বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে সম্প্রতি আমার কোনো লেখা নেই। কেন নেই, এমন প্রশ্ন অনেকেই করেন। আমি তাদের বলি রাজনীতি কী আছে? তারা হেসে উড়িয়ে দেন কিংবা এড়িয়ে যান। আমি তো তাদেরই একজন।

আমিও উড়িয়ে দিয়ে কিংবা এড়িয়ে গিয়ে কিছুকাল ‘নির্বিকার’ বেঁচেবর্তে থাকতে চাই। 

তবে অনেক কিছু লিখতে না পারলেও কারা কী লিখছেন তা উঁকিঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করি। ভার্চুয়াল দুনিয়া সেই সুবিধাটি করে দিয়েছে। আর সে কারণেই গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ঢুঁ’ মারি দিনের কিছুটা সময়। মাঝে কেউ কেউ ‘নক’ করে বলেন, অমুক লেখাটা দেখুন, ওই প্রোফাইলে চোখ বোলান, দেখি এবং বুলাই। যেহেতু এই জানালা দিয়ে উঁকিঝুঁকি দেওয়াটা দোষের কিছু নয়, তাই প্রবল উৎসাহে কখনো কখনো জানালা বেয়ে অন্দরে ঢুকে পড়ি। ‘নক’ করা লেখাটা পড়ার চেষ্টা করি। ছোটবেলায় ভূপেন স্যার বলেছিলেন, ‘যতই পড়িবে ততই শিখিবে’। আমি শেখার চেষ্টা করি। 

আবার ‘নক’ হয়, পড়েছেন। পড়েছি। কিছু লিখছেন না কেন! আমি হেসে উত্তর এড়িয়ে যাই। নিজের অক্ষমতায় সান্তনা দিই, ‘কোনো ক্ষেত্রে উপেক্ষাই প্রতিরোধের সেরা অস্ত্র’ বলে। 

তাদের কী বলব! ‘কভার পিকচারে’ যারা নিজ বিশ্বাসের দেবীকে অধিষ্ঠা করে অন্যকে নিরপেক্ষ হবার উপদেশ দেন, তাদের নিয়ে লিখব। যারা নিজেদের নিরপেক্ষ ‘দাবি’ করে অন্যের বিশ্বাসের ধ্বজা উড়ান, অথচ নিজ বিশ্বাসের কথা জানান দেন ‘প্রকট’ ইঙ্গিতে, তাদের কথা লিখব।

লিখতে গেলেই তো ‘হেড়ে রে রে’ করে তেড়ে আসবে ‘কালার ব্লাইন্ড’ সুকুমার ষাঁড়। কে আর শখ করে, কোন সুখে ষাঁড়ের গুতো খেতে চায়। প্রাণের মায়া তো তেলাপোকারও আছে। 

তেলাপোকার কথা বলতেই মনে পড়ল, বিশাল ডায়নোসর বিলুপ্ত হলেও ক্ষুদ্র তেলাপোকা কিন্তু হাজার বছর ধরে টিকে আছে। তাজ্জব কী বাত! কী আশ্চর্য।

হয়তো আশ্চর্য হবার সময়ই এটা। যে সময়ে শিশু পুজা’কে বিভৎস ধর্ষণের শিকার হতে হয়। কী ভয়াবহ, কী বিভৎসতা। 

এর আগেও বলেছি খাদিজা, তনু, মিতুদের কথা। বলেছি, বিষয় বৈচিত্র্যে সব ভেসে যাবার কথা। হয়তো কয়দিন সামাজিক কিংবা গণমাধ্যমে পুজারও ‘অর্চনা’ হবে। তারপর ‘দশমী’। ‘পুজা’ বিষয়ের গতানুগতিক ‘বিসর্জন’। আবার নতুন কোনো ঘটনায় পুজাও হয়ে যাবে ‘অফটপিকের গল্প’।

মানুষ রক্ষার চেয়ে পশু রক্ষার যে আকুতি আজকাল চোখে পড়ছে, তাতে মনে হয় সত্যিই ‘মানুষ পশুও তো বটে’। হাতি, হনুমান এমন কী কাক রক্ষাতেও যে আহাজারি কিছু কিছু পশুপ্রেমীর দেখেছি তাতে এমনটা মনে হতেই পারে। হাতি, বিপন্ন হনুমান, কালো কাক রক্ষায় যেভাবে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে তাদের পথে প্রান্তরে দাঁড়াতে দেখেছি ‘পুজা’র ক্ষেত্রে এমনটা চোখে পড়েনি এবং ব্যতিক্রম বাদে অন্যদের ক্ষেত্রেও।

পুজা’র ব্যাপারে কোনো কোনো গণমাধ্যমের ভূমিকাতেও বিরক্ত হতে হয়েছে। এ সম্পর্কিত সংবাদের ফলোআপ প্রকাশের সুযোগে প্রতিবারই ধর্ষণের রগরগে বর্ণনা, ‘ব্লেডের ব্যবহার’ বিষয়ক কুৎসিত বাক্য বিন্যাস বড়ই অশোভন লেগেছে। নিজে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে লজ্জিত হতে হয়েছে। নিজের কাছেই নিজের মাথা নিচু করতে হয়েছে। মনে মনে বলতে হয়েছে ‘পুজা’ ক্ষমা কর মা।

এ বিষয়ে একজনের লেখা পড়লাম। সম্প্রতি আলোচিত, সমালোচিত ‘সুশান্ত পাল’ ধরনের লেখা। লেখক একজন মহিলা এবং হয়তো ‘মা’ও। কিন্তু তার লেখা পড়তে গিয়ে শিউরে উঠেছি। ভয়াবহ সেই ঘটনা বিষয়ে লিখতে গিয়ে ‘অশোভন ফলোআপে’র চেয়েও আরো পরিপূর্ণভাবে ঘটনার রগরগে বর্ণনা দিয়েছেন। পুজা’কে উপলক্ষ্য করে নিজ বিরুদ্ধ রাজনৈতিক মতের লোকজনকে একচোট ধুয়ে নিয়েছেন। পুজা’কে উপলক্ষ্য করে নিজ ধর্ম বিশ্বাসের বিপরীত মানুষকেও ধুয়ে দিয়েছেন। তার লেখার মধ্যে যে হিংস্রতা ছিল তা যেন সেই বিভৎস ধর্ষক মানসিকতারই প্রতিফলন। পারলে তিনি ‘পুজা’র উছিলায় নিজ ধর্ম-দর্শনের বিরুদ্ধবাদীদের ধোয়ার পর মুছে দিতে পারলেই যেন সুখী হতেন।

আশ্চর্য ‘সুকুমার’ হিংস্রতা! মূলত এই হিংস্রতাকে ভয় বলেই লেখা হয়ে উঠে না। হিংস্রতাকে হিংস্রতা দিয়ে অতিক্রম করার মন্ত্র জানা নেই বলেই সব কিছু লেখা হয়ে উঠে না। 

আমি নির্যাতিতা, বিপন্ন শিশুটি নাম এই লেখায় ব্যবহার করেছি। কিন্তু এটাও ‘এথিকিলি’ একদম অনুচিত। এটা অন্যায়। আমার অগ্রগামীরা তাদের লেখায় শিশুটির নাম ব্যবহার করেছেন। খবরেও এসেছে শিশুটির নাম। সেই কারণেই বাধ্য হয়েই নাম ব্যবহার করতে হয়েছে। তা না হলে ঘটনার ভিড়ে পরিচিতি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যেত।

নিউজ ফলোআপে এসেছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় কীভাবে মানুষ দেখলে আঁতকে উঠছে সেই শিশুটি। সাথে বর্ণনা করা হচ্ছে আঁতকে উঠার কারণ সমূহ। বিভৎস সেই কর্মকাণ্ডর কুৎসিত বর্ণনায় বারবার রক্তাক্ত করা হচ্ছে অবুঝ শিশুটিকে। 

অথচ যে পশুটি এমন বিভৎসতার জন্য দায়ী, তার কী হলো, তার বিচার ও শাস্তির প্রাপ্যতা ও ন্যায্যতা সম্পর্কে তেমন কোনো ‘ফলোআপ’ নেই। নেই এমন বিভৎসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা ও জনমত গঠনের প্রয়াসও। সব হারিয়ে গেছে কথিত ঘটনার অসভ্য ও অশোভন বর্ণনার আতিশয্যে।

যেমন হারিয়ে গেছে মিতুর হত্যাকারী। তনুর হত্যাকারী ‘ভালুক!’ও অফসিনে। নেই আফসানা’র মৃত্যুর জন্য দায়ীদের ‘পরছায়া’। বদরুলের কী হলো তাও প্রায় অপসৃয়মান। তাজ্জব কী বাত! কী আশ্চর্য!

বিভৎস ঘটনার বারবার ‘বিভৎস’ বর্ণনাও এক ধরনের মনোবিকার। এক ধরনের মানসিক ‘অসভ্য’ সুখপ্রাপ্তির ‘অসুস্থ’ আকাঙ্খাই এর কারণ, চিকিৎসাশাস্ত্রও তাই বলে। 

‘মা’ আবারও বলি অবক্ষয়িত সমাজের ‘অসুস্থ’ প্রবণতার বিরুদ্ধে আমাদের এই অসহায় ‘নির্বিকারত্ব’কে ক্ষমা কর তুই; ক্ষমা কর ক্ষমার অযোগ্য এই অক্ষম আমাদের।

কাকন রেজা: সাংবাদিক।

[প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রিয়.কম লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে প্রিয়.কম-এর সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে।]



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews