গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন চারপাশ হাঁসফাঁস, তখন রামগড়ের পাহাড়ি বাগানগুলো যেন উৎসবে মেতে উঠেছে। লিচু, আম, কাঁঠাল, আনারস, চালতা আর কামরাঙ্গার রঙিন বাহারে মুখর হাটবাজার। চারদিকে ফলের মিষ্টি গন্ধ।
তবে এই রঙিন উৎসবের আড়ালে চাপা কষ্টের গল্পও আছে। ভাঙাচোরা পাহাড়ি রাস্তা আর দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বাম্পার ফলনেও হাসছেন না কৃষকেরা। সময়মতো বাজারে ফল পৌঁছানো যাচ্ছে না। অনেক ফল পঁচে যাচ্ছে পথেই। যে লাভের আশায় খেটে গেছেন, তার বড় অংশই যেন হারিয়ে যাচ্ছে গাড়ির ঝাঁকুনিতে আর দালালের দৌরাত্ম্যে।
জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলের গণ্ডি পেরিয়ে এসব বাহারি ফল বাজারজাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও। শুধু হাট-বাজারে নয়, অনলাইনও ব্যবসা জমে উঠেছে।
ফল কিনতে আসা রামগড় সদর এলাকার আমেনা বেগম বলেন, ‘এই সময়টা সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। পাহাড়ি লিচু আর কাঁঠালের মতো স্বাদ আর কোথাও পাই না।’
সরেজমিনে রামগড় বাজারে দেখা গেছে, বাজারের প্রতিটি কোণেই রসালো ফলের স্তূপ। লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি শত ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। আম ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আনারস জোড়া প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। মাঝারি কাঁঠাল ৮০ টাকা এবং বড় আকারের ১৫০ টাকা। দেশী জাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। চালতা, কামরাঙ্গা, তেঁতুলের সরবরাহ তুলনামূলক কম হলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
কুমিল্লা থেকে আসা পাইকার কবির আহমেদ জানান, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লায় পাহাড়ি ফলের ব্যাপক চাহিদা। প্রতি বছর এখান থেকে কিনে নিয়ে যাই। কিন্তু রাস্তা এত ভাঙা যে, গাড়িতে তুলতে গেলে মনে হয় ফল পঁচে যাবে। খরচও অনেক বেড়ে যায়।
দোকানি মনির হোসেন বলেন, এবার ফলের ফলন ভালো হয়েছে। কাঁঠাল আর আনারস বেশি আসছে। লিচুর ফলন কম। তাই দাম ও বেশি। তবে চালতা আর কামরাঙ্গা আগের মতো হয় না। কিছু কিছু বাড়িতে ঘরোয়া পরিবেশে চাষ করে।
এ বিষয়ে রামগড় উপজেলা উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো শরিফ উল্ল্যার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার ফলের ফলন মোটামুটি ভালো। আম এবং কাঁঠালের বাম্পার ফলন হলেও লিচুর ফলন কম। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় কৃষকরা ঠিকমতো বাজারজাত করতে পারছেন না। এর ফলে কিছু ক্ষতি হচ্ছে।