নাশতায় কেউ কলা-রুটি খাচ্ছেন। কেউ খাচ্ছেন ফুটপাত থেকে ভাত-তরকারি কিনে। কোনো ক্রীড়াবিদকে দেখা যাচ্ছে, কলা নিয়ে যাচ্ছেন। এমন দৃশ্য অহরহ চোখে পড়ে মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের আশপাশে। এসব খাবার খেয়ে কীভাবে একজন ক্রীড়াবিদ আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে পদক আনবেন।

অক্টোবরে বাহরাইনে এশিয়ান ইয়ুথ গেমস, নভেম্বরে সৌদি আরবে ইসলামিক সলিডারিটি গেমস এবং জানুয়ারিতে পাকিস্তানে এসএ গেমস। এই তিন গেমসকে সামনে রেখে অনুশীলন চলছে। অভিযোগ রয়েছে, অনুশীলন ক্যাম্পে ক্রীড়াবিদদের জন্য পুষ্টি-নীতি মানা হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ স্বল্প বাজেট। জানা গেছে, গেমসের অনুশীলনে একজন ক্রীড়াবিদকে প্রতিদিন সাড়ে সাতশ টাকা দেওয়া হচ্ছে খাবারের জন্য। আর সাড়ে তিনশ টাকা বিভিন্ন ভাতা। এর মধ্যে খাবারের সাড়ে সাতশ টাকা থেকে ভ্যাট বাবদ ১৫ শতাংশ এবং উৎসে কর ৫ শতাংশ (১২৭ টাকা) কেটে নেওয়া হয়। বাকি থাকে ৬২৩ টাকা। একজন ক্রীড়াবিদ এই টাকায় কীভাবে পুষ্টিকর খাবার খাবেন, এ প্রশ্ন তোলাই যায়। একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে তিন কোটি টাকা বাকি পড়েছে বলে ক্রীড়াপল্লীর গ্যাস লাইন কেটে দিয়েছে তিতাস। ফলে অনেক ক্রীড়া ফেডারেশনই এলপিজি সিলিন্ডার কিনে এবং বাবুর্চি রেখে রান্না করে খাওয়াচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে গুয়াহাটি এসএ গেমসের আগে অনুশীলন ক্যাম্পে থাকা ক্রীড়াবিদদের খাবারের জন্য সাড়ে সাতশ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ১০ বছর পর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে একই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ কতটা যৌক্তক। এই টাকার খাবার খেয়ে কতটুকু পুষ্টি পাবেন একজন ক্রীড়াবিদ? উশু ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দিলদার হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভায় বলেছি, এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না ক্রীড়াবিদরা। তাহলে গেমস থেকে আমরা কীভাবে সম্মানজনক ফল প্রত্যাশা করতে পারি? এটা সম্ভব নয়।’

তিনটি গেমসেই অংশ নেবে কুস্তি। প্রায় ৫৭ জন কুস্তিগীর রয়েছেন ক্যাম্পে। অন্যদের চেয়ে একজন কুস্তিগীরের খাবারের ফর্দ একটু লম্বা। কুস্তি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ যে ফর্দ দিলেন তাতে দেখা যায়, প্রতিদিন একজন কুস্তিগীরের পেছনে খরচ হয় নিদেনপক্ষে ১২০০ টাকা। তার কথায়, ‘ক্রীড়া পরিষদ যা দিচ্ছে তাতে একজন কুস্তিগীরের খাবারে তেমন কিছুই হয় না। এ খরচ বাদেও ক্রীড়াপল্লীতে গ্যাস না থাকায় প্রতিমাসে ৩২ হাজার টাকার সিলিন্ডার এবং ৩৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে বাবুর্চির পেছনে। ক্রীড়াবিদদের সুবিধার্থে আমরা নিজেরা রান্না করে খাওয়াচ্ছি। এছাড়া উপায় কী।’

আরও ভয়াবহ তথ্য সাইক্লিংয়ে। ক্রীড়াপল্লী-১ এ থাকেন এবং ২ এ গিয়ে খাবার খান যুব গেমসের ক্যাম্পে থাকা ছয়জন সাইক্লিস্ট। অথচ তারা অনুশীলন করেন ৩০০ ফিটে গিয়ে। প্রতিদিন মিরপুর থেকে সাইকেল চালিয়ে ৩০০ ফিটে গিয়ে অনুশীলন করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফের সাইকেলে ক্রীড়াপল্লীতে ফেরেন। এ কষ্টের কথা জানালেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ‘সাইক্লিস্টদের এই কষ্ট আমরা সহ্য করতে পারছি না। একটা গাড়ির ব্যবস্থা করলে হয়তো সাইকেল নিয়ে তারা ৩০০ ফিটে যেতে-আসতে পারত। সকালে যখন যায়, তখন রাস্তা কিছুটা ফাঁকা থাকে। কিন্তু ভয় হয় আসার পথে। ওই সময় ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফেরে। আবার রাস্তায় জ্যামও থাকে। কখন কী ঘটে বলা যায় না।’ খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই অর্থে সাইক্লিস্টদের মানসম্মত খাবার দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এক মাস হয়ে গেছে, আমরা এখনো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে কোনো অর্থ পাইনি। নিজেদের পকেট থেকে সাইক্লিস্টদের খাওয়াচ্ছি। ক্রীড়া পরিষদ যা নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার বাইরে যেতে পারছি না ফেডারেশনের ফান্ডে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায়।’

এ বিষয়ে নিজেদের অক্ষমতার কথা জানালেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া) মোহাম্মদ আমিনুল এহসান, ‘আমরা উপলব্ধি করতে পারছি, এ পরিমাণ টাকায় তেমন কিছু হয় না ক্রীড়াবিদদের। তবে নিজেরা রান্না করে খেলে এতে হয়ে যাওয়ার কথা।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা এত কম অর্থও দিই না, যে, রুটি-কলা কিনে খেতে হবে। তারা হয়তো অর্থ বাঁচানোর জন্য এমনটা করে থাকতে পারে।’ ক্রীড়া পরিষদের এই পরিচালক (ক্রীড়া) যোগ করেন, ‘আমরা ক্রীড়াবিদদের এ অভিযোগ শুনেছি। দেখা যাক কী হয়।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews