মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশ মঙ্গলবার (২৭ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র‍্যাইব্যুনাল থেকে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে।

এর আগে কোর্টের আপিল বিভাগের দেয়া খালাসের রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি। পরে সে আদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র‍্যাইব্যুনাল বরাবর পাঠানো হয়। সেখান থেকে এখন আদেশটি জেলখানায় পাঠানো হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনাল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তিন পাতার সংক্ষিপ্ত আদেশে অন্য কোনো মামলা বা আইনি কার্যক্রমের কারণে আটক রাখার প্রয়োজন না হলে, তাকে অবিলম্বে জেল হেফাজত থেকে মুক্তি দিতে বলা হয়।

সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়, পুঙ্খানুপুঙ্খ পুনর্মূল্যায়নের পর আপিল বিভাগ মনে করে যে, আপিলকারীর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণ ছিল ফৌজদারি আইনশাস্ত্রের মৌলিক নীতিগুলির প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা। যার ফলে ন্যায়বিচারের চরম ব্যর্থতা ঘটেছে। অধিকন্তু, এই (আপিল) বিভাগ আপিলকারীর সাথে সম্পর্কিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের সাথে সম্পর্কিত প্রমাণ সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে তার পূর্বের ব্যর্থতা স্বীকার করে।

সংক্ষিপ্ত আদেশে আরো বলা হয়, আপিল বিভাগ বিচারিক দায়িত্ববোধের গভীর অনুভূতির সাথে এটা স্বীকার করে যে, এই (আপিল) বিভগের পূর্ববর্তী রায়ে, আপিলকারীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের প্রমাণাদির ত্রুটি বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়। দুঃখজনকভাবে, পূর্ববর্তী রায়টি এত গুরুতর প্রকৃতির ফৌজদারি কার্যধারায় বাধ্যতামূলক যাচাই-বাছাই এবং ন্যায্যতার উচ্চ মান পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। আপিল বিভাগ দুঃখের সাথে স্বীকার করছে যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অন্তর্নিহিত প্রমাণগত দুর্বলতাগুলোরর প্রতি যথাযথ বিবেচনা করা হয়নি। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে, আপিলকারীর দোষী সাব্যস্ততা এবং সাজা বহাল রাখা সম্ভব নয়।’

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্নাঙ্গ আপিল বিভাগ বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল মঞ্জুর করে আন্তর্জাতিকঅপরাধ ট্র‍্যাইব্যুনালের রায় বাতিল করে মঙ্গলবার সকালে রায় ঘোষণা করেন। ফলে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পান এটিএম আজহারুল ইসলাম।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে কোনো আসামি আপিল বিভাগের রায়ে এই প্রথম খালাস পেলেন।

আদালতে এটিএম আজহারের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

প্রসিকিউসন পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।

আর রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আজহারুল ইসলামের রিভিউ মঞ্জুর করে আপিলের অনুমতি দেন (লিভ গ্রান্ট করে) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সে অনুযায়ী আপিল শুনানির পর গত ৮ মে রায়ের দিন ধার্য করেন সর্বোচ্চ আদালত।

মুক্তিযুদ্ধকালীল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের রায় রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আবেদন করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হওয়া মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ ছিলো। রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতেই রাষ্ট্রযন্ত্র ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে ওই বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে দাবি ছিল অনেকের। সে সময় বিচারপতির স্কাইপি কেলেংকারী, আসামিপক্ষের সাক্ষী গুমের ঘটনা বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উঠা প্রশ্নকে আরো প্রাসঙ্গিক করে তুলে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews