই সঙ্গে এটি হবে এক পর্যটন নগরী। ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সামুদ্রিক বাঁধ। পীত সাগরের পশ্চিমে ডুবন্ত সূর্যের লাল-রক্তিম আভা উপভোগ করার মতো।

এই শহরে ঘুরতে গিয়ে একটি রেস্টুরেন্ট চোখে পড়েছিল। যার সাইনবোর্ডে হাঁসের ছবি দেখা যাবে। কারণ এই রেস্টুরেন্টে যত রকম খাবার আইটেম আছে তার সবই হাঁসের মাংস দিয়ে তৈরি। এক ফুট উঁচু টেবিল সামনে রেখে আসন গেড়ে বসে খেতে হয় এখানে।দক্ষিণ কোরিয়ার রাস্তাগুলো কত সুন্দর। কী গতিতে এখানে গাড়ি চলাচল করে, না দেখলে বোঝানো কঠিন।

নানতা শো
সিউলের রাস্তায় একটাও হাঁটা মানুষজন দেখা যায় না। ওপরে যতজন ঘোরে তার চেয়ে নিচের সুড়ঙ্গপথে ট্রেনে ঘোরে বেশি। একমাত্র মাইয়ং ডং নানতা এলাকায় ঢাকার মতো মানুষ চোখে পড়বে। দুদিকে দোকানপাট। মানুষ হেঁটে ঘুরছে আর কেনাকাটা করছে। খাবার দোকানগুলোতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে। এখানে নানতা শো খুব জনপ্রিয়, বলা যায় কোরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় থিয়েটার শো। এতে ৪ জন অভিনেতা, ৩ জন পুরুষ, মেয়ে একজন। বছরজুড়েই সিউলে এই শো চলে।

দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি শহর

গাজী মিজানুর রহমান

৯টি প্রদেশ নিয়ে গঠিত দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর সিউল। এই শহরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বোধহয় ইনচন গ্রান্ড ব্রিজ। এই ব্রিজ দিয়ে সিউল মহানগরের দক্ষিণ অংশের দিকে যাতায়াত করতে হয়। আর একটি ব্রিজ আছে, যার ওপর দিয়ে সিউলের উত্তর অংশে গমনাগমনকারী যান চলাচল করে।

ব্রিজে উঠে দেখলাম আমাদের বাস চলছে তো চলছেই, ব্রিজ শেষ হয় না। সেতুটি ১৮.৪ কি.মি. দীর্ঘ। এর ১২ কিলোমিটারই সমুদ্রের ওপর। বাংলাদেশ যেখানে নদীর ওপর সেতু করতে গিয়ে হিমশিম খায়, আর দক্ষিণ কোরিয়া সেতু করেছে সমুদ্রের ওপরে। দেশে দেশে কত ব্যবধান!এখানকার অবকাঠামো খুবই উঁচু মানের।

নয়নাভিরাম সিউল সিটিতে বাড়িঘর দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। হ্যানগাং নদীর দুই দিকে সাজানো দালানকোঠা। মহানগরের মধ্যেই এই নদীর ওপরে ১৩টি ব্রিজ। কত শত ফ্লাইওভার মহানগরের কোলেপিঠে তা গণনা করাও কঠিন। রাস্তাঘাটে শুধু চকচকে গাড়ি আর গাড়ি। একটু পুরনো হলে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মঙ্গোলিয়া ইত্যাদি দেশে রফতানি হয়, বাংলাদেশ যেমন জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কেনে সেরকম।

বুনদাং-গু
দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হচ্ছে বুসান। সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তর দিকে আর বুসান দক্ষিণে। পশ্চিম সীমান্ত বরাবর পীত সাগর। সিউলের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে ৩০ কি.মি. দূরে বুনদাং শহর। এটি সংনাম সিটির অন্তর্গত। সংনাম সিউল বা বুসানের মতো মেট্রোপলিটান সিটি নয়। এ দেশে ৭টি মেট্রোপলিটন সিটি রয়েছে। মেট্রোপলিটন সিটিগুলোর নিজস্ব সরকার রয়েছে, যা সংনাম সিটির মতো। এটা প্রাদেশিক সরকার দ্বারা শাসিত।

বড় বড় কোম্পানির প্রধান কার্যালয় আছে বুনদাং শহরে। রাজধানী শহরের ওপর চাপ কমাতে বিভিন্ন কোম্পানিকে কর কমিয়ে রাজধানীর বাইরে অফিস স্থাপনে আকৃষ্ট করেছে দেশটি। যা হোক, বুনদাংয়ের পুরো নাম বুনদাং-গু। ‘গু’ অর্থ জেলা। বুনদাংয়ের অধীনে আছে ২১টি ডং। ‘ডং’ মানে সাব-ডিভিশন, বাংলাদেশে যেমন উপজেলা বা থানা।

