টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অনেক রেকর্ডের মালিক ক্রিস গেইল। সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি, সবচেয়ে বেশি ছক্কা, সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস, আরও কত রেকর্ড তার সঙ্গী। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন আইপিএলে। ২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত কলকাতা নাইট রাইডার্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের (পরে হয় পাঞ্জাব কিংস) প্রতিনিধিত্ব করে ভারতের এই লিগে সব মিলিয়ে ১৪২ ম্যাচে তার রান ৪ হাজার ৯৬৫।
২০২১ সালে পাঞ্জাবের হয়ে তার সবশেষ আইপিএল আসর ভালো কাটেনি। আসরের মাঝপথে তিনি টুর্নামেন্ট ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কারণ হিসেবে ওই সময়, আইপিএলের জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকার ক্লান্তির কথা বলেছিলেন গেইল। তবে সেটি যে মূল কারণ ছিল না, গতপরশু শুভঙ্কার মিশ্র পডকাস্ট-এ তুলে ধরেন ইউনিভার্স বস, ‘পাঞ্জাবের সঙ্গে আমার আইপিএল ক্যারিয়ার আসলে সময়ের আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। সত্যি বলতে, কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবে আমাকে অসম্মান করা হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল যে, লিগের জন্য এত কিছু করা ও ফ্র্যাঞ্চাইজির মান বাড়ানো একজন সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে আমার সঙ্গে সঠিক আচরণ করা হয়নি। পরিবর্তে তারা আমাকে শিশুর মতো দেখেছিল। জীবনে প্রথমবারের মতো মনে হয়েছিল যে, আমি হতাশায় ডুবে যাচ্ছি। মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য অর্থের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আনিলকে (কুম্বলে, পাঞ্জাবের তখনকার প্রধান কোচ) ফোন করে বলেছিলাম যে, আমি চলে যাচ্ছি। সেই সময় আমাদের বিশ্বকাপ কাছাকাছি ছিল এবং জৈব সুরক্ষা বলয় আটকে ছিলাম, যা আমাকে মানসিকভাবে শেষ করে দিচ্ছিল। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে আমার শেষ ম্যাচের পর ভাবলাম, সবকিছু অর্থহীন। এখানে থাকলে আমি নিজের আরও ক্ষতি করব।’
২০২১ সালের আইপিএল ভারতে শুরু হওয়ার পর মাঝপথে স্থগিত করা হয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়। কয়েক মাস পর আসর আবার শুরু হয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আবু ধাবিতে গেইল তার শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে। সেবার ১০ ম্যাচ খেলে গেইল করতে পেরেছিলেন কেবল ১৯৩ রান। ছিল না কোনো ফিফটি। ওই সময়ে মানসিকভাবে তিনি কতটা ভেঙে পড়েছিলেন, আবার বললেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির প্রথম সেঞ্চুরিয়ান গেইল, ‘আনিলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমি ভেঙে পড়েছিলাম, কারণ আমি সত্যিই কষ্ট পেয়েছিলাম। ফ্র্যাঞ্চাইজি যেভাবে চলছিল, তা দেখে এবং তার প্রতি আমি হতাশ হয়েছিলাম। অধিনায়ক কেএল রাহুল এমনকি আমাকে ফোন করে বলেছিল, “ক্রিস, থাকো, তুমি পরের ম্যাচ খেলবে”। কিন্তু আমি শুধু বলেছিলাম, “তোমার জন্য শুভকামনা”, এবং ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ি।’
গেইল চলে যাওয়ার পর নিজেদের শেষ তিনটি ম্যাচ খেলেছিল পাঞ্জাব। আট দলের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে থেকে আসর শেষ করেছিল তারা। এই বছরের ফাইনালে পাঞ্জাবকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আইপিএল জয়ের স্বাদ পায় বেঙ্গালুরু। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি তাদের পুরনো নায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স ও গেইলকে ফাইনালের অন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। ভিরাট কোহলিদের শিরোপা উদযাপনের সঙ্গী ছিলেন তারাও। চলতি মাসে ৪৬ বছর পূর্ণ করবেন গেইল। আবার আইপিএলে ফিরবেন তিনি?, ‘আমার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। আমাকে পাওয়া যাবে। যদি আমাকে চায়, আমি আসব। তবে হ্যাঁ, আমার ক্ষোভ আছে।’