শরণার্থী সংকটের মূলোত্পাটন করিতে হইবে

২২ জুন, ২০১৮ ইং

বিশ্ব জুড়িয়া বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৮০ লক্ষ। ইহার মধ্যে কেবল ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত হইয়াছে ১ কোটি ৬২ লক্ষ মানুষ। ১৯ জুনের বিশ্ব শরণার্থী দিবসকে ঘিরিয়া জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হইয়াছে এবং উহাতে বলা হইয়াছে যে, প্রতিদিন ৪৪ হাজার ৫০০ জন বাস্তুচ্যুত হইতেছে। কঙ্গোর সংকট, দক্ষিণ সুদানের যুদ্ধ এবং মিয়ানমার হইতে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীর পালাইয়া আসিবার কারণে ২০১৭ সালের বাস্তুচ্যুতির সংখ্যাটা এত বেশি হইয়াছে। ইহার পূর্বে সিরিয়ায় যুদ্ধ এবং আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সহিংস পরিস্থিতির কারণে শরণার্থীরা বাধ্য হইয়া ইউরোপে ভিড় জমাইয়াছে অথবা পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় লইয়াছে। প্যালেস্টাইনে তো বহু বত্সর ধরিয়াই বাধ্যতামূলক বাস্তুচ্যুতি ঘটিতেছে। ২০১৭ সালে সবচাইতে বেশি বাস্তুচ্যুতি ঘটিয়াছে প্যালেস্টাইনে। এইসকল পরিসংখ্যান বলিতেছে বিশ্বে শরণার্থী সংকট কতটা গভীর; কতটা মর্মন্তুদ পরিস্থিতিতে রহিয়াছে বিশ্ব মানবতা!

বাংলাদেশ এই মুহূর্তে এক চরম শরণার্থী সংকট মোকাবিলা করিতেছে। ২০১৭ সালের আগস্টের পর মিয়ানমার হইতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে শরণার্থীর যেই ঢল নামিয়াছিল জাতিসংঘের অভিধা অনুযায়ী তাহা গত এক দশকের বৃহত্তম শরণার্থীর ঢল। বাংলাদেশ তাহাদের আশ্রয় দিয়া বিশ্বে প্রশংসা লাভ করিয়াছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে তাহার এক রচনায় বলিয়াছেন, এই বছরের বিশ্ব শরণার্থী দিবসে বাংলাদেশ যেন আশা ও উদ্দীপনার এক আলোকবর্তিকা হিসাবে আবির্ভূত হইয়াছে। তবে সমস্যাজর্জরিত এই দেশে শরণার্থীদের এই চাপ বাড়তি সংকট তৈরি করিতেছে। শুধু বাংলাদেশ নহে, যেইসকল দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিতেছে তাহারা নিশ্চয়ই মানবতার দাবিতে যথাযথ সাড়াই দিতেছে, কিন্তু সকল দেশই এই বিশালসংখ্যক শরণার্থী সামাল দিতে গিয়া হিমশিম খাইতেছে। অন্যদিকে আশ্রয়প্রার্থী নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করিতেছে, নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হইতেছে, শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত হইতেছে এবং দারিদ্র্য ও হতাশার কারণে তরুণরা অপরাধপ্রবণ হইয়া পড়িতেছে।

অনস্বীকার্য যে বাস্তুচ্যুতির ঘটনাগুলি না হইলেই মানবতা এইরূপ বিপন্ন হইত না। জাতিসংঘ শরণার্থীদের মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সহায়তা করিবার চেষ্টা করে, কিন্তু বাস্তুচ্যুতির অন্যতম প্রধান যেই কারণ, বিশ্বব্যাপী সেই যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধ করিতে জাতিসংঘের ভূমিকা গৌণ। আর পরাশক্তিগুলি এইসকল দ্বন্দ্ব-সংঘাত বন্ধ করিতে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখা দূরে থাক, বরং তাহাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঘৃতাহুতি করিয়া চলিয়াছে। অন্যদিকে ইউএনএইচসিআর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির সমালোচনা করিবার পর বুধবার দেশটি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল হইতে নিজেদের প্রত্যাহার করিয়া নিয়াছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল পরাশক্তি নিজের স্বার্থ ত্যাগ করিয়া বিশ্ব মানবতার স্বার্থে আগাইয়া আসিবে— এই প্রত্যাশা আপাতদৃষ্টিতে অরণ্যে রোদন মনে হইলেও সকলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ইহার কোনো বিকল্প আছে বলিয়া তো মনে হয় না।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews