নিম্নচাপের প্রভাবে দেশে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তার প্রভাব কাঁচা বাজারেও কিছুটা পড়েছে; সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দাম কিছুটা বাড়লেও সব ধরনের সবজির সরবরাহ মোটামুটি পর্যাপ্তই আছে।
সাততলা বাজারের সবজি বিক্রেতা আরমান হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গেল দুই-তিন দিন ধরেই তো বৃষ্টি। এর মধ্যে গতকাল কোনো মালই ঢোকেনি। এজন্য কিছু সবজির দাম সামান্য বেড়েছে। তবে অধিকাংশ সবজিই পাওয়া যাচ্ছে আগের দামে।”
এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে বেগুন, করলা ও ঢেঁড়স গেল সপ্তাহে ৪০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হলেও শুক্রবার ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এছাড়া বরবটি আগের মতই ৬০ টাকা, পটল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, ধুন্দল ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৪০ টাকা, কচুর মুখি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, সজনে ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও ঝিঙা আগের মতই ৬০ টাকা কেজি দরে মিলছে।
এছাড়া কাঁচা আম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ক্যাপসিকাম ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা ও পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে শীতকালীন সবজির মধ্যে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে একেকটি ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং লাউ ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া টমেটোর কেজি আগের মতোই ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা ও প্রতিকেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে।
বাজারে কাঁচা কলার হালি আগের মতোই ৪০ টাকা, একেকটি চাল কুমড়া ৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে।
সাততলা বাজারের আরেক বিক্রেতা ইউসুফ খন্দকার বলেন, “বৃষ্টি হওয়ায় কিছু সবজির দাম বেড়েছে। তবে পাইকারি বাজারে আরেকটু কম দামে পাবেন। এখানে তো আমরা নিয়ে আসি। কাল-পরশু কোনো মাল আনা যায়নি।”
এই বাজারে এক হালি লেবু প্রকারভেদে মিলছে ১০ থেকে ২০ টাকায়। ধনেপাতার কেজি আগের মতোই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
আর লাল শাক আগের মতোই ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, পালং শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ডাটা শাক ১০ টাকা, নাপা শাক ২০ টাকা ও ঢেঁকি শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়।
তবু ক্রেতাদের স্বস্তি
সবজির দাম কিছুটা বাড়লেও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
সাততলা বাজারে সবজি কিনছিলেন নাজমা আক্তার। তিনি তেঁজগাও এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।
তিনি বলেন, “গরমের সবজি শুরুর দিকে আরও বেশি দাম ছিল। এখন মোটের ওপর দামটা নাগালেই আছে।”
ঝিঙা আর আলু কিনছিলেন জুয়েল হোসেন নামের আরেক ক্রেতা। তিনি বলেন, “আলুর দাম কয়েক বছরের তুলনায় কম আছে এখনও। শাক-সবজিও যে খুব চড়া, তা না। এরকম থাকলেও মানুষ অন্তত খেতে পারে।”
এই বাজারের আরেক ক্রেতা আবদুর রহিম বলেন, “শাক-সবজির দাম আর না বাড়লেই হয়। এখন অন্তত কিছু না কিছু কেনা যায়।”
ব্রয়লারের দাম কমল
কোরবানি ঈদের আগে আগে রাজধানীর বাজারগুলোয় মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগির।
গেল সপ্তাহে ১৭০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগি শুক্রবার বিক্রি হচ্ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে।
এছাড়া সোনালি ‘কক’ মুরগির কেজি ছিল ২৫০ টাকা, সোনালি ‘হাইব্রিড' ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।
লাল লেয়ার মুরগি আগের মত ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাত তলা কাঁচাবাজারের মুরগি বিক্রেতা খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোরবানি ঈদের আগে মুরগির দাম কমে যায়। ব্রয়লারের দাম কমে গেছে।
“মুরগির দাম কয়েক দিন কম থাকবে। মানুষ তো এই সময়ে সাধারণত গরুর মাংস নিয়ে ব্যস্ত থাকে।"
বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, গরুর ভুঁড়ি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, হাঁসের ডিমের ডজন ২২০ টাকা ও দেশি মুরগির হালি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়।
আলু-পেঁয়াজে নড়চড় নেই
কয়েক মাস ধরেই বাজারে আলুর দাম নাগালের মধ্যে রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্তত এক মাসের বেশি সময় ধরে পেঁয়াজের বাজারও স্থিতিশীল। শুক্রবার ঘুরেও একই দৃশ্য দেখা গেল।
বাজারে আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পরিমাণে বেশি নিলে কোথাও মিলছে ২০ টাকা কেজিতে।
আর বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, মানভেদে দেশি রসুন ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ভারতীয় রসুন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, ভারতীয় মশুর ডাল (মোটা দানা) ১২০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা ও খেসারির ডাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।