জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশে তার একটি কার্যালয় স্থাপনের পাঁয়তারা করছে বেশ কিছুদিন ধরে। বাংলাদেশে কার্যালয় স্থাপনের এত আগ্রহ তার কেন, সঙ্গতকারণেই এমন প্রশ্ন উঠতে পারে। তাহলে কি বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা খুব বেশি করে ঘটছে? তা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করার জন্য মানবাধিকার কমিশনের এখানে কার্যালয় খোলা কি জরুরি ও অত্যাবশ্যক হয়ে দেখা দিয়েছে? ঘৃণ্যতম স্বৈরাচারের পতন ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যে কোনো বিবেচনায় মানবাধিকার অনেক বেশি সংহত ও নিরাপদ। এমতাবস্থায়, এখানে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের কোনো প্রয়োজন আছে বলে যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এ প্রশ্নও ওঠে, বিশ্বের যেসব দেশে মানবাধিকারের লংঘন ব্যাপকভাবে বা হরহামেশা ঘটছে ওইসব দেশে কি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন কার্যালয় খোলার তাকিদ বা গরজ অনুভব করেছে কিংবা ওই সব দেশে কি মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় আছে? মাত্র গুটি কয়েক দেশে মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় আছে বলে জানা যায়। অথচ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা বর্তমানে ১৯৩। সেসব দেশে কার্যালয় আছে যেসব দেশ চরম অস্থিতিশীল অথবা যুদ্ধবিধ্বস্ত। বাংলাদেশ না অস্থিতিশীল, না যুদ্ধবিধ্বস্ত। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটে ভারতে। সংখ্যালঘু নির্যাতন, বর্ণবাদী নৃংসতা ভারতে যত বেশি তত বিশ্বের আর কোনো দেশে নেই। সেখানে কি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন কোনো কার্যালয় স্থাপন করেছে? মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, হত্যা-বিতাড়ন বছরের পর বছরে ধরে চলছে। সেখানেও তো জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কোনো কার্যালয় নেই। পতিত স্বৈরাচারের বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর অপরিসীম জুলুম-নির্যাতন, গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যাকা- ইত্যাদি সংঘটিত হয়েছে। একের পর নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। চলাফেরা, মত প্রকাশ, সমাবেশ, প্রতিবাদ ইত্যাদিও করতে পারেনি। ওই সময় কিন্তু জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন এখানে কার্যালয় স্থাপনের কথা একবারও উচ্চারণ করেনি। এখন কার্যালয় স্থাপন করতে চাওয়ার পেছনে তার বিশেষ কোনো মতলব থাকতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।

প্রথম যখন কার্যালয় স্থাপন করার কথা হয়, তখন এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। ওই প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। ফের তা সামনে আনা হয়েছে। মাঝখানে মিয়ানমারে মানবিক করিডোর দিতে সরকারের সম্মতি বা অনাগ্রহের কথা জানানো হয়, যা তীব্র প্রতিবাদের মুখে আপাতত বানচাল হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। নতুন করে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের প্রসঙ্গ সামনে আসায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে গভীর উদ্বেগ ও আশংকা প্রকাশ করছি। অতীতে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবাধিকারের নামে ইসলামী শরীয়াহ, পারিবারিক আইন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা করেছে। এসব হস্তক্ষেপ একদিকে যেমন জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত অন্যদিকে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিরও পরিপন্থী। আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীরর সাফকথা : তাই, বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেয়া হবে না। বলাবাহুল্য, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা মানবাধিকারের নামে ইসলামের নির্দেশনা, পারিবারিক, সামাজিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ, ইসলামী কৃষ্টি-সংস্কৃতি ইত্যাদির বিরোধিতা করে থাকে। ইসলামে বিবাহ, নারী-পুরুষ সম্পর্ক, সম্পদ-সম্পত্তির অধিকার প্রভৃতি বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা ও নীতি রয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এসবের বিরোধিতা করে। তারা সমকামিতা, অবাধ যৌনাচার ও যথেচ্চারকে সমর্থন করে এবং এগুলোকে মানবাধিকার বলে মনে করে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় এখানে স্থাপিত হলে ইসলামের নীতি-আদর্শ, মূল্যবোধ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিরোধিতার সম্মুখীন হবে। সমকামিতা, অবাধ যৌনাচার ইত্যাদি জোরালো সমর্থিত হবে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক হিসেবে যাকে মনোনীত করা হয়েছে, সেই রিচার্ড এস হাওয়ার্ড একজন সমকামী। তিনি এখন পাপুয়া নিউগিনির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তার সমকামী পার্টনারকে নিয়ে বাংলাদেশে আসতে চান বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম প্রধান দেশে একজন সমকামী জাতিসংঘের কূটনীতিক হতে পারেন কীভাবে? কীভাবে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস তাকে মনোনীত করতে পারেন? ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশকে এভাবে অবজ্ঞা ও অবমূল্যায়ন করার বিরল নজির এটি। আমাদের স্পষ্ট কথা: কোনো সমকামীকে নিয়োগ দেয়া যাবে না এবং সরকারের পক্ষে তাকে গ্রহণ করা মোটেই সমীচীন হবে না।

জাতিসংঘ এবং তার মানবাধিকার কমিশন দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। যুদ্ধমুক্ত শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করাই ছিল জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য। পরিতাপের বিষয়, এই লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘ মোটেই সফলতার পরিচয় দিতে পারেনি। যুদ্ধ কখনোই বন্ধ হয়নি। বরং যুদ্ধের সংখ্যা বেড়েছে। এখনো গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। কিছুদিন আগে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ হয়েছে। ইরানে ইসরাইলের বর্বর হামলা এবং তার জবাবে ইরানের শক্ত জবাবদানের ঘটনা ঘটেছে কদিন আগে। পূর্বোবর্ণিত পাক-ভারত ও ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের কোনো ভূমিকা নেই। এখানে ভূমিকা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ, এমনকি যুদ্ধবিরতি করতেও পারছে না জাতিসংঘ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান, রোহিঙ্গা সংকটের সুরাহাÑ কোনোটারই মীমাংসা করতে পারছে না। আফগানিস্তানে, ইরাকে, সিরিয়ায় ও লিবিয়ায় পশ্চিমা আগ্রাসন, যুদ্ধ ও ধ্বংস রুখতে পারেনি জাতিসংঘ। এসব দেশে ব্যাপকভাবে মানবাধিকারের লংঘন ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে। জাতিসংঘ তা ঠেকাতে পারেনি। জাতিসংঘ কার্যত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের ক্রীড়নক বা হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এর মানবাধিকার কমিশনও সমানভাবে ব্যর্থ। পশ্চিমাদের মানবাধিকার নীতি ফেরি করাই জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কাজে পরিণত হয়েছে। কাজেই, বাংলাদেশে এ ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ ও মতলবী কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের কোনো প্রশ্নই উঠে না। দুঃখজনক, ‘এনজিও সরকার’ হিসাবে পরিচিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিলক্ষ্য নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ আছে। তার গঠিত নারী বিষয়ক কমিশনের প্রস্তাবাবলীর অধিকাংশই ইসলামী নীতি-বিধানের পরিপন্থী হিসাবে সাব্যস্থ হয়েছে। সুতরাং, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলÑ বিশেষ করে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। একইভাবে জাতীয় স্বার্থপরিপন্থী হিসেবে পরিগণিত জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের প্রয়াস-প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিতে হবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews