৪০. আমি কাফিরদের ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার কিছু অংশ যদি তোমাকে দেখাই কিংবা (তা সংঘটিত হওয়ার আগেই) তোমার কাল পূর্ণ করে দিই, (জেনে রেখো, আমার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে) তোমার কর্তব্য শুধু (আল্লাহর বাণী) প্রচার করা। হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ। (সুরা : রাদ, আয়াত : ৪০)
তাফসির : আগের আয়াতগুলোতে কোরআন ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কাফিরদের বিভিন্ন আপত্তির জবাব দেওয়া হয়েছিল। আলোচ্য আয়াতে তাদের হঠকারিতা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে মহানবী (সা.)-কে সান্ব্তনা দেওয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি নিশ্চিত থাকুন, তাদের হঠকারিতার জবাব তারা পাবেই। সেটা আপনার জীবদ্দশায় কিংবা আপনার মৃত্যুর পরও হতে পারে। সুতরাং কাফিরদের ব্যাপারে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যই সত্য। আল্লাহ বলেন, ‘মনে রেখো, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা আল্লাহরই, আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যই সত্য, কিন্তু তাদের বেশির ভাগই তা জানে না। ’ (সুরা: ইউনুস, আয়াত : ৫৫)
এ আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলের দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য শুধু আল্লাহর বাণী প্রচার করা। জোর করে কাউকে ঈমানদার বানানো আপনার কাজ নয়। কারো জন্য আজাব নিয়ে আসা ও কেয়ামত সংঘটিত করা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। কোনো নবীকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়নি, আজাব দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়নি। নবীদের দায়িত্ব শুধু আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। পাপাচারের দরুন আজাব অনিবার্য। কিন্তু আল্লাহ পাপীদের ততক্ষণাৎ ধ্বংস করেন না। তিনি তাদের অবকাশ দেন। প্রত্যেক জাতির জন্য নির্দিষ্ট সময় আছে। সব জাতি ও সব প্রজন্মকে পরিশুদ্ধ হওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়। যখন তাদের সময় শেষ হয়ে যায়, তখন তাদের ওপর আজাব আসে। সে আজাব কেউ এগিয়ে নিতে পারে না, পিছিয়ে নিতেও পারে না।
এ আয়াত থেকে জানা যায়, ধর্ম প্রচারকদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের কাছে সত্যের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন মানবজাতিকে সত্য পথ প্রদর্শনের জন্য। নবী-রাসুলদের দায়িত্ব আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কোনো নবী-রাসুল ইচ্ছা করলেই কাউকে হেদায়েত করতে পারেন না। কারো হেদায়েত পাওয়া, না পাওয়া একান্তভাবেই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। কাউকে জোর-জবরদস্তি করে হেদায়েত করার দায়িত্ব যেমন নবী-রাসুলদের ছিল না, তেমনি কাউকে ভালোবেসে হেদায়েত করার ক্ষমতাও তাঁদের ছিল না। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘বলে দাও, হে মানবসমাজ! তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে। সুতরাং এখন যে হেদায়েতের পথ অনুসরণ করবে, সে আসলে নিজের কল্যাণের জন্যই সেই পথ অবলম্বন করবে। আর যে পথভ্রষ্ট হবে, সে নিজেই নিজের অমঙ্গল সাধন করবে। আর আমি তোমাদের কর্মনিয়ন্ত্রক নই। ’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১০৮)
গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