সকালে অনেক অভিভাবক একটি সাধারণ সমস্যার মুখোমুখি হন— শিশু দুধ খেয়ে বমি করে দেয়। এটি প্রথমে অস্বাভাবিক মনে হলেও, বিভিন্ন কারণে এটি হতে পারে এবং সবসময় চিন্তার কারণ নাও হতে পারে। তবে এর পেছনে সম্ভাব্য কারণ, প্রতিকার ও সতর্কতা সম্পর্কে জানা অভিভাবকদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

প্রথমত, শিশু দুধ খেয়ে বমি করলে সেটি নিয়মিত হচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল করা দরকার। একবার-দুবার হলে এটি সাধারণ হতে পারে, কিন্তু বারবার হলে কারণ খুঁজে বের করা প্রয়োজন। অনেক সময় শিশু ঘুম থেকে উঠে পেট পুরোপুরি খালি অবস্থায় থাকে। খালি পেটে হঠাৎ করে দুধ খেলে পেটের অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে এবং তা বমির উদ্রেক ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যেসব শিশু রাতে দেরি করে খায় অথবা মাঝরাতে কোনো খাবার খায় না, সকালে তাদের পাকস্থলী অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।

অনেক সময় শিশুর দুধ হজমে সমস্যা থাকে। সব শিশুর হজমশক্তি এক রকম নয়। কারও কারও ক্ষেত্রে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স নামক একটি অবস্থা থাকে, যেটিতে দুধে থাকা ল্যাকটোজ হজম হয় না এবং গ্যাস, পেটব্যথা বা বমি হতে পারে। এই ধরণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সকালে নয়, যেকোনো সময় দুধ খেলে বমি হতে পারে। তবে সকালে খালি পেটে খাওয়ার কারণে সমস্যা বেশি প্রকট হয়ে ওঠে।

আবার কিছু শিশু সকালবেলা দুধ খেতে চায় না, কিন্তু জোর করে খাওয়ালে মানসিক বিরক্তি ও অস্বস্তি থেকে বমি করে দেয়। এমনকি অনেক সময় ঘুম থেকে উঠে শিশুর শরীর বা মন ভালো থাকে না— সেক্ষেত্রেও খাওয়ার আগ্রহ না থাকলে দুধ খাওয়ানো ঠিক নয়। শিশুর পছন্দ-অপছন্দ বা শরীরের ভাষা বোঝা অভিভাবকের দায়িত্ব।

দুধের তাপমাত্রাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক অভিভাবক শিশু ঘুম থেকে উঠেই ঠান্ডা দুধ খাওয়ান, আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত গরম দুধ দেন। উভয় ক্ষেত্রেই শিশুর পেটের উপর চাপ পড়ে এবং বমি হতে পারে। তাই দুধের তাপমাত্রা কুসুম গরম রাখা ভালো।

খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর দুধ খাওয়ার সময় সে হুড়োহুড়ি করে খাচ্ছে কি না। চটজলদি খেলে বা দুধের সঙ্গে বাতাস ঢুকে গেলে পাকস্থলীতে অস্বস্তি সৃষ্টি হয় এবং বমির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই ধীরে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

আরেকটি বিষয় হলো দুধের সঙ্গে কিছু বাড়তি উপাদান মেশানো। অনেক সময় অভিভাবকরা দুধে চিনি, চকলেট পাউডার, মধু বা বিভিন্ন ফ্লেভার মিশিয়ে খাওয়ান। এসব উপাদান শিশুর জন্য সবসময় উপযোগী নাও হতে পারে। বিশেষ করে সকালে শিশুর শরীর তখনও পুরোপুরি জাগ্রত না থাকায় অতিরিক্ত মিষ্টি বা কৃত্রিম ফ্লেভার তার শরীরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।

শিশু যদি নিয়মিত সকালে দুধ খেয়ে বমি করে, তাহলে প্রথমে পর্যবেক্ষণ করুন— সে কোন অবস্থায় দুধ খায়, কী ধরনের দুধ খায়, খাওয়ার পরপরই কি দৌড়াদৌড়ি বা খেলাধুলা করে কি না, বা দুধ খেয়ে সে আরাম বোধ করছে কি না। এসব বিশ্লেষণ করে কারণ খুঁজে বের করা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াও অনেক সময় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়।

তবে কিছু লক্ষণ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেমন— বমির সঙ্গে জ্বর আসা, বমির পরিমাণ বেশি হওয়া, দুধ খাওয়ার পর পেট ফুলে যাওয়া, শিশুর অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব করা, অথবা বমির রঙ ও গন্ধ অস্বাভাবিক হওয়া। এসব লক্ষণ মারাত্মক সমস্যা নির্দেশ করতে পারে, যেমন গ্যাস্ট্রিক ইনফেকশন, ফুড অ্যালার্জি, ইনটেস্টাইনাল ব্লকেজ ইত্যাদি।

সমাধানের জন্য প্রথম ধাপে আপনি সকালে দুধ খাওয়ানোর সময় পরিবর্তন করে দেখতে পারেন। ঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে না দিয়ে ৩০ মিনিট পর খাওয়ান। এর মাঝে সামান্য বিস্কুট, কলা বা হালকা কিছু খাবার দিলে পেট একটু ভরে যাবে এবং দুধ খেতে সুবিধা হবে। আবার, দুধের বদলে দই, স্যুপ বা দুধযুক্ত অন্য খাবার দিয়ে দেখা যেতে পারে। এতে শিশুর পুষ্টি বজায় থাকবে এবং বমির প্রবণতাও কমতে পারে।

দুধের গুণাগুণ অস্বীকার করা যায় না, তবে সব শিশুর পক্ষে তা হজম করা সহজ নয়। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য যদি দুধই একমাত্র উৎস হয়, তবে সেটি গ্রহণযোগ্য উপায়ে দিতে হবে। অন্যদিকে, যদি দুধ নিয়মিত সমস্যার সৃষ্টি করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিকল্প খুঁজে নেওয়াই ভালো।

শিশুর প্রতিটি প্রতিক্রিয়া মনোযোগ দিয়ে দেখা ও বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা নিজের অসুবিধা প্রকাশ করতে না পারলেও শরীরের ভাষা দিয়ে বোঝাতে পারে। তাই শুধু নিয়ম মেনে খাওয়ানোর পরিবর্তে শিশুর আরাম, আগ্রহ এবং শরীরের সাড়া বিবেচনা করেই খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে সচেতনতা ও যত্নেই মেলে সমাধান।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews