জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক। সফল রাজনীতিক হয়েও নির্লোভ সরল জীবনযাপন ছিল তার। জীবিত অবস্থায় বিষয়টি সামনে তেমন উঠে না এলেও তার মৃত্যুর পর তার জীবনযাপন অবাক করেছে দেশবাসীকে। নির্বাচনি আসন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে তার সম্বল কেবল দুটি জীর্ণ টিনের ঘর! পদ পদবিকে ব্যবহার করে সম্পদ বানানোর সংস্কৃতি যে দেশের মানুষের মজ্জাগত হয়ে উঠছে সেখানে মন্ত্রী পদধারী হয়েও ছায়েদুল হকের এমন ঐশ্বর্যবিমুখতাও উঠে এসেছে গণমানুষের আলোচনায়। স্থানীয়রা তো বটেই সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুক টুইটারে তার গ্রামের বাড়ির ছবি দিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

প্রয়াত ছায়েদুল হকের ভাগ্নে নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম। খুব কাছ থেকে মামার জীবনযাপন দেখেছেন তিনি। মামার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘‘তিনি (ছায়েদুল হক)মন্ত্রী হয়েও গ্রামের বাড়িতে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করতেন। তার কোনও হিংসা বিদ্বেষ ছিল না। অর্থ-প্রাচুর্য কোনও কিছুতেই তার মন ছিল না। তার জীবন যাত্রা ছিল একেবারেই সাদামাটা। তিনি মহান আল্লাহ’র ওপর বিশ্বাস রেখে প্রায়ই বলতেন,‘এই দুনিয়ায় যা-কিছু করো,একদিন আখেরাতে সবকিছুর হিসাব দিতে হবে।’ তাই তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি মন্ত্রী হয়েও থাকতেন পৈত্রিক ভিটায় জরাজীর্ণ টিনের ঘরে।’’

তিনি জানান,‘বাড়িতে দুটি টিনের ঘরের মধ্যে একটিতে তিনি থাকতেন। অন্যটিতে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হতো। এটাকে গ্রামের ভাষায় বৈঠকখানা হিসেবে ডাকা হতো। তাই নেতাকর্মীরা খুব সহজেই তার সান্নিধ্য পেতেন।’

ছায়েদুল হকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলতে গিয়ে নাসিরনগরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ডা.রাফি উদ্দিন বলেন,নাসিরনগর ছিল মূলত হাওর অঞ্চলের উপজেলা। এক সময় দিনের বেলায় নৌপথে সঠিক সময়ে নাসিরনগর থেকে জেলা সদরে আসা-যাওয়া করা ছিল খুব কঠিন ব্যাপার। সঠিক সময়ে নৌকায় না আসতে পারলে জেলা সদরে কারও বাসায় অবস্থান করতে হতো। এই সমস্যাটি দূর হয় ছায়েদুল হক এমপি ও মন্ত্রী হওয়ার পর। তিনি এটাকে প্রধান কাজ হিসেবে নিয়ে আকাশি হাওরের ওপর দিয়ে জেলা সদরের সঙ্গে নাসিরনগর উপজেলা সদরের রাস্তার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। এতে নৌপথে যেখানে জেলা  সদরে যেতে ৮ ঘণ্টা লাগতো সেখানে সড়ক পথে যেতে লাগছে মাত্র ৩ ঘণ্টা।

ছায়েদুল হকের সততা ও এলাকাবাসীর প্রতি দায়িত্ববোধ প্রসঙ্গে উদাহরণ টানতে গিয়ে রাফি উদ্দিন বলেন, হাওরের ওপর দিয়ে কাজ করার সময় রাস্তা নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার রাস্তার পাশে ব্লক নির্মাণে অনিয়ম করছিল। স্থানীয় জনসাধারণ ছায়েদুল হককে বিষয়টি জানালে তিনি সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে কাজের অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পর রাস্তার পাশ থেকে একটি ব্লক তার গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে অনিয়মের জন্যে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। 

এই ঘরেই থাকতেন ছায়েদুল হক

তবে এসব ছাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসে তার টিনের ঘরে ছবি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম সেই ছবি শেয়ার দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন,‘এই যুগে মন্ত্রী এমপি হতে হয় না। দলের একটি পদ হলেই চলে। রাতারাতি বিত্তশালী। এর মাঝে আলাদা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কর্মী ছায়েদুল হক। শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রী করেন। বার বার এমপি হতেন। তার বাড়ির ছবি বলে দেয় তিনি কতটা ভালো মানুষ ছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন শেয়ার দিয়েছেন মন্ত্রীর বাড়ির ছবি। মন্ত্রী স্মরণে তিনি ওয়ালে লিখেছেন, ‘আমি একবার একটি লেখা দিয়েছিলাম প্রবীণ ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মহসিন আলী , মুক্তিযোদ্ধা ছায়েদুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ইমাজউদ্দিন প্রামানিক, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হককে নিয়ে। লিখেছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রী সভায় এই পাঁচজন নেতার নাম দেখে খুবই খুশি হয়েছিলাম। কারণ ছোট সময় থেকেই ওনাদেরকে “ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতা” শুনে শুনে বড় হয়েছি। যারা সত্যিকার অর্থেই সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিটা করেছেন। ওনাদেরই আরেকজন সাদা মনের মানুষ মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী সায়েদুল হক আজ মারা গেছেন। আল্লাহ তাঁকে বেহেস্ত নসিব করুন।’

ছায়েদুল হকের বৈঠকখানা

এই টিনের ঘরের ছবি শেয়ার দিয়ে ইলিয়াস হায়দার নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘এই ছবি বলে দিচ্ছে সব রাজনীতিবিদ এখনও টাকার কাছে বিক্রি হননি। যেখানে পাতিনেতাদের বাহারি জীবনযাপন দেখলে চোখ কপালে উঠে সেখানে এই ছায়েদুল হকরা আদর্শ'র বাতিঘর। চোরবাটপার টাউটদের হাত থেকে রাজনীতি কবে মুক্ত হবে?’

ছায়েদুল হকের ভাগ্নে, নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম মাস্টার বলেন, তার মামা রাস্তা, ঘাট, স্কুল-কলেজ, হাট বাজার, মসজিদ মন্দির, হাসপাতালসহ নাসিরনগরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। মৎস্য চাষে বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে দেশ।

তিনি বলেন,‘ছায়েদুল হক কোনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতেন না। কোনও অন্যায় কাজ সমর্থন করতেন না। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীরা কোনও খারাপ কাজ করলে তাদেরকে তাৎক্ষণিক তিরস্কার করতেন। কোনও সাধারণ মানুষ তার কাছে কোনও অভাব অভিযোগ নিয়ে আসলে তিনি তাৎক্ষণিক সমাধান করতেন। এটাই ছিল তার মানবীয় গুণাবলী।’ 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews