‘জায়নবাদের ইতিহাস আমার ব্যক্তিগত ডায়েরির মতো’
ড্যানিয়েলা ওয়েইসের জন্ম ১৯৪৫ সালে, তৎকালীন ব্রিটিশশাসিত ফিলিস্তিনের তেল আবিবের কাছে বনে ব্রাক শহরে। তিনি বড় হন একটি খামারে, একটি রক্ষণশীল ধর্মীয় ইহুদি পরিবেশে। পড়াশোনা করেন ধর্মীয় বিদ্যালয়ে। তখন তিনি ধর্মভিত্তিক জায়নবাদী আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এই আন্দোলনের নেতারা নিজেদের মূলধারার ধর্মনিরপেক্ষ জায়নবাদ থেকে আলাদা মনে করতেন। কারণ, সে সময় ইসরায়েলের মূল সমাজ ও নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ জায়নবাদের প্রাধান্য ছিল।
ড্যানিয়েলা বলেন, তাঁর প্রথম স্মৃতি ১৯৪৮ সালের মে মাসে যখন মিসরীয় বাহিনী তেল আবিব এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছিল। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কয়েক দিন পর ওই ঘটনা ঘটেছিল।
এই নারী বলেন, ‘আমার মা–বাবা বিছানার নিচে কার্পেট বিছিয়ে আমাকে আর আমার ছোট বোনকে সেখানে শুয়ে থাকতে বলেছিলেন। এটা ছিল রোমাঞ্চকর, একটা অ্যাডভেঞ্চারের মতো। আমি কখনো ভয় পাইনি।’
ড্যানিয়েলার বাবার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর মা এক বছর বয়সে পোল্যান্ড থেকে ফিলিস্তিনে এসেছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর মা-বাবা ছিলেন ‘খুবই বুদ্ধিমান মানুষ’। তাঁরা প্রথমে জায়নবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী লেহির (স্টার্ন গ্যাং) সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর তাঁরা ডানপন্থী লিকুদ পার্টিতে যোগ দেন।
ড্যানিয়েলারা তিন বোন। তিনি বলেন, ‘আমরা যেন স্পার্টায় বড় হয়েছি।’
এখনো ড্যানিয়েলা ও তাঁর বোনেরা এই কথা বলে হাসেন। তিনি বলেন, ‘জীবন ছিল খুব কঠিন। আমরা এই বিশ্বাসে বড় হয়েছি যে আমাদের ঈশ্বরকে সব সময় ধন্যবাদ জানাতে হবে যে আমরা একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্রে বাস করছি। এটা ছিল আমাদের পরিবারের চিরাচরিত পরিবেশ।’
ড্যানিয়েলা বলেন, তাঁদের পরিবারে বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা এবং ইসরায়েল সম্পর্কে সচেতন থাকা ছিল বাধ্যতামূলক। সংবাদ শোনার সময় সেটাই ছিল পবিত্র সময়। তখন কেউ কথা বলতেন না।
বিশেষ করে উত্তেজনাপূর্ণ সময় এলে এই আবেগ আরও তীব্র হয়ে উঠত। যেমন ১৯৫৬ সালের সুয়েজ খাল সংকটের সময়, যখন ইসরায়েল, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য মিলে মিসরের নিয়ন্ত্রণে থাকা গাজা ও সিনাই উপদ্বীপে আক্রমণ করেছিল—তখনকার কথা তাঁর পরিষ্কার মনে আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি মুহূর্তে আইডিএফের (ইসরায়েলি বাহিনী) অগ্রগতি অনুসরণ করতাম।’
ড্যানিয়েলা বলেন, ‘আমার জন্য জায়নবাদের ইতিহাস একটা ব্যক্তিগত ডায়েরির মতো। আমি এটি এত তীব্রভাবে স্মরণ করি, যেন আমার কাছে এটি সব সময় খোলা বই।’
এই ব্যক্তিগত ডায়েরির সঙ্গে ড্যানিয়েলার বাইবেলের প্রতি ভালোবাসাও আছে। তাঁর দাবি, ইহুদি জাতির মাতৃভূমির সীমানা বাইবেলে নির্ধারিত। এর সীমানা পূর্বে ফোরাত নদী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে নীল নদ পর্যন্ত। অর্থাৎ তাঁর মতে, ফিলিস্তিনের বাইরেও সিরিয়া, ইরাক, জর্ডান, লেবানন ও মিসরের কিছু অংশ ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।