কোরিয়ার সিলিকন ভ্যালি
দক্ষিণ কোরিয়ার আরেকটি শহরকে পরিচয় করিয়ে না দিলেই নয়। নাম ড্যাজন। এই শহরকে বলা হয় কোরিয়ার সিলিকন ভ্যালি। এটি সিউল ও বুসানের মতো আর একটি মেট্রোপলিটন সিটি। বুনদাং থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে। দক্ষিণ কোরিয়ার ১২টি সরকারি সংস্থা/অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় রয়েছে ড্যাজনে। রাজধানী সিউলের ওপর থেকে জনসংখ্যার চাপ কমাতে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এসব থেকে বাংলাদেশেরও শিক্ষা নেয়ার আছে। সবাইকে ঢাকায় থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

ড্যাজনে বাংলাদেশিদের যে কটা প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে গেলে দেখা যাবে এক ডিজিটাল চেহারা। ‘ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ ডেলিগেটস’ লেখা এটা ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড স্বাগত জানাবে আপনাকে। দক্ষিণ কোরিয়া যেন সত্যিকারের ‘ডিজিটাল জাতি’!

ফোক ভিলেজ
ড্যাজনে যাওয়ার পথে পড়বে কোরিয়ার ইয়ং-ইন এলাকায় অবস্থিত ফোক ভিলেজ। ইতিহাস হয়ে যাওয়া কোরিয়ার কৃষিভিত্তিক পরিবারের আদলে এক-একটি বাড়ি তৈরি করে শহরবাসী এবং নতুন প্রজন্ম ও বিদেশিদের দেখানো হচ্ছে এখানে। সেই সঙ্গে উন্মুক্ত আকাশের নিচে নাচ, গান এবং অ্যাক্রোবেটিক শোর ব্যবস্থা আছে। ঘোড়সওয়ারদের মনোমুগ্ধকর শারীরিক কসরত আর রোপড্যান্স মন কাড়ার মতো। ১০ ডলার প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে কেউ ইচ্ছে করলে সারাদিন পাহাড়বেষ্টিত এই সবুজের মাঝে কাটিয়ে দিতে পারে। সেই সঙ্গে কয়েক রাউন্ড নানা ধরনের শো উপভোগ করতে পারে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পোর্ট সিটি
গুনসান। একে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পোর্ট সিটি। এর কাছেই কোরিয়ানরা তৈরি করছে সেমানগুম সমুদ্র বাঁধ। সমুদ্রের ভিতরে ঢুকে যাওয়া দুই দিকের দুটো ভূখণ্ড বরাবর বাঁধ দিয়ে সমুদ্রের একটা অংশকে বেঁধে ফেলা হয়েছে। বেঁধে-ফেলা অংশটি প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার নতুন এলাকার সৃষ্টি করবে। এখানে হবে মিষ্টি পানির লেক আর চাষাবাদের জমি। সেই সঙ্গে এটি হবে এক পর্যটন নগরী। ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সামুদ্রিক বাঁধ। পীত সাগরের পশ্চিমে ডুবন্ত সূর্যের লাল-রক্তিম আভা উপভোগ করার মতো।

এই শহরে ঘুরতে গিয়ে একটি রেস্টুরেন্ট চোখে পড়েছিল। যার সাইনবোর্ডে হাঁসের ছবি দেখা যাবে। কারণ এই রেস্টুরেন্টে যত রকম খাবার আইটেম আছে তার সবই হাঁসের মাংস দিয়ে তৈরি। এক ফুট উঁচু টেবিল সামনে রেখে আসন গেড়ে বসে খেতে হয় এখানে।দক্ষিণ কোরিয়ার রাস্তাগুলো কত সুন্দর। কী গতিতে এখানে গাড়ি চলাচল করে, না দেখলে বোঝানো কঠিন।

নানতা শোসিউলের রাস্তায় একটাও হাঁটা মানুষজন দেখা যায় না। ওপরে যতজন ঘোরে তার চেয়ে নিচের সুড়ঙ্গপথে ট্রেনে ঘোরে বেশি। একমাত্র মাইয়ং ডং নানতা এলাকায় ঢাকার মতো মানুষ চোখে পড়বে। দুদিকে দোকানপাট। মানুষ হেঁটে ঘুরছে আর কেনাকাটা করছে। খাবার দোকানগুলোতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে। এখানে নানতা শো খুব জনপ্রিয়, বলা যায় কোরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় থিয়েটার শো। এতে ৪ জন অভিনেতা, ৩ জন পুরুষ, মেয়ে একজন। বছরজুড়েই সিউলে এই শো চলে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews